আসলামুআলাইকুম। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজকের শিশু, আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। একটি সুন্দর জাতি বা একটি দেশকে গড়ে তুলতে হলে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যে দেশ বা জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে দেশ বা জাতি তত বেশি উন্নত। কথায় আছে “শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড।” মেরুদন্ড ছায়া যেমন মানুষ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না তেমনি শিক্ষা ছাড়াও এক দেশ বা জাতি উন্নতির মুখ দেখতে পারে না।
ছাত্র জীবনের মূল উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান অর্জন করা। শুধু পড়াশোনা করলেই সে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব এমনটা নয়। জ্ঞান অর্জন করার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করা। বর্তমানে পড়াশোনায় মনোযোগ না বসার অন্যতম কারণ হলো ছাত্র-ছাত্রীদের মনে বেশিরভাগ চিন্তা-চেতনায় এখন অন্য কিছু ঢুকে গেছে, এই কারণে পড়াশোনায় সঠিকভাবে মনোনিবেশ করতে পারছে না। তাই আজকে আমরা আলোচনা করব পড়াশোনায় মনোযোগ বসানোর সহজ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক টিপস:
১) উপযুক্ত পরিবেশ বাছাই করুন:
পড়াশোনায় মনোযোগ বসানোর জন্য অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উপযুক্ত পরিবেশ। জনসমাগম পূর্ণ বা কোলাহল যুক্ত স্থানে পড়াশোনায় মনোযোগ বসবে না এমনটাই স্বাভাবিক। যেখানে মানুষের উপস্থিতি কম এবং মানুষের কথাবার্তা ,চিৎকার নেই এমন জায়গা পড়ার জন্য বেছে নিতে হবে।
২) পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন:
পরিকল্পনা তৈরি করে এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে পড়াশোনা করলে পড়াশোনায় অধিক মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে। যেমন, আজকে একটি বইয়ের কতটুকু অংশ পড়বো, সেটা পূর্বেই নির্ধারণ করে নেব এবং সেই নির্ধারিত অংশটুকু অর্থাৎ লক্ষ্য পূরণের জন্য চেষ্টা করব।
৩) ভালো সময় নির্বাচন:
সারাদিন পড়াশোনা করতে কারোর ভালো লাগে না। একেকজনের একেক সময় পড়াশোনা করতে ভালো লাগে। যেমন ধরুন, কারো রাতে অর্থাৎ সারারাত পড়তে ভালো লাগে। আবার কেউ কেউ আছে যারা রাতে পড়তে পারে না বা বেশি রাত পর্যন্ত পড়তে পারে না। কিন্তু ,তারা খুব ভোর থেকেই মনোযোগ সহকারে পড়তে পারে। তাই কখন পড়লে সেই পড়ায় মনোযোগ বলবে সেটা নিজেকে খুব ভালোভাবে নির্ধারণ করতে হবে।
৪) নিয়মানুবর্তিতা:
পড়াশোনার জন্য নিয়মানুবর্তিতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি একদিন ১২ ঘন্টা পড়লাম আর পরপর দুইদিন মোটেই পড়লাম না এমনভাবে পড়াশোনা করলে পড়াশোনায় মনোযোগ বসে না। নির্দিষ্ট একটি সময়ে নির্ধারণ করে নিতে হবে যে সময়টুকু পড়তেই হবে প্রতিদিন।
৫) পর্যাপ্ত অনুশীলন:
প্রতিদিন যতটুকুই পড়ি না কেন সেটা সঠিকভাবে অনুসরণ না করলে পরবর্তীতে আবার সেটা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে কারণে কয়েকদিন পর পরই পূর্বের পড়া অনুশীলন করা উচিত। আর যেটুকু পড়বো বা মুখস্থ করব সেটুকু সাথে সাথে লিখলে আরও বেশি মনে থাকবে। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছে যে, একজন ব্যক্তি একবার পড়ে যতটুকু না মনে রাখতে পারে, একজন ব্যক্তি একবার লিখে তার থেকে বেশি মনে রাখতে পারে।
৬) সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা:
পড়াশোনা করার সময় কোন সমস্যা তৈরি হলে বা কোন পড়া বুঝতে না পারলে সেটা সমাধান করার চেষ্টা করা। যদি একবারে সেই সমস্যা সমাধান করা না যায় তবে কয়েকবার চেষ্টা করা। আর সমস্যা সমাধান করার ক্ষেত্রে প্রথমবার কোন বিষয়টি ভুল গেল সে বিষয়টি যাতে পরবর্তীতে আর ভুল না যায় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা।
৭) সঠিক সময়ে বিশ্রাম নিন:
পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক সময় বিশ্রাম নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব দেখা দিলে পড়াশোনায় মনোযোগ বুঝবে না এটাই স্বাভাবিক। বেশি রাত জেগে পড়াশোনা না করে, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে, ভোরে উঠে পড়াশোনা করা অধিকতর শ্রেয়।
৮) ধর্মীয় কাজে মনোযোগ:
যার যার ধর্ম মতে ধর্মীয় কাজে মনোযোগ দেয়া উচিত। এতে পড়াশোনার প্রতি ও মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে। যেমন ধরুন, মুসলিমদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ, কোনো মুসলিম যদি ভোরে ,ফজরের নামাজ পড়ে বই পড়তে বসে ,তবে তার মন থাকবে সতেজ এবং পড়াশোনায় অনেক বেশি মনোযোগ বসবে।
১০)পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ:
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের ফলে আমরা প্রতিদিন যা করি ,বা যেটুকু পড়াশোনা করি তা আমাদের মাথায় স্থায়ীভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে। আমাদের স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করে পুষ্টিকর খাবার সমূহ। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের গুরুত্ব অপরিসীম।
১২) পড়ার মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়া:
একটানা বেশি সময় না পড়ে, পড়ার মাঝে কিছু সময় অন্তর অন্তর বিরোতি নেওয়া উচিত।যেমন, বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি দুই ঘণ্টা একটানা পড়ার পর ১৫ মিনিট বিরতি নেওয়া ভালো। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে বিরতির সময় যেন কোনোভাবেই ১৫-২০ মিনিট এর বেশি না হয় । এই সকল পদ্ধতি গুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে, আশা করা যায়, পড়াশোনায় মনোযোগ আগের তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।
আর বেশি কিছু লিখলাম না । ভাল থাকবেন সবাই । আল্লাহ হাফেজ।