বিশাল এই পৃথিবীতে অনেক রহস্য লুকিয়ে রয়েছে যা আমাদের অনেকের কাছেই অজানা। মানুষ তার সৃষ্টিলগ্ন থেকেই রহস্যের প্রতি প্রবল আকর্ষণ বোধ করে। পৃথিবীতে এখনো এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে সাধারণ মানুষেরা কখনোই যেতে পারে না। হাতে গোনা কয়েকজন মানুষই সেখানে যেতে পারে। এ জায়গা গুলোর নিরাপত্তাও খুবই কঠোর।
রহস্যে ঘেরা এসব জায়গা গুলোতে এমন সব কাজ চলে যা জানলে যে কেউ অবাক হয়ে যাবে। আজকে আপনাদের জানাতে চলেছি এমনই ৩টি জায়গা সম্পর্কে যেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এরিয়া ৫১
পৃথিবীতে মানুষের সৃষ্টি দুর্লভ জায়গা গুলোর মধ্যে প্রথমেই থাকবে আমেরিকার নেভাডা অঙ্গরাজ্যের সামরিক স্থাপনা এরিয়া ৫১। এই এলাকায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দুর্ভেদ্য বেষ্টনীতে এ ঘাটির প্রবেশ পথে লেখা আছে সংরক্ষিত এলাকার দিকে প্রবেশের চেষ্টা করলেই তাকে গুলি করা হবে। এজন্য এই জায়গাটি নিয়ে মানুষের সবচেয়ে বেশি কৌতূহল কাজ করে।
এরিয়া ৫১ (Area 51) এমন এক সামরিক ঘাঁটি, যেখানে কর্মীরা সরাসরি প্রেসিডেন্টের কাছে দায়বদ্ধ। এই এলাকার ভিতরে আজ পর্যন্ত বেসামরিক কেউ ঢুকতে পারেনি। যদি কেউ ঢুকেও থাকে তাহলে তিনি বেঁচে ফিরে আসতে পারেনি। এরিয়া ৫১ এলাকাটি আমেরিকার সরকার এতটাই গোপন রেখেছিল যে, আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এটির সম্পর্কে সোভিয়েত ইউনিয়নের বারবার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এর অস্তিত্ব স্বীকার করেনি ওয়াশিংটন।
অবশেষে ১৮ই আগস্ট ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো আমেরিকার সরকার স্বীকার করে যে, হ্যাঁ এরিয়া ৫১ এর অস্তিত্ব রয়েছে। তারা স্বীকার করে যে আমেরিকার সরকার দেশটির এক গোপন সামরিক পরীক্ষার স্থান হিসেবে এরিয়া ৫১ নামক জায়গাটি ব্যবহার করে।
এই এলাকার আশেপাশের অনেক অধিবাসীরাই বলে থাকেন এই স্থানটিতে ভিনগ্রহের প্রাণীদের কাল্পনিক যান ফ্লাইং সসার উড়তে দেখা যায়। এছাড়া চাঁদে যাওয়ার যে দৃশ্য টিভিতে দেখানো হয়েছিল সেটিও নাকি এই এরিয়া ৫১ এ ধারণ করা হয়েছিল বলে বিতর্ক আছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়ায় এসব বিতর্কের কোনো সঠিক ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
ক্লাব ৩৩ অব ডিজনিল্যান্ড
বিশ্বের অন্যতম সেরা বিনোদন স্পট ও অ্যামিউজমেন্ট পার্ক হিসেবে ডিজনিল্যান্ডের রয়েছে আলাদা একটি পরিচয়। শুধুমাত্র বিনোদনের জন্যই পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসেন এই ডিজনিল্যান্ডে।
মূল ডিজনিল্যান্ড সবার জন্য উন্মুক্ত হলেও এখানকার একটি স্থান খুবই গোপন। স্থানটিতে কেউ ইচ্ছা করলেই ঢুকতে পারবে না। পৃথিবীর সবচেয়ে গোপন ও রহস্যময় স্থানের তালিকায় উঠে আসা একমাত্র ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের স্থান এটি। অন্য স্থান গুলোর সাথে কোনো না কোনো দেশ বা কোনো না কোনো গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত।
তবে ডিজনিল্যান্ডের নিউ অরলিস স্কয়ারে অবস্থিত ক্লাব ৩৩ নেহায়েতই একটি ব্যাক্তিগত ক্লাব। ওয়াল্ট ডিজনি নিজেই এর প্রতিষ্ঠাতা। তার খুব প্রিয় এই ক্লাবটি ভীষণভাবে সংরক্ষিত করে রাখা হয়। এখানে প্রায় সব সময় মদ বিক্রি হয় তবে কাগজে কলমে কোথাও কোনো মদের উল্লেখ নেই। দাপ্তরিকভাবে মদের ব্যাপারটিকে একেবারেই চেপে যাওয়া হয়।
এই ক্লাবটির সদস্য হওয়া মোটেও সহজ কোনো বিষয় নয়। আপনি এখানে যদি সদস্য হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন, তাহলে আপনাকে প্রচুর টাকা গুনতে হবে এবং তা হতে পারে দশ থেকে ত্রিশ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলা টাকায় যা প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকা। আর এখানকার বার্ষিক চাঁদা ৩২৭৫ থেকে ৬১০০ মার্কিন ডলার। আর টাকা গুনলেই যে সদস্যপদ মিলবে সেটিও ঠিক নয়। কারণ আজকে আবেদন করলে সবকিছু যাচাই বাছাই শেষে যদি রেজাল্ট পজিটিভ হয়, তাহলেও এখানকার সদস্য হতে প্রায় ১৪ বছর সময় লাগবে।
ভ্যাটিকান সিক্রেট আর্কাইভস
পৃথিবীর ইতিহাসে অনেকগুলো পট পরিবর্তন ও গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনা প্রবাহের সাক্ষী ভ্যাটিকান। আর ভ্যাটিকান সিটির ভিতরে সবচেয়ে রহস্যের জায়গাটি হলো ভ্যাটিকান আর্কাইভ বা সংগ্রহশালা। জায়গাটিকে বলা হয়, স্টোর হাউস অব সিক্রেট। অর্থাৎ গোপনীয়তার সংগ্রহশালা।
এই জায়গাটিতে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, ভ্যাটিকান সিটির পণ্ডিতরাও প্রবেশের অনুমতি পায় না। খুব কম সংখ্যক পণ্ডিতেরই এখানে ঢোকার সৌভাগ্য হয়। তাও পোপের অনুমতি ছাড়া সেটি একেবারেই অসম্ভব। অত্যন্ত সুরক্ষিত এই জায়গাটিকে পবিত্রতার দিক থেকেও আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখানে প্রায় ৮৪ হাজার বই আছে আর এই জায়গাটি ৮৪ কি.মি. দীর্ঘ। ধারণা হয় খ্রিস্টান মিশনারি, প্যাগান সহ আরও অনেক ধর্মের মতবাদের অনেক গোপন ডকুমেন্ট এখানে সংরক্ষিত আছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের এই গ্রন্থগারে প্রবেশের কোনো অধিকার নেই।