একটানা কথাগুলো বলে এবার থামলো মিনার। অবাক বিস্ময়ে মা তার পঁচিশ বছরের ছেলেটিকে অপলকে দেখছেন আর ভাবছেন কখন এত বড়টি হয়ে গেছে তার সেদিনের কোল জুড়ে থাকা ছোট্ট খোকাটি।
মা ছেলের এতদিনের সংসারটায় একক সিদ্ধান্তের কষ্ট প্রহরতো কখনো আসেনি এমন করে। সেই ছেলেবেলা থেকে বাবা হারানো মিনারতো মার উপরেই সব দায় চাপিয়ে এতটা বছর নিশ্চিন্তে কাটিয়েছে। প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলেছে মায়ের ইচ্ছের মত করে।লেখাপড়া, সখ আহ্লাদ এমন কি আচার অনুষ্ঠানে কোন পোশাকটা ওকে মানাবে মা নির্ধারন করে না দিলে ওর চলতো না।
অথচ এতক্ষন এতসব কথা বলে গেল মিনার যা ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারেন নি মা খানিক আগেও। যদিও চিরাচরিত ধারা বজায় রেখে সিদ্ধান্তের দায়টা মাকেই দিয়েছে।
ছেলেকে বুকে টেনে নিয়ে খুব বলতে ইচ্ছে হলো ছেলেবেলার মত,”এর চেয়েও ভালটা পরের মাসের বেতন পেলেই তোমায় নিয়ে দেব। শান্ত হও, ক্ষ্যান্ত দাও বাপ আমার।”
কিন্তু সময় যে আর সেখানে থেমে নেই। গড়িয়ে গেছে অনেকটা, দূর থেকে দূরে।
বুকের মাঝে চাপা দীর্ঘশ্বাসটা আড়াল করে ছেলেকে বললেন, রাত হয়েছেে, শুয়ে পড়ো।
মিনার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবে বললো, মা এটা নিয়ে এতটা রাগ হবার কিছু নেই। আমি যা ভাবি তোমার তা জানা দরকার।
সিদ্ধান্ত তোমার। হ্যাঁ কিংবা না। ওটাই ফাইনাল।
—– আমি রাগ করছি কে বললো?
——ঐ যে, রেগে গেলে তুমি আমাকে ” তুমি” সম্বোধন করো।
মা সোফা থেকে ওঠে দাঁড়ালেন। এক পলক তাকালেন ছেলের মুখের দিকে। নিপাট স্বচ্ছ সরল মন। এমন মনেইতো হানা দেবে মানুষ। মা হয়ে এটা বুঝতে এতটা দেরি হলো। কি জানি কোন মেয়ের ফাঁদে আটকে ছেলেটার আজ বেহাল দশা।
——- রাগ করার যথেষ্ট কারন কি নেই এখন? তুমি যাকে জীবনের মত গুরুত্ব পুর্ণ জরুরী একটা ব্যাপারে জড়াতে চাইছো, তার পরিবার তোমাকে অযোগ্য বলে অবহেলায় ঠেলে দিচ্ছে, এটা কি আমার জন্য খুব সম্মানজনক কিছু ঘটেছে?
—– আমি জানি মা তুমি কষ্ট পেয়েছো আমার এ অবস্হার কথা জেনে। কিন্তু আমি যে নিজেও টের পাই নি কখন এতটা এগিয়ে গিয়েছি অবন্তির মনের কাছে। তুমি আমার সব ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত দিয়েছো আমি তা মেনেই বড় হয়েছি। তাইতো আবারো তোমার মতের উপরই আমার মতের দায় দিয়ে নিজেকে মনের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছি। অন্ততঃ এটা ভেবে নিজেকে স্বান্তনা দিব মায়ের মতের বিরুদ্ধাচরণ করিনি। আবারও বলছি, তুমি সব জেনে যা বলবে আমি সেটাই মেনে নিব। শুধু তুমি বলো তুমি অবন্তিকে চাও কিনা। তুমি চাইলেই অবন্তি আসবে নির্দ্বিধায়।
—– ভুলে যাচ্ছিস কেন, সেও তার বাবা মায়ের আশায় গড়া সন্তান।
—— না মা তোমার মত করে এমন অসহায়ত্ব নিয়ে কষ্টের সাগর পাড়ি দিতে হয় নি তার বাবাকে। অগাধ সম্পদের মাঝে আয়া বুয়ার খেদমতে বড় হয়েছে অবন্তি।
—– আয়া বুয়া কেন? ওর মা চাকুরীজীবী? কোথায়?
—– ওর মা নেই। শুনেছি ওকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছেন। আমরা একই ডিপার্টমেন্টের, সেই সুত্রে পরিচয়। অনুষ্ঠানগুলোতে দ্বৈত আবৃত্তি করতে গিয়ে ওর পছন্দের সাথে, মন মানসিকতার সাথে নিজের মিল খুঁজে পেতে পেতে কখন যেন নির্ভর হয়ে পড়েছি দুজন দুজনার প্রতি। বিশ্বাস করো মা, আমি নিজেও বুঝতে পারি নি।
—–আহারে, মা নেই ওর?
আবৃত্তি করে বুঝি অবন্তি, তোর মত সুন্দর করে? অনুষ্ঠানের কত ছবিইতো দেখিয়েছিস, কখনো চিনিয়ে দিস নিতো অবন্তিকে। দেখি।
টেবিলে রাখা এনড্রয়েড ছুঁয়ে অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে অবন্তিকে আলাদা করে মায়ের সামনে মেলে ধরলো মিনার।
এক দৃষ্টে চেয়ে দেখলেন মা।
মায়ের ভাবনার মাঝেই মিনার বলে চলে ধীর কন্ঠে ——বলেছিতো তোমার যা ভাল মনে হবে তাই হবে। আমি শুধু আমার কথাগুলো, আমার ইচ্ছেগুলো তোমাকে জানালাম।
মা কিছু একটা বলতে যেয়েও কথা খুঁজে পেলেন না। শুধু ছবিটায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে চেয়ে রইলেন।
পরদিন নাস্তার টেবিলে প্লেটে রুটি সব্জির পাশে ডিমপোচটা সাজিয়ে দিতে দিতে মা বললেন স্বাভাবিক কন্ঠে,
——- মিনার আজতো ছুটি তোর। ওদের বাসায় ফোন দে। বিকেলে যাব।
—— তুমি কি অবন্তির কথা বলছো?
—— হ্যাঁ, প্রপোজাল দেয়ার নিয়মতো আমাদেরই, তাই না?
—— কিন্তু মা, ওর বাবা আমার মত পিতৃহীন সাধারন একটা ছেলেকে কোন ভাবেই চান না। বলেই দিয়েছেন অবন্তিকে। আর চান না বলেইতো অবন্তির অমতে জোর করে বিয়ে ঠিক করেছেন অন্যত্র।
আমি চাই না তুমি ওখানে গিয়ে ছোট করো নিজেকে।
—— তবে যে কাল অবন্তীর জন্য অস্হির হয়ে আমাকে কিছু করতে বললি।
—— এখনও বলছি। তুমিই শুধু পার মা।
তুমিই পার এ বাড়িতে অবন্তিকে ঠাঁই দিতে। তুমিই পার ঠেলে দিতে। তুমি যা করবে সেটাই হবে মা। তোমার অমতে আমি কখনই কিছু করিনি, এখনও করবো না।
—– তাহলে আমাকে অবন্তিদের বাসায় যেতে বাধা দিচ্ছিস যে।
—- কারন ওখানে গেলে অবন্তিকে পাওয়ার আশা একেবারেই নেই। যদি তুমি বলো, তবেই ও এবাড়িতে আসতে পারবে মা।
নইলে আমাদের পথ দুটো দুদিকেই হয়ে যাবে।
গলাটা কি আবেগে বুঁজে আসে মিনারের, নাকি মায়ের মনের ভুল।
সেই ছোট্টটি থেকে নিজ হাতে আগলে এত বড়টি করে তুলেছেন, কখনো টোকা লাগতে দেন নি একমাত্র আত্মজের দেহে কিংবা মনে। কিন্তু আজ একোন পরীক্ষায় ফেললো ছেলে।
লেখাপড়া শেষ করে চাকুরী জীবনে প্রবেশ করেছে মাস ছয়েক হলো। মা ছেলের রোজগারে এবার ওদের ফেলে রাখা প্লটটায় বাড়ি করার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। মা অবশ্য ছেলের জীবনটাকে তার আগেই গুছিয়ে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু যতবারই বলেছেন বিয়ের কথা,ততবারই মিনার থামিয়ে দিয়ে বলেছে, সবেতো শুরু মাগো। কিছুদিন যাক্ না।
কিন্তু গত রাতের পর থেকে পরিস্হিতি এত দ্রুত পাল্টে যাবে ভাবেননি মা।
সংশয়ের দোলাচালে পড়ে যান তিনি।। খুব বেশি সময় যে হাতে নেই তা তিনি অনুমান করতে পারছেন। তিনি কি অনুমতি দিবেন মেয়েটির বাবা মার অমতে এখানে প্রশয়ের। এটা অনুচিত হবে ভয়ানক। ব্যাপারটি উল্টোওতো ঘটতে পারতো। তার মিনার যদি তার কাছ থেকে অন্যের প্রশয়ে তাকে ছেড়ে চলে যেত। নাহ্ এটা ঠিক নয়, একেবারেই ঠিক নয়। তারচে বরং অবন্তির বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াবেন,নিজ ছেলের যোগ্যতায় তাঁদের মেয়েকে চাইবেন। ফিরিয়ে দিলে কিছুই করার নেই হয়তো। তবুও চেষ্টা না করে হাত গুটিয়ে থাকাটাওতো কোন কাজের কথা হতে পারে না।
অবশেষে মিনারের কছে থেকে অবন্তির নাম্বার এবং অবন্তির কাছ থেকে ওদের বাড়ির ঠিকানাটা নিতে সফল হন মা।
ছুটির বিকেলটায় হাজির হন ” মায়া নীড়” এর আলিশান প্রাঙ্গনে। এতটা যে আালিশান হতে পারে তা ধারনাতীত ছিল মায়ের কাছে। মস্ত বাড়ির সম্মুখে চোখ ধাঁধানো খোলা প্রান্তর জুড়ে সবুজের সমারোহে অভিভুত হয় মন। বাহারী পাতাবাহারে সমৃদ্ধ বিশালাকৃতির টবগুলোর সৌন্দর্য্যে চোখ যেন পলক ফেলতে ভুলে যায়। সিঁড়ির দু’ পাশে থরে থরে সাজানো টকটকে রাঙা রঙ্গনের সারি। প্রতিটি ফ্লোরের প্রত্যেকটি ব্যালকনিতে গ্রীল ছুঁয়ে থাকা বাগান বিলাসের হরেক রঙের উপচে পড়া ফুলের বন্যা শ্বেত শুভ্র
ঝকঝকে বাড়িটিকে মোহময়ী করে তুলেছে অসম্ভব সুন্দরে।
প্রথম গেটটি পার হয়ে অনায়াসে খোলা প্রাঙ্গন পেরিয়ে ভবনটির সিঁড়িতে পা রাখতেই দারোয়ান টুলে বসে ঝিমাতে ঝিমাতে এটা ওটা জিজ্ঞাসা শেষে অতি সমাদরে সাজানো ড্রয়িং রুমে বসিয়ে এক ছুটে উপরে চলে যায়।
চমৎকার চমৎকার ওয়াল পেইন্টিং এ চোখ বুলাতে বুলাতে কতটা সময় পেরিয়েছে তা বুঝে ওঠার আগেই গৃহকর্তার আগমনে একটু নড়ে চড়ে বসলেন মা।
সালাম বিনিময় শেষে সামনের সোফাটায় এসে বসলেন ভদ্রলোক। খুব স্বাভাবিক ভংগিতেই জানতে চাইলেন,
—– অফিসের বিষয়গুলো আমি বাড়িতে আনা পছন্দ করি না। তারপরও গতকাল আপনি যখন ফোনে অনুনয় করলেন রাজি হলাম। তবে মিনিট পনেরো সময় দেয়া যাবে। খানিক পরেই আমাকে একটা মিটিঙে এ্যাটেন্ড করতে হবে। তো বলুন কি সমস্যা? আপনার হাসবেন্ডের অসুস্হতার ব্যাপারে ছুটির বাড়ানোর নিয়ম অনুযায়ী কিছু ফর্মালিটিজ মানতে হবে। যেমন ধরুন——-
গলাটা কিঞ্চিৎ কেশে প্রস্তুতি নিলেন মা। একটু ইতস্তত করে বললেন,
—– কিছু মনে করবেন না, কথার মাঝেই কথা বলতে হচ্ছে। আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। সম্ভবত যিনি গতকাল আপনাকে ফোন করে সময় নিয়েছিলেন তাঁর এখন আসবার কথা ছিল।
আমি এসেছি অন্য একটা বিষয়ে মানে আপনার মেয়ে অবন্তির জন্য একটা প্রপোজাল নিয়ে। পছন্দ অপছন্দ পরের ব্যাপার। আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী আমি ছেলের মা হয়ে প্রস্তাবটা উত্থাপন করতে চাই।
এতক্ষনে সরাসরি তাকালেন ভদ্রলোক মুখের দিকে। পুরু লেন্সের চশমার ভেদ করে বিস্ময় মেশানো কন্ঠে উচ্চারণ করলেন,
——- তুমি মিনু না? সুবর্ণ গাঁয়ের মোল্লা বাড়ির মেয়ে মিনু। কি আশ্চর্য আমি এতক্ষন খেয়াল করিনি।
বিস্ময় ঝরে পড়ে মায়ের কন্ঠেও। মুখ ভর্তি চাপ দাড়ি, চোখে ভারী পাওয়ারে আড়ালের চোখ দুটি, স্বাস্হ্যের উন্নতি, এত কিছুর আড়ালে ত্রিশ বছর আগের অতি চেনা মানুষটিকে একটুও চিনতে পারেনিতো। স্হান কাল ভুলে ব্যাকুলতা ঝরে পড়ে মিনুর কন্ঠে,
—– সিফাত তুমি?এত বদলেছো?
—— তুমিওতো অনেক বদলে গেছো মিনু। পিঠে লুটিয়ে থাকা লম্বা বিনুনিটার জায়গায় হাল্কা খোপা, কপাল জুড়ে থাকা ছোট্ট টিপটা নেই, নেই তোমার মুখের মুহর্মুহু হাসির সাথে পাল্লা দেয়া জ্বলজ্বলে সাদা পাথরের নাকফুলটিও। তবে তোমার কন্ঠ একটুও বদলায় নি। সেই কাঁচ ভাঙ্গা হাসির রেশ ছড়ানো কন্ঠটি তেমনি আছে বলেইতো চিনলাম, তুমি নিশ্চিত মিনু।
—– হিসেব করেছো কতগুলো দিন পেরিয়ে গেছে এর মধ্যে। দীর্ঘ ত্রিশ বছরে কত যোগ, কত বিয়োগ। উত্থান পতন।
—— ত্রিশটা বছর, অথচ মনে হচ্ছে এইতো সেদিন সুবর্ণ গাঁয়ের পাশ ঘেঁষে বয়ে চলা উথলি নদীর বর্ষার দুকুল ছাপানো ভরা মৌসুমে দল বেঁধে নৌকায় ভেসে বেড়ানোর দিনগুলি। স্কুল পেরিয়ে পাশের বনগ্রামের কলেজে পায়ে হেঁটে যাওয়া আসা। কলেজ শেষে ঢাকায়। ভার্সিটিতে আমি একা চলে এলাম। তারপর একসময় ছাড়াছাড়ি। কেযে কোথায় হারিয়ে গেলাম।
জল ভরা আবছা দৃষ্টিটা নামিয়ে ফেলে মিনু। গলা বুঁজে আসে, না বলা কথারা কষ্টের দলা পাকিয়ে আটকে থাকে কন্ঠনালি জুড়ে। বলা হয় না সিফাতকে সেদিন তার বাবা সাধারন ঘরের অনুপযুক্ত ছেলে আখ্যা দিয়ে মিনুকে শহরে বোনের বাড়ি রেখে প্রবাসী পাত্রের হাতে তুলে দিয়েছিলেন সুখে থাকবার আশায়। সব ভুলে সুখি হতে চেয়েছিল মিনুও। কিন্তু নিয়তির কঠোর নিয়মে কয়টি বছর যেতে না যেতে মিনু ফিরে এসেছে স্বামীর হঠাৎ মৃত্যুতে দু বছরের মিনারকে বুকে নিয়ে।
সুবর্ণ গাঁয়ে একটিবারের জন্যও আর যায়নি মিনু কখনও। ফুপুর আশ্রয়ে কটা বছর থেকে মাঝ পথে থেমে যাওয়া লেখাপড়াটা শেষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। ততদিনে একটু একটু করে মিনারও বেড়ে ওঠেছে। স্কুলে যেতে শিখেছে। ঘরে বাইরে মিলিয়ে ব্যস্ততা ভরে ওঠেছে মা ছেলের প্রতিটি মুহুর্ত। পেরিয়ে গেছে অনেক গুলো দিন, অনেকটা বছর।
—– মিনু প্রপোজাল দিতে এসেছো বললে, ছেলে তোমার এত বড় হয়ে গেছে?
সিফাতের কথায় বর্তমানে ফিরে মিনু। দূর অতীতে হারিয়ে গিয়েছিল এতক্ষন।
—– হ্যাঁ বড় হয়েছে বৈকি। কিন্তু যত বড় তুমি চাও তত বড় না। হয়তো বলবে, তাহলে জেনেশুনে প্রপোজালটা নিয়ে এলাম কেন? কারন দুটি। এক এখানে আসার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত জানতাম না , অবন্তি তোমার মেয়ে। দুই, অবন্তির বেড়ে ওঠা আর মিনারের বেড়ে ওঠার এত বেশি ফারাকটাও আঁচ করতে পারি নি।
—– মিনার? তোমার ছেলে? অবন্তি যাকে পছন্দ করে সেই মিনার?
—— হ্যাঁ সেই মিনার। নিয়তির কি পরিহাস। একদিন আমার বাবার কাছে তুমি হেরে গিয়েছিলে বলে আজ আমি নিজে এসে তোমার প্রতিশোধের সুযোগ করে দিলাম একেবারে হাতের মুঠোয়।
হাসলো সিফাত নিজের ভারী হয়ে যাওয়া শরীরটা দুলিয়ে। বললো,
—— প্রতিশোধটা নিতে পারবো আমিও জানতাম না কিছুক্ষন আগেও।
ওঠে দাঁড়ায় মিনু হাত ব্যাগটা নিয়ে।
—– আসি সিফাত। পনেরো মিনিট সময়ের কথা বলছিলে, মিটিং এ যাবে। একটু বেশিই নিয়ে ফেলেছি সময়, দুঃখিত।
সিফাত হা হা করে ওঠে।
—- আসি মানে? অবন্তির সাথে দেখা করবে না? ছেলে বৌ কে আশীর্বাদটা অন্তত করে যাও। হা হা হা।
অবন্তি, অ ব ন্তি……..
গলা বাড়িয়ে অবন্তিকে ডাকতে শুরু করে সিফাত।
মিনু কিছু বুঝতে না পেরে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।
সিফাত দু’ পা এগিয়ে মিনুর কানের পাশে মুখ বাড়িয়ে বললো – মিনু, তোমার মুখোমুখি অবন্তি আসবার আগেই জানিয়ে রাখি , প্রতিশোধ আমি নিতে চাই। তিরিশ বছর আগে তোমাকে ভালোবেসে হারাবার প্রতিশোধ, তোমার ছেলের হাতে আমার সবটুকু ভালোবাসা অবন্তিকে তোমার হাতে তুলে দিয়ে।
ঠিক সেই মুহূর্তেই সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসতে থাকে শ্যামা বরণ মিষ্টি একটা মুখ। যাকে আজই মিনারের এ্যানড্রয়েডে মুগ্ধ চোখে দেখেছে মিনু।
আর সাথে সাথেই আবৃত্তি পাগল মিনারের বহুবার আবৃত্তি করা রবি ঠাকুরের কবিতাটি ভেসে আসে মিনারেরই কন্ঠ নিঃসৃত হয়ে দূর থেকে,
“যেমন আছো তেমনি এসো আর করো না সাজ
বেনী না হয় এলিয়ে রবে, সিঁথি না হয় বাঁকা রবে
নাইবা হলো পত্র লেখার সকল কারু কাজ
কাঁচল যদি শিথিল থাকে নাই বা তাতে লাজ……
যেমন আছো তেমনি এসো আর করো না সাজ।”
——————–+