পাশ্চাত্য সভ্যতা ও ইসলামী সভ্যতা দুটি ভিন্ন জগত পৃথিবীর বুকে সভ্যতার আলোকবর্তিকার গোড়া হচ্ছে কলম কারণ Pen is mightier then sword, ইবনে রুশদ বলেছেন বুদ্ধির জবান হচ্ছে কলম । তারপরের ধাপ হচ্ছে জ্ঞান চর্চা ও গবেষনার মাধ্যমে গ্রন্থ প্রণয়ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গ্রন্তকার নির্মাণ স্থাপন প্রভৃতি । মূল বিষয়ে আসার পূর্বে আদির দিকে খতিয়ে দেখা যাক । যখন ৪৭৬ খৃষ্টাব্দে রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে । তখন পশ্চিম ইউরোপ অন্ধকার যুগে । সামন্ততান্ত্রিক সমাজ মোটামুটি গড়ে উঠেছে । কৃষি পশ্চাৎপদ, শিল্প ও বাণিজ্য তেমন গড়ে উঠে নাই । বড় নগরী নেই । নেই ইউরোপে ছোখে পড়ার মত দালান কোটা বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য । সাড়া ইউরোপে বর্বর উপজাতিগুলোর বর্গী বাহিনীর সংঘর্ষ ও দৌরাত্ন্য চলছে । তখন দস্যু বাহিনীর দ্বারা সাড়া ইউরোপ আক্রান্ত । ১০৬৬ সালে সাড়া চ্যানেল পারি দিয়ে ইংল্যান্ড দখল করে নিল । আরব দেশে তখন আব্বাসীয় শাসনামলের প্রায় শেষ অবস্থান । ইতিহাসে স্বর্ণযুগ হিসাবে শিক্ষা সঙ্ঘতি ও চরম উন্নতি করেছে গ্রীসের পেরি রোমের আগাস্টিন এবং মুসলমানদের আব্বাসীয় যুগ । আমরা এঁকে স্বর্ণযুগের অন্তর্ভুক্ত করতে পারি । পৃথিবী বলত তখন এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপকে বুঝায় । তখন অ্যামেরিকার আবিষ্কার ঘটেনি । সেই সময় মানুষ ভাবত পশ্চিমে আটলান্টিক এবং পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর পৃথিবীর শেষ । কেউ জানত না অস্ট্রেলিয়া, জিউজিল্যান্ড, আটলান্টিকের অস্তিত্ব কোথায় ।
মূল কোথায় আসা যাক আধুনিক ইউরোপের অন্যতম সভ্যতার মূলে ইসলাম জুড়ে আছে । পাশ্চাত্যরা শিকার না করলেও কিছুই আসে যায় না । সত্যের বাণী চিরন্তন । রাশিয়ার প্রধ্যাত উপন্যাসিক নিও টলস্টয়ের একটি লাইন মনে পড়ে গেল “ সত্যকে চাপা দিয়ে কখনও নিজেকে মহৎ প্রমাণিত করা যায় নাই” । সপ্তম শতক থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে ইসলামের অভ্যুদয় ও তাঁর প্রসার পৃথিবীর মানব সভ্যতার এক তাৎপর্য পূর্ণ ঘটনা যা ইতিহাসিক ঘটনা । ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বর্বর জাতি সুসভ্য জাতিতে পরিণত হয়ে পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানের উন্নতির ভিত্তিপ্রস্তর রচনা করে । মুসলিম ইম্মাহ আটলান্টিক হতে সিন্ধু এবং কাস্পিয়ান থেকে নীল জলপ্রপাত পর্যন্ত মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে । এর সাথে সংযুক্ত করে আরব, পারস্য, সিরিয়া, মেসোপটেমিয়ার আর্মেনিয়া, আফগানিস্তান, আফ্রিকার উত্তর অঞ্চল, মিসর সিন্ধু ও ট্রান্সককেশিয়াকে । আবার সভ্যতা সাম্রাজ্যের বিস্তার এবং ইসলামের প্রভাব কোনটিও ইউরোপ সহজে মেনে নেয়নি । ইসলাম ও খৃষ্টধর্ম একেশ্বরবাদী হলেও তাদের মধ্যে প্রভূত্ব ছিল এবং ইউরোপীয় পাশ্চাত্য সভ্যতার সঙ্গে প্রাচ্যের সভ্যতার পার্থক্যও ছিল প্রভূত্ব পরিমাণ । যার ফলশ্রুতিতে বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন সংকট ও সন্ত্রাসের সৃষ্টি হচ্ছে । তেমনিভাবে বাড়ছে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে কোন্দল ও বিদ্বেষ । ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় অষ্টম শাতাব্দী থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত স্পেনে পুনর্জাগরণে ইসলামের অবদান অনস্বীকার্য । আরব দেশে তখন ইতিহাস-চেতনা, বিজ্ঞান দর্শন, রসায়ন, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চার স্বর্ণযুগ । মুসলিম সাম্রাজ্যের রাঝধানী তখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্র । আরবি ভাষায় লেখাগুলো তখন ল্যাটিন ও ইউরোপীয় ভাষায় প্রচলিত ছিল ।
মুসলমানরা সে যুগে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা ভূমিকা পালন করে থাকে । সমগ্র আরবভূমি উত্তর আফ্রিকা ও স্পেন জুড়ে একাধিক ও বিশাল সাম্রাজ্য । অন্ধকার যুগ থেকে ইত্তরণের ক্ষেত্রে স্পেন মুসলমানদের মূমিকা স্বরনীয় ও বরণীয় । সেই সময় ধর্ম, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি চর্চা উৎকর্ষতা প্রমাণ পাওয়া যায় । স্পেনের মুসলমনরা ইসলামীয় চিন্তার ভিত্তিতে সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, শিল্পকলা, ইতিহাস, ধর্ম, জ্যোতিশাস্ত্র, কৃষিবিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র, সংগীত, গণিতশাস্ত্র, রসায়ন বিভিন্ন সময়ে অসামান্য অগ্রগতি লাভ করতে সক্ষম হয় । সেই পথ ধরে ইউরোপের বিজ্ঞানীরা জ্ঞাবচর্চা ও গবেষণার মাধ্যমে পাশ্চাত্য সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে । কোরআনে সূরা আলাক ; আয়াত ১ম তে উল্লেখ্য রয়েছে । “পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন” শুধু তাই নয় কোরআনে ৭৫০ টি বিজ্ঞান বিষয়ের আয়াত রয়েছে । জ্ঞানার্জন সম্পর্কে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন ‘যে জ্ঞানার্জন করে তাঁর মৃত্যু নাই ; চীনে গিয়ে হলেও জ্ঞান অসুসন্ধান কর ; ‘প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ইলম বা বিদ্যা শিক্ষা করা অবশ্যক কর্তব্য । সমগ্র রাত্রির উপাসনা অপেক্ষা এক ঘন্টা জ্ঞান চর্চা উত্তম ; ‘যে বিজ্ঞানীকে সম্মান করে সে আমাকে সম্মান করে’ । পর্যালোচনায় দেখা যায় মুসলমানরাই পৃথিবীতে প্রথম চিনি তৈরি করেন । সে সময় মুসলমানরা চীন দেশে থেকে কাগজ স্পেনে নিয়ে আসে । ইউরোপীরা তখন ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন । বিশ্বের অবস্থা তখন আজকেরমত প্রযুক্তি সমৃদ্ধশালী ছিল না ।
শুধু তাই নয় মুসলমান সভ্যতা বিশ্বের উন্নতির সর্বক্ষেত্রে এখন সৃজনশীলতা ও আবিষ্কারের জনক হয়ে আছে । যা ঐতিহাসিক সত্য । রসায়ন বা Chemistry’র জন্মদাতা যেমন মুসলমান তেমনিভাবে বন্দুক, বারুদ, কামান, নিক্ষেপণ যন্ত্রের আবিষ্কারও তাদের অবদান । যুদ্ধের উন্নত কৈশল ও আগ্নেয়াস্ত্র সম্মন্ধে বিধ্যাত আরবী গ্রন্থে তারাই লিখেছেন বিশ্ববাসীর জন্য । সেটির নাম ‘মালকুরসিয়া ওয়ান মানাসিব উল হারাবিয়া’ । আফগানা, বাত্তানি ও আল খেরজেমি, ইবনে ইউনুস সহ ৬৯ জন মুসলিম ভূগোলবিদ পৃথিবীর প্রথম যে মানচিত্র একেছিলেন তা আজও বিশ্বের বিস্ময় ২৭৫টি গবেষণামূলক পুস্তক যিনি একাই লিখেছিলেন তিনি হচ্ছে আল কিন্দি । প্রাচীন বিজ্ঞানী জনাব হাসান, আহাম্মদ ও মুহাম্মদ সম্মিলিতভবে ৮৬০ সালে বিজ্ঞানের ১০০ রকমের যন্ত্র তৈরির নিয়ম ও ব্যবহার প্রনালীর এবং তাঁর প্রয়োজন নিয়ে গ্রন্থ রচনা করে গেছেন । ইতিহাসের স্রষ্টা বিশেষত মুসলমান । তাঁর অনুবাদক হল ইংরেজ সিরাজ, মহিউদ্দিন, বাই-হাকী উদবী, মুহাম্মদ ঘোরী, জিয়াউদ্দিন বারুনি, আমীর খসরু, সসামসি সিরাজ, বাবর, ইয়াহিয়া বিন আহম্মদ, জোহর, আব্বাস শেরওয়ানি, ফজল, বাদুনি, ফিবিস্তা, কাফি খাঁ, মীর গোলাম হোসেন, হুসাইন মালেমী ও মইদ বিরুনী প্রমুখ মুসলিম মনিষীবৃন্দ । তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে । সে যুগের মুসলিম দার্শনিক, বিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ ইত্যাদির প্রধান বৈশিষ্ঠ্য তাদের সর্বজনীন উদার সৃষ্টি ।
বর্তমান বিশ্বে অনেক শতাব্দী ধরে তারা মুসলিম সভ্যতাকে তুলে ধরার বা প্রতিষ্ঠা অর্জন করার জন্য চেষ্টা করেছেন । মধ্যযুগে মুসলিম ইতিহাসের স্বর্ণযুগ আম্লান । যারা সমস্ত পৃথিবীর চিন্তার জগতে বিপ্লব এনেছিলেন । বিভিন্ন পত্রিকা, জার্নাল তথ্য থেকে জানতে পারি যে, বর্তমান বিশেও পাশ্চাত্যে বিভিন্ন দেশে ইসলাম ধর্ম সমুন্নত অক্ষুন্ন রেখে অনেকে এগিয়ে যাচ্ছে । সেখানে অনেক মসজিদ ইসলামিক পাঠশালায় ও গবেষণা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে । প্রিন্ট মিডিয়ার সঙ্গে ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া উন্নত হচ্ছে । সাড়া বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে ইসলাম ধর্মের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার । সত্যিই মুসলমানদের জন্য আনন্দের ও গর্বের । ইউরোপের রেনেসার যুগের কথা আসলেও মুসলমানদের কথা চলে আসে । এটাও প্রমাণীত সত্য । আজকের ইটালি, জার্মান, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, স্পেন সংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক শিল্পবিপ্লব উন্নয়নের ও বাণীজ্যের কথা বলি না কেন আরব দেশের সঙ্গে সৃষ্টি করেছিলেন সমুদ্র পথে । ইসলামের চিন্তা ধারাকে কাজে লাগিয়ে জ্ঞান-চর্চা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও সমৃদ্ধি ঘটিয়েছে ইউরোপীয়রা । সকল মুসলমানের আদর্শ মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ) । প্লেটো, এরিস্টটল জেফারসন, আব্রাহাম লিংকন সে পাদস্ক অনুসরণ করে ইউরোপের নতুন যুগের সৃষ্টি করেছিলেন ।
আত্মবিশ্বাস ই হোক কাজ শুরু করার মূলমন্ত্র
জীবনে চলতে গেলে আত্মবিশ্বাস থাকা তা খুব দরকার | আত্মবিশ্বাস ছাড়া জীবনে চলা খুব কঠিন | যে কোনো কাজ শুরু...