নিয়তির খেলা (গল্প)
দ্বিতীয় পর্ব
( সকলেরই কষ্ট থাকে ,আমরা নিজেরা নিজের কষ্ট কেই সবচেয়ে বড় মনে করি ,কিন্তু অনেকেরই এর চেয়ে বড় কষ্ট আছে )
আপনাদের কাছে আবারও হাজির হলাম গল্বের ২য় পর্ব নিয়ে । আশা করছি আপনাদের গত পর্বের গল্পটা ভালো লেগেছে ।
যারা প্রথম পর্বের গল্পটি পড়েন নি তারা পড়ে নিবেন । নিয়তির খেলা নামক গল্পটা ।
প্রথম পর্বের পর
নিনিতা কে নিয়ে আমি হাসপাতাল থেকে বের হলাম, ড্রাইভার কে আমি আগে ছেড়ে দিয়েছিলাম, তাই গাড়িটা আমি চালাচ্ছিলাম! রাস্তার এক পাশে থামলাম।জায়গাটা আমার খুব পরিচিত,কারণ ১০ বছর আগে একবার যখন একটা ট্রেনিং এর জন্য ঢাকা এসেছিলাম তখন স্বপ্ন অন্যরকম ছিল।জানতাম আমার কাছে কোটি টাকা আসবে না আমি লাখ টাকা বেতন পাবো না।সময়ের সাথে সাথে সব কিছু আবছা হয়ে গেছে।
আমি গাড়িটা থামালাম।
নিনিতা- এখানে গাড়ী থামালেন কেন ?
আমি- নামেন।
নিনিতা- কেন?
আমি – এতো প্রশ্ন কেন ? নামেন !
নিনিতা গাড়ি থেকে নামতেই ওকে বললাম আপনি এখানে একটু দাঁড়ান আমি আসতেছি।
পাঁচ মিনিট পর নিনিতার কাছে আসতেই নিনিতা বলল
নিনিতা:- কি ব্যাপার,আপনি রেস্টুরেন্টের ভেতরে যাওয়ার পরেই রেস্টুরেন্ট থেকে সব মানুষ বের হয়ে চলে যাচ্ছে কেন।
আমি- আগে ভেতরে চালুন তারপর বলছি।
নিনিতা – হুম,এখন বলুন সবাই এভাবে বের হয়ে গেল কেন।
আমি– এই রেস্টুরেন্ট এর মালিক কে গিয়ে বললাম এই রেস্টুরেন্ট টা পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমাকে খালি করে দিন।আমি আমার ওয়াইফের সাথে একান্তে এখানে কিছুটা সময় কাটাবো।
নিনিতা– আপনি বলাতেই ওরা পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুরো রেস্টুরেন্ট টা খালি করে দিল।
আমি– প্রথমে না করেছিল।তারপর আমি বললাম আমি এফ আর গ্রুপের এমডি।রেস্টুরেন্ট টা আমাকে খালি করে দিতেই হবে।আর আমি এখানে যতক্ষণ সময় কাটাবো ততক্ষণে আপনি যত টাকা বিক্রি করতেন আমি আপনাকে এর তিন গুণ টাকা বিল হিসেবে দিব।
নিনিতা:- তারপর কি হল ?
আমি:- তারপর কি হল এটা তো আপনি নিজেই দেখলেন।
নিনিতা:- এসবের কি দরকার ছিল ? এখানে কি এমন আছে যে ওদের এত টাকা দিতে হবে ?
আমি:- আপনি টাকার চিন্তা করছেন ? আমি অন্য চিন্তা করছি ?
নিনিতা:-কি ?
আমি:- এখানে আমি ২ টা স্বপ্ন পূরণ করলাম।
নিনিতা:- কি কি?
আমি:- ১০ বছর আগে আমি যখন ঢাকায় আসি, আমি জানতাম আমি হয়তো অতো বেতন পাবো না যে আমার বউকে ফাইভ-স্টার
হোটেলে নিয়ে গিয়ে ডিনার করাতে পারবো, তাই তাকে অল্প টাকায় কীভাবে সুখে রাখা যায় সে চিন্তা করতাম,কিন্তু আজ এখানে এসে আমার সেই স্বপ্নটা পূরন করলাম।
নিনিতা:- আর ?
আমি:- টাকা আর ক্ষমতার বলে সময়কে কিনে নিলাম।
জায়গাটা অনেক শান্ত তাই না ?
নিনিতা:- এদিক অদিক কি খুঁজছেন ?
আমি:- ওয়েটার কে বলি আমাদের কে খাবার দিতে।
নিনিতা:- আমি এখন কিছু খাবো না।
আমি:- আপনি কিছু না খেলে যে আমার দুইটা স্বপ্নের মধ্যে একটা স্বপ্ন পূরন হবে না
নিনিতা:- আজ এতো ম্যায়া হলো কীভাবে ? নাকি আমি মরে যাবো এ কথা শুনে এতো খুশী ?
আমি:- না ভাবলাম। বিয়ে যখন করেছি,তখন নিজের স্বপ্ন গুলো অন্তত পূরণ করে নেই।
নিনিতা:- দেখেন আমার শরীর এখন ভালো নাই, তাই আপনার স্বপ্ন এখন পূরণ করতে পারবো না।আর কয়েক মাস পর বাচ্চাটা হয়ে যাক,আমি সুস্থ হই, তখন আপনার সব স্বপ্ন পূরন করব।
আমি:- আচ্ছা একটা কথা প্রশ্ন করবো ?
নিনিতা:- কি বলেন ?
আমি- এই বাচ্চা আসলো কীভাবে ?
নিনিতা:- মানে ?
আমি- না মানে,এই বাচ্চার বাবা কে ? কীভাবে আপনার সাথে আপনার পরিচয় হলো ? সে এখন কোথায় আছে ?
নিনিতা:- দুই বছর আগে ছেলেটার সাথে আমার পরিচয়,ছেলেটার নাম রাফি প্রথম তার সাথে পরিচয় হয় আমার বান্ধবীর বাসায়। সে আমার বান্ধবীর ছোট ভাইকে প্রাইভেট পড়াতো, সেই সূত্রে ওর সাথে আমার পরিচয় হয়।
তারপর মাঝে মাঝে বান্ধবীর বাসায় গেলে ওর সাথে আমার কথা হত।এভাবে ৬ মাস চলার পর তার সাথে আমার রিলেশন হয় ছেলেটা নাকি গরীব ছিল, কিন্তু অনেক মেধাবী।ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে তখন গনিতের ওপর মাস্টার্স করছিলো, আমি তাকে অনেক ভাবে হেল্প করতাম।পড়াশোনা শেষ হতেই বাবাকে বলে তার চাকরির ব্যবস্থা করে দেই।
তার চাকরি হয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর সে একদিন আমাদের বাড়ী আসলো, সে দিন বাসায় কেউ ছিল না আর রাতেও আসবে
না আব্বু-আম্মু।
সে দিন রাতে কি থেকে কি হয়ে গেলো,
বুঝলাম না। আমি এসব করতে চাই নি,কিন্তু সে বলল,আমার তো এখন চাকরি হয়েই গেছে।আর কিছুদিন পরেই তোমার বাবার সাথে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলব আমি।ওকে অনেক ভালবাসতাম তাই ওর কথা ফেলতে পারিনি সেদিন।
সে দিনের ঘটনার মাস খানেক পর একদিন রাফিকে দেখলাম একটা মেয়ের সাথে রিক্সায় করে কোথায় যেন যাচ্ছে।প্রথমে ভাবলাম এটা হয়তো ওর কোন কাজিন।কিন্তু না,পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ওটা ছিল রাফির বিবাহিতা বউ।দুই বছর আগেই রাফি এই বিয়েটা করেছিল।এটা আমি কিছুতেই মানতে পারলাম না।
আমি যার এতো উপকার করলাম যাকে এতো বিশ্বাস করলাম সে যে আমাকে এইভাবে ধোঁকা দিবে কখনও বুঝিনি, সে আমাকে একটুও ভালোবাসে নি, সে শুধু আমাকে ব্যাবহার করেছে।সেটা কোন ব্যাপার না কিন্তু আমার এই রকম ক্ষতি করলো কেন ?
দুই মাস পর জানতে পারলাম যে আমি প্রেগন্যান্ট।আমি তাকে অনেক বার ফোন করলাম, কিন্তু সেই নাম্বার বন্ধ। আমার আব্বুও
খোঁজ নিলো,আব্বুর এক বন্ধু তার সাথে দেখা করলে সে বলে সে আমাকে ছুয়েও দেখেনি, এই বাচ্চার বাবা সে না,সে আমার শুধু বন্ধু ছিল।আর এখনো তাই আছে
আমি তো এই শুনে অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম, আমি আত্মহত্যা ও করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি বেঁচে যায়,তখন জোর করে আপনার সাথে আমার বিয়ে দেয়।আপনিও তো শুধু আমাদের টাকা দেখে আমাকে বিয়ে করেন।
আচ্ছা একজন কে মন থেকে ভালোবাসা কি পাপ ? আমার বাবার অনেক টাকা,এটা কি আমার জন্য অভিশাপ ? আমি কি ভালোবাসা পাবার যোগ্য না ?
নিনিতাকে কিছু বলতে পারিনি, শুধু চোখ দুটো মুছলাম।এতদিন শুধু আমি আমার কষ্ট টা কে অনেক বড় মনে করতাম, কিন্তু ওর গল্প শুনে মনে হলো, আমার কষ্ট ওর সামনে ছোট্ট একটা আঁচড় মাত্র।এটা ভেবে আরও খারাপ লাগলো মেয়েটা পাহাড় পরিমাণ কষ্ট নিয়ে একটা লোভী মানুষের সাথে সংসার করে যাচ্ছে।
*( কেমন লাগছে পাঠক ?)
এই পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষেরই আলাদা কিছু গল্প থাকে।যা হয়তো আমাদের অনেকরই জানা থাকে না।তাদের ব্যাপারে পুরোপুরি না জেনেই আমরা নানা রকম মন্তব্য করে থাকি।নিনিতার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।এতদিন নিনিতার প্রতি আমার অন্যরকম ধারণা ছিল কিন্তু ওর থেকে ওর জীবনের বাস্তবতা শুনে ওর প্রতি থাকা আমার ভুল ধারণা গুলি ভেঙে গেল।
আমি:- আচ্ছা,রাফি নামের ছেলেটা যদি কখনো আপনার কাছে এসে ওর সন্তানের দাবী করে বসে।তখন আপনি কি করবেন ?
*(গল্পটা পড়ার পর আপনারা মন্তব্য করতে ভুলবেন না )
নিনিতা– আপনার কি মনে হয় তখন আমার কি করা উচিত।
আমি– সমস্যা টা আপনার ব্যক্তিগত।আপনার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আমি তো কিছু বলতে পারবো না।
নিনিতা– সমস্যাটা আমার ব্যক্তিগত হলেও এখন আমি আপনার বিবাহিতা বউ।এখানে আপনারও কিছু মতামত থেকেই যায়।
আমি– যদি আমার জানতে চান তাহলে আমি বলব,এই ধরনের মানুষের সাথে দ্বিতীয় বার আর দেখা না হওয়াটাই ভাল।এরা আবার যখন আসে তখনও কোন না কোন স্বার্থের খুঁজেই আসে।
নিনিতা:- আমার মাথাটা আবার কেমন যানি ঘুরছে।আমাকে বাসায় নিয়ে চালুন,
চলবে…
(সকলেরই কষ্ট থাকে ,আমরা নিজেরা নিজের কষ্ট কেই সবচেয়ে বড় মনে করি ,কিন্তু অনেকেরই এর চেয়ে বড় কষ্ট আছে )
কষ্ট করে শেষ পযন্ত গল্পটা পড়ুন তাহলেই বুঝতে পারবেন গল্পটা একটু হলেও আপনাদের ভালো লাগবে ।
হয়তো এই গল্পটা অনেকের সাথে মিলতে পারে , তবে এখানে কাউকে কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্য নয় বরং আনন্দ দেওয়ার উদ্দেশ্য ।
ধন্যবাদ সবাইকে।
লেখা ( Tuhin Ahamed )