নিয়তির খেলা (গল্প)
যদিও আমি সকল বিষয় লিখার চেষ্টা করি । তাই এবার আমি একটা গল্প লিখার সাহস করলাম ।জানি না আপনাদের কে কতোটা মোহিত করতে পারবো । তারপরও আমার চেষ্টা থাকবে পাঠককে আনন্দ দেওয়ার জন্য ।
“কারণ কোনো এক সাহিত্যিক বলেছেন ,সাহিত্য মানেই আনন্দ দান । এর কোনো আর উদ্দেশ্য থাকতে পারে না । ”
জীবন কোথায় গিয়ে দাড়াবে এটা কেউ কখনো ও বলতে পারে না । একে আমরা নিয়তির খেলা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারিনা । এরকম একটা কাহিনী আজ আমি আপনাদের কে শোনাবো –
আজকে চার মাসের এক অন্তঃসত্ত্বাকে বিয়ে করলাম যদিও সে সন্তানের পিতা আমি না।কিন্তু নিয়তির এই খেলায় বিয়েটা আমাকে করতেই হল।বিয়ের আগে যখন মেয়েটার সাথে আমার কথা হয়েছিল তখন প্রথমেই মেয়েটা আমাকে প্রশ্ন করেছিল,,,,
আমি অন্তঃসত্ত্বা এটা জানার পরেও আপনি আমাকে বিয়ে করতে কেন রাজী হলেন ?
– টাকার জন্য রাজী হয়েছি।আপনার বাবার সাথে আমার কথা হয়েছে।আর ওনি আমাকে বলেছেন আমি যদি আপনাকে বিয়ে করি তাহলে ওনি ওনার সম্পত্তির অধের্ক অংশ আমার নামে লিখে দিবেন।তাই এই বিয়েটা করতে আমি রাজী হয়েছি।
সামান্য টাকার জন্য আপনি আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে গেলেন,,,সত্যিই যে পুরুষ মানুষরা স্বার্থপর হয় আপনাকে দেখে আবার সেটা বুঝতে পারলাম।
– আচ্ছা এখন যদি এই একই প্রশ্ন আমি আপনাকে করি তাহলে…
আমি শুধু আমার সন্তানের একটা পরিচয়ের জন্য এই বিয়েটাতে রাজী হয়েছি।আমার সন্তানের জন্মের পর কেউ যেন তার বাবার পরিচয় জানতে না চায় এটা ভেবেই আপনার সাথে বিয়েটা করে নিচ্ছি।
– টাকার জন্য আপনাকে বিয়ে করতে রাজী হওয়ায় আমি আপনার কাছে স্বার্থপর হয়ে গেলাম।আর আপনি অন্তঃসত্ত্বা হয়েও আমাকে বিয়ে করতেছেন আপনার সন্তানের পরিচয়ের জন্য তো আপনি কি স্বার্থপর নন।
মেয়েটা আর আমার কথার কোন উত্তর দিল না।
কিছু সময় নিরব থেকে আবার বলল,,,
আমার এই অবস্থা কি করে হল এটা জানবেন না ?
– এখন জানতে ইচ্ছে করছে না।যদি কখনো জানতে ইচ্ছে হয় তখন না হয় আপনার থেকে জেনে নিব।
ওপাশে শুয়ে আছে আমার নতুন বউ।আজকেই প্রথম ওর নামটা জানতে পারলাম।ওর নাম নিনিতা
দূরত্ব আর অসহায়ত্ব জিনিসটা কি সেটা আজকে ঠিক অনুধাবন করতে পারলাম।চোখ দিয়ে না চাইতেও কেন জানি জল গড়িয়ে পড়ছে,হয়তো অতীত গুলো আজ খুব মনে পড়ছে।
বয়স তখন উনিশ কি বিশ, রিনা নামের একটা মেয়ের প্রেমে পড়লাম ভদ্র ছেলের মতো অপেক্ষা করতে থাকলাম, কখনও তাকে ভালো করে দেখিনি, এভাবে তিনটা বছর পার হয়ে
গেলো…
সব ঠিক ঠাক যাচ্ছিলো, জানতাম পড়া শেষ করে যে কোন একটা চাকুরী পেলে সে মেয়েকে হয়তো পাবো, কারণ ছেলে হিসাবে আমার একটা ভালো সুনাম আছে।
কিন্তু একদিন আমি টাকার কাছে হেরে গেলাম, যে মেয়ে পড়া শেষ না করে বিয়ে করবে না বলেছিল, সে মেয়ে হুট করেই রাতের অন্ধকারে বিয়ে করে নিলো, আমার কাছে সব কিছু কেমন জানি স্বপ্ন মনে হলো, পরে বূঝলাম এটা স্বপ্ন না এটাই বাস্তবতা।
সেদিন আমি বুঝলাম টাকার ক্ষমতা কতখানি।ছেলে নাকি মাসে ষাট হাজার টাকা বেতন পায়, আর মধ্যবিত্ত ঘরে ষাট হাজার টাকা বেতন লটারির টিকিটের মতো, তাই রিনার বাবাও আর দ্বিতীয় বার ভাবলো না,যেখানে টাকা আছে সেখানে সুখ আছে, তাই রিনাও রাতের অন্ধকারে এভাবে বিয়ে করে নিলো।
আমি সেদিন একটা জিনিস শিখলাম, আপনার কাছে যদি টাকা থাকে তবে সব আছে, সেই টাকাই আপনাকে দিবে ভালো মানুষের সার্টিফিকেট,সেই টাকাই দিবে সুখ, আর সত্যিই তো মেয়েটাকে আমার সাথে বিয়ে দিলে হয়তো সারাজীবন বাসের ধাক্কা খেয়ে খেয়ে জীবন পার করতে হতো।
আর এখন হয়তো ওর স্বামী ওর জন্য গাড়ী কিনবে, আমার সাথে থাকলে তাকে সারা জীবন ভাড়া বাড়ীতে থাকতে হতো, দুই ঈদের মধ্যে ভাগ করে নিতে হতো,কোন টা নিজের জন্য আর কোন টা পরিবারের জন্য, কিন্তু এখন সেটা করতে হবে না,সত্যিই তো টাকাই সব।
সেদিন থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমিও টাকাকে বিয়ে করবো, হোক সে মেয়ে কালো, বা অন্ধ বা ডিভোর্সি।বড়লোকের মেয়ে হলেই হবে।
দুই বছর আগে, আমি এই কোম্পানিতে জয়েন্ট করি।আমি যে কোন দিন নিনিতাকে(কোম্পানির মালিকের মেয়ে) বিয়ে করবো সেটা আমি স্বপ্নেও কখনো ভাবি নি, কারণ স্বপ্নেরও কিছু সীমানা থাকা উচিৎ।
কিন্তু কয়েকদিন আগে হটাৎ স্যার(নিনিতার বাবা) এসে ওনার মেয়ের সম্পর্কে সবকিছু আমাকে বলল।তারপর বলল এ বিয়ে তোমাকে করতেই হবে, না হলে আমার মান সম্মান কিছুই থাকবে না।
প্রয়োজনে উনি কোম্পানির ৫০% সহ ওনার সম্পত্তির অধের্ক আমার নামে লিখে দিবে।
মনে মনে ভাবলাম এই সুযোগ হয়তো হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না,আর নিনিতা দেখতেও অনেক সুন্দরী। আর বাচ্চা ওটা ব্যাপার না নিজের বলে চালিয়ে দিবো।
ব্যাস হয়ে গেলো বিয়ে কি অদ্ভুত ব্যাপার! কাবিন-নামা তে তারিখ এক বছর আগের। সাক্ষী কাজী সাহেব সবাই খুশী, আমার স্যার কাজী সাহেব কে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে দিলো, উনি খুশী হয়ে চলে গেলো,উনি বলল,স্যার আপনি চিন্তা করবেন না,আমি সব ব্যাবস্থা করে দিবো, এই বিয়ে আজ না আজ থেকে ১ বছর আগে এই তারিখে হয়েছে।
এই হচ্ছে টাকার ক্ষমতা নিয়ম শুধু গরিবের সময় গরিবের মেয়ে পালিয়ে গেলে সেটা মানুষ বলে রহিমের মেয়ে বাড়ী থেকে পালিয়েছে, আর বড়লোকের মেয়ে পালিয়ে গেলে বলে, আরে বন্ধুর সাথে কক্সবাজার ঘুরতে গেছিলো।টাকা থাকলে সব নিয়ম-কানুন পকেটে চলে যায়।
পরের দিন সকালে,,,
স্যার:- বাবা, নীরব,আজ সন্ধ্যায় একটা পার্টি আছে, আর দুপুরে তোমাকে অফিসে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তাই ১২ টার মধ্যে অফিস চলে আসো।
আমি:- জি আচ্ছা!
বিয়ে হওয়ার পরে এখন পর্যন্ত আমি নিনিতার সাথে একবারও কথা বলেছি কি না ঠিক মনে পড়ছে না।
বড়লোক বাবার মেয়েদের প্রতি আমার ধারণা আগে থেকেই ভালো না, হয়তো ছবি আর খবর দেখে এই মনোভাব আর নিনিতাকে কে দেখে সে ভাবনা যেন ১০০% সত্যি হয়ে গেলো।
যাক আমার এসব ভেবে লাভ নাই,আমার টাকা চাই,আমি সেটা পেয়ে গেছি।দুপুরে অফিস গেলাম আমাকে নতুন এমডি করা হলো।
আমি:- একটা কথা বলবো ?
স্যার:- হা বলো বাবা!
আমি:- আমার বেতন কতো ?
স্যার:- তুমি হয়তো বুঝো নি।আজ থেকে আমার কোম্পানির ৫০% মালিক তুমি নিজে।আর প্রতি মাসে এই কোম্পানি থেকে যা লাভ আসবে তার অধের্কটা তোমার।
আমি:- এই পদের বেতন কতো ?
স্যার:- আগের জন কে আমি ৪ লক্ষ ৫০ টাকা দিতাম।
আমি:- আমাকেও তাই দিবেন। আর কোম্পানির যে লাভ হবে সেটা কোম্পানিতেই থাক।
সন্ধ্যায় স্থানীয় একটা বড় কমিউনিটি সেন্টারে আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান করা হলো।সবাই জানলো, আমারা ১ বছর আগে পালিয়ে বিয়ে করি, কিছু দিন হল আমার শ্বশুর জানতে পারে তাই আজকে অনুষ্ঠান।
হাজার হলেও এক মাত্র মেয়ে বলে কথা।
শ্বশুর এক কোটি টাকার একটা নতুন গাড়ী আমাকে উপহার দিলো।সাথে থাকার জন্য একটা বাড়িও দিল।বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে আমি নিনিতাকে নিয়ে নতুন বাড়ীতে উঠলাম।
মাস দুয়েক পরের কথা,,,
সন্ধ্যায় হটাৎ করে নিনিতা মাথা ঘুরে পড়ে গেলো, আমি খবর পেয়ে অফিস থেকে সোজা হাসপাতাল গেলাম ডাক্তার আমাকে বলল যে নিয়মিত না খাওয়ার কারণে সে অনেক
দুর্বল হয়ে গেছে, তার ওপর সে সব সময় চুপচাপ থাকে।
সত্যিই তো এই দুই মাসে আমার মনে পড়ে না যে ঠিক মতো প্রয়োজন ছাড়া তার সাথে দুই মিনিট কথা বলেছি কিনা…
অথচ আমি সেই ছেলে যাকে বড় ভাইয়ারা বউ পাগল বলতো,কারণ আমি ওদের বলতাম বিয়ে করে বউকে সময় দেন, টাকা না দিতে পারেন ভালোবাসা দেন, সময় দেন।সত্যি মানুষ পরিবর্তনশীল। তাই তো আমিও এই রকম হয়ে গেছি।
নিনিতা কে নিয়ে আমি হাসপাতাল থেকে বের হলাম, ডাইভার কে আমি আগে ছেড়ে দিয়েছিলাম, তাই গাড়িটা আমি চালাচ্ছিলাম! রাস্তার এক পাশে থামলাম।যায়গাটা আমার খুব পরিচিত,কারণ ১০ বছর আগে একবার যখন একটা ট্রেনিং এর জন্য ঢাকা এসেছিলাম তখন স্বপ্ন অন্যরকম ছিল।জানতাম আমার কাছে কোটি টাকা আসবে না আমি লাখ টাকা বেতন পাবো না।সময়ের সাথে সাথে সব কিছু আবছা হয়ে গেছে।
আমি গাড়িটা থামালাম।
নিনিতা:- এখানে গাড়ী থামালেন কেন ?
আমি:- নামেন।
নিনিতা:- কেন?
আমি:- এতো প্রশ্ন কেন ? নামেন !
চলবে…
•
•
ভাগ্য যেখানে নিয়ে যায় তা কেউ বলতে পারে না – আর ভাগ্য আমাদের হাতের বিষয় নয় যে ।
(প্রথম_পর্ব )
যদি এই পোস্ট এপ্রুপ হয় তাহলে বাকি গুলোও আপনারা খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবেন –
লেখা (Tuhin Ahmed)