বরাবরের মতো আপনাদের সকলকে স্বাগতম জানাচ্ছি । আজকে এমন সব রাস্তার কথা জানাবো যে সব রাস্তার আরেক নাম হলো ভয়ঙ্কর সব দুর্ঘটনা। তারপরও কিন্তু মানুষ সেই রাস্তাগুলো ব্যবহার করে। যার কারণ শুধু এটা না যে, সে সব রাস্তার কোনো বিকল্প রাস্তা নেই। আসল কারণ হলো, ওই রাস্তাগুলো যেমন ভয়ঙ্কর, তেমনি সুন্দর। আর সব জায়গাতেই তো এমন কিছু মানুষ থাকে, যারা ভীষণ ক্ষ্যাপাটে। জীবনের ঝুঁকি নিতে তাদের বেশ আনন্দ। তাদের জন্য তো এসব রাস্তায় ভ্রমণ করার চেয়ে আনন্দের আর কিছুই নেই। তাই বলে আপনারা কিন্তু আবার এমন ক্ষ্যাপাটে হওয়ার চিন্তাও করবেন না। তবে চলুন শুরু করা যাক।
বিলিভিয়ার মৃত্যু সড়ক :
বিলিভিয়া কোথায় জানেন তো আপনারা? হ্যাঁ, দক্ষিণ আমেরিকার বিখ্যাত নেতা সাইমন বিলিভারের দেশ এই বিলিভিয়া। আর দেশের রাজধানীর নাম হলো লাপাজ। আবার এই দেশের আমাজন অঞ্চলের আঞ্চলিক রাজধানীর নাম হলো করোইকা।লাপাজ থেকে করোইকা পর্যন্ত যে রাস্তাটি, যেটির নাম হলো ইউঙ্গাস। কিন্তু মানুষ রাস্তাটাকে ওই নামে একদমই ডাকে না। সবাই রাস্তাটাকে ডাকে ডেথ রোড বা মৃত্যু সড়ক বলে। কেন জানেন? কারণ দুর্ঘটনা ঘটা তো এই রাস্তায় একেবারেই মামুলি ঘটনা! প্রতি বছর ওই রাস্তায় গড়ে 200-300 মানুষ মারা যায়!
কি ভাবছেন, রাস্তাটি যদি এতোই বিপজ্জনক, তাহলে অন্য আরেকটা রাস্তা বানালেই তো হয়! হ্যাঁ, বলিভিয়ার সরকার সেই কাজই করেছে। প্রায় কুড়ি বছর ধরে তৈরি করেছে, দুই হাজার ছয় সালে খুলে দিয়েছে লাপাজ থেকে করোইকোর আরেকটা বিকল্প রাস্তা। ফলে এখন এই মৃত্যু সড়কটার ব্যবহার করা হয় খুবই কম। কিন্তু রাস্তাটি কিন্তু এখনও ব্যবহার হয়। কারা ব্যবহার করে? ঐ যে, ঐ ক্ষ্যাপাটেরা, যারা শুধু তাদের জীবন নিয়ে বাজি ধরতে চায়!
চিনের গুয়োলিয়াং সুড়ঙ্গ সড়ক :
চিনের হুনান প্রদেশেই রয়েছে তাইহাং পর্বত। আর সেই পর্বতের আশেপাশের গ্রামের মানুষদের ওই পর্বত ঘুরে যাওয়া-আসা করতে তো খুবই সমস্যা হতো। কী করা যায়? ওরা সবাই মিলে পর্বতের পেট চিরে একটা সুড়ঙ্গ পথই বানিয়ে ফেললো। না, এই সুড়ঙ্গ পথটি একেবারে পাথরের পেটের মাঝখান দিয়ে ফোঁড় ফোঁড় করে বেরিয়ে যায়নি। বরং কিনারা ঘেঁষে পেটের সেলাইয়ের মতো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে চলে গেছে।গ্রামের লোকেরা ৫ বছর পরিশ্রম করে বানিয়ে ফেলেছেন রাস্তাটা। আর তখনই দুর্ঘটনায় যে কতো মানুষ মারা গেছে। সে ১৯৭৭ সালের কথা!রাস্তা লম্বায় প্রায় ১২০০ মিটার! আর সুড়ঙ্গটির উচ্চতা মোটামুটি পাঁচ মিটার ও পাশে ৪ মিটার। একবার চিন্তা করুন, এরকম একটা পাথুরে সুড়ঙ্গ, যা কিনা বানানো হয়েছে আরো ত্রিশ বছর আগে, সেটি আবার বানিয়েছিলো কতোগুলো গ্রামের মানুষ, সেই রাস্তা দিয়ে যেতে কেমন ভয় লাগতে পারে!
চিলির রুট ৫ :
চিলির এই রাস্তাটি আরিকা থেকে ইকুইক পর্যন্ত গেছে। রুট ৫ নামে এই রাস্তাটি কিন্তু খুবই বিখ্যাত। কেনো বিখ্যাত জানেন? কারণ, রাস্তাটি যেমন সুন্দর তেমনি ভয়ংকর। পাহাড়ের মাঝ দিয়ে রাস্তাটা এমনভাবে এঁকেবেঁকে গেছে, এমনভাবে হঠাৎ হঠাৎ করে বাঁক ঘুরেছে, আপনি আপনার সামনের দিক থেকে আসা গাড়িটাকে একদম কাছে আসার আগে দেখতেই পাবেন না। আপনি হয়তোবা গাড়ি চালাচ্ছেন, হঠাৎ দেখবেন আপনার পাশ ঘেঁষে শাঁ করে একটা গাড়ি ছুটে চলে গেলো। আপনি হয়তো বা ভেবেই বসবেন আপনার পাশ দিয়ে কোনো গাড়ি যায়নি। হয়তো একটা ভূতই শাঁ করে ছুটে গেল!
রাশিয়া কাঁচা মহাসড়ক :
কি হলো ভাবছেন তো, এবার নির্ঘাত গুল মারছি। মহাসড়ক বা হাইওয়ে-ই যদি হবে, তবে আবার সেটা কাঁচা হয় কি করে। কাঁচা রাস্তা হয় গ্রামে। এখন তো সেখানেও রাস্তা পাকা হয়ে গেছে। আর রাশিয়ার মতো দেশে কিনা একটা আস্ত হাইওয়ের রাস্তাই কাঁচা!আসলে ঘটনা হলো, সাইবেরিয়া থেকে ইয়াকুটস্ক পর্যন্ত এই রাস্তাটি বছরের ১০ মাসই বরফে ঢাকা থাকে। পাকা করবে কিভাবে বলুন? আর তুষারে ঢাকা সমস্ত কাঁচা রাস্তা কেমন বিপজ্জনক একবার ভাবুন তো। আর ভয় কিন্তু এখানেই শেষ নয়। বছরের ২ মাস আবার ওখানে বরফ গলে যায়। তখন বরফ গলা পানিতে পুরো রাস্তা একেবারে কাদার মত হয়ে যায়।ওখানে তখন কী যে লম্বা লম্বা জ্যাম হয়! হাজার হাজার গাড়ি আটকা পড়ে থাাকে রাস্তার দুপাশে। আর তাতে ডাকুরা যে কী খুশি হয়! হাজার হাজার গাড়ির ভীড়ে পুলিশ আর কতই পাহারা দেবে বলুন। ডাকুরা মহানন্দে ডাকাতি করতে শুরু করে দেয়। তবেই বুঝুন, কেমন বিপদ এই রাস্তায়!
চীনের সিচুয়ান-তিব্বত মহাসড়ক :
চায়নার মানে চীনের আরেক বিপজ্জনক রাস্তা এই সিচুয়ান-তিব্বত মহাসড়ক। সিচুয়ান রাজ্যের চেঙরচ থেকে তিব্বত রাজ্যের রাজধানী লাসা পর্যন্ত এই রাস্তাটি প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ। আর এই লম্বা রাস্তার দুইপাশে রয়েছে রাজ্যের যতো পাহাড় আর নদী। গুনলে দেখবে, পাহাড় আছে মোটমাট ১৪টি, এদের প্রত্যেকটিই চার-পাঁচ হাজার মিটার উঁচু! নদীও আছে প্রায় ১ ডজন! এতো গেল রাস্তার সৌন্দর্যের গল্প। শুধু সুন্দর হলে তো আর রাস্তাটার গল্পটা আজকে আপনাদের বলতাম না। এই রাস্তার একটা নিয়মিত ঘটনা হলো ভূমিধ্বস আর পাথর ধ্বস। এবার বোঝেন, আপনি পাহাড় আর নদী দেখতে গিয়ে কি ভূমিধ্বস আর পাহাড়ধ্বসে মরতে রাজি হবেন?