সকাল অাটটার সময় সিএনজিতে উঠেছি অামরা তিন জন ।চারিদিকে কুয়াশা অার প্রচন্ড শীত সিএনজির দুই পাশের পর্দা দুইজন পা দিয়ে ধরে রেখেছি ।যাত্রার উদ্দেশ্য ছেলের বৃত্তি পরীক্ষা , সিট পড়েছে জামালপুর অাশেক মুহাম্মদ সরকারি কলেজে ।পরীক্ষা শুরু হবে দশটার সময় নয়টার অাগে গিয়ে সিট খুঁজে নিতে হবে দেড়ি হলে সিট খুঁজে পেতে কষ্ট হবে ।অামাদের বাড়ি থেকে জামালপুর সদর বারো কিলোমিটার অামরা অাধা ঘন্টার মধ্যে পৌছে গেলাম ।একটু পরে বড় স্যার চলে অাসছে রোল নাম্বার অনুযাই রোহানের সিট পড়েছে বাণিজ্যিক শাখার দ্বিতীয় তলায় ।
সিড়ি দিয়ে উঠতেই হাতের বাম পাশের রুমে সামনের বেঞ্চে সিট খুঁজে পেলাম । বেঞ্চগুলো বেশ বড় বড় বাচ্চাদের বসে লেখতে কষ্ট হবে যারা একটু বেশি ছোট তাদের তো দাড়িয়ে লিখতে হবে ।একি রোহানের বমি বমি লাগছে ,অাসলে দোষটা অামাদেরই ছেলে সি এন জি অার বাসে উঠলে বমি করে ।অামরা অাসলে কোন উপায় না পেয়ে সি এন জিতে উঠেছি । চেয়ে ছিলাম রিকশায় করে অাসবো । কিন্তু প্রচন্ড শীত অার ঠান্ডা বাতাসের জন্য রিকশায় অাসা হয়নি ।
ছেলের খারাপ লাগছে কিছু করতে হবে ।অামার ব্যাগে স্যালাইনের প্যাকেট ছিলো মাম পানির বোতলে স্যালাইন গুলিয়ে খাওয়াতে শুরু করলাম । কয়েক বার খাওয়ার পরে ছেলে বলতেছে অাম্মু ভালো লাগছে ।এর মধ্যে মানুষের চিল্লাচিল্লিতে মাথা ধরে গেছে ।এক রুমে প্রায় সিট পড়েছে দুইশ অার এই দুইশ জনের পেছে অাসছে অারো দুই তিন জন করে তাহলে কতটা গন্ডগোল হতে পারে বুঝায় যায় ।অনেকে এক রুম থেকে অরেক রুমে দৌড়াচ্ছে সিট খুঁজে পাচ্ছেনা ।
অামি রোহানের অাব্বুকে বললাম ছেলেকে টয়লেটে নিয়ে যাও দেখায় নিয়ে অাসো পরে দরকার লাগলে যেতে পারবে ।ছোট মানুষ সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে অাসা ভাল পরে যাতে সমস্যা না হয় ।ছেলেকে বললাম অাব্বু অন্য টিচার দেখে ভয় পাবানা প্রশ্নে সমস্যা থাকলে বা বুঝতে না পাড়লে জিজ্ঞেস করবা ঠিক অাছে ।স্যালাইন গুলানো বোতল অার একটা নরমাল পানির বোতল ছেলের কাছে রেখে দিলাম অার বললাম খারাপ লাগলে খাবা ।
সাড়ে নয়টার সময় গার্ড অাসছে বাঁশি ফু দিতে দিতে সব গার্জিয়ান বের হয়ে যান , সবইকে বের করে দিলো বড় গেইটের বাইরে ।অার মাইক দিয়ে বলতেছে দুই ঘন্টা পরীক্ষার সময় শেষ হওয়ার অাগে কারো বাচ্চা বের করা হবেনা ।যার যার বাচ্চা সিটে বসে থাকবে পরীক্ষা শেষ হলে অাপনারা সিট থেকে বাচ্চা নিয়ে অাসবেন ।
বাইরে হাজার হাজার গার্জিয়ান কেউ গাছের নীচে বসে অাছে ,কেউ হাটছে কেউ বাদাম খাচ্ছে ।কত রকমের খাবারে বাহার বসেছে রোহানের অাব্বু বলতেছে কিছু খাবা অামি বললাম না । কলেজটা বিশাল বড় অনেক এরিয়া জুড়ে অাগে কখনো অাসা হয়নি তাই এদিক সেদিক ঘুড়ে দেখলাম ।তার পর রোহানের অাব্বু বললো তুমি এখানে বসো অামি গেইটের কাছে যাই ।সব বাবা ,চাচা ,ভাই মানে ছেলে গার্জিয়ানরা কেচি গেইটের সামনে দাড়িয়ে অাছে ।
অথচ এখনো পরীক্ষা শেষ হতে এক ঘন্টা বাকি অাছে ।মাইকে বলতেছে হলি চাইল্ড স্কুলের ছাত্র অনিক এর গার্জিয়ান ভিতরে অাসেন । মনে হয় বাচ্চাটা ভয় পাচ্ছে বা কান্না কাটি করছে অথবা বড় কোন সমস্যা হয়েছে তাই হয়তো ডাকছে ।রোহানের স্কুলের নাম শুনেই অামি দাড়িয়ে পড়েছি অামাকে ডাকছে না তো ।যে ছেলেকে স্যালাইন খাইয়ে রেখে এসেছি এরকম ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক ।বার বার বলেছি অাব্বু খারাপ লাগলে পরীক্ষা দিতে হবে না চলো বাসায় চলে যাই । বলে অাম্মু ভালো লাগছে লিখতে পারবো সমস্যা নেই ।
বসে বসে ভাবছি তিন মাস অাগে বৃত্তি পরীক্ষার সিলেবাস পাওয়ার পর থেকে মা ছেলে প্রচুর কষ্ট করেছি ।সকাল সাড়ে নয়টা থেকে ক্লাশ শুরু অার সাড়ে বারোটায় ছুটি ।তবে যারা যারা বৃত্তি দিবে তাদের ছুটি না অাধা ঘন্টা পরে তাদের বৃত্তি কোচিং শুরু হবে ,অার চলবে দেড় দুই ঘন্টা ।সিলেবাসের নিয়ম অনুযাই বাংলায় পঁচিশ ,ইংরেজিতে পঁচিশ অার অংকে পঞ্চাশ মোট একশ মার্কে পরীক্ষা ।লেখা কাটা ছিড়া করা যাবে না তাহলে নাম্বার কাটবে ।প্রতিটা দাড়ি কমা কোথায় কি ভাবে লিখবে নিজের হাতে শিখিয়েছি বাকিটা অাল্লাহ ভরসা ।
রোহানের অাব্বু যে গেইটে দাড়িয়ে অাছে তার বিপরীত পাশে অারেকটা গেইট অাছে অামি ঐ গেইটের কাছে গিয়ে দাড়িয়ে অাছি ।কোন গেইট অাগে খুলে বলাতো যায়না ।প্রচুর মানুষের চাপ দাড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না মনে হচ্ছে যুদ্ধে নেমেছি ।সবাই চাচ্ছে অাগে যেতে কারণ এতগুলো মানুষ যখন একসাথে যাবে ছেলে পর্যন্ত পৌছাতে অনেক সময় লাগবে ।
অবশেষে পরীক্ষার সমসয় শেষ হলো । অামি যে গেইটে দাড়িয়ে অাছি সেই গেইট অাগে খুলা হলো ।স্রোতের পানির মত সবাই ভিতরে ঢুকে গেলো ।অামি দৌড়ে যাচ্ছি ছেলের কাছে যাবো পিছন থেকে এক ভাবি বললো রোহানের অাম্মু ভাইকে দৌড়ে যেতে দেখলাম দুতলায় উঠে গেছে ।অামি বললাম সত্যি দেখছেন ও যে গেইটে দাড়িয়ে ছিলো ঐটাতো এখনো খুলে নাই ।ভাই দেয়াল টপ্কে ঢুকে পড়েছে অার এক দৌড়ে দুতলায় ।তখন স্বস্তিতে দাড়ালাম ও যখন গেছে অার কোন চিন্তা নাই ।
অামাকে যে ভাবি দাড়াতে বলছে উনার মেয়েও রোহানের সাথে পরীক্ষা দিছে ।উনার হাসবেন্ড গেছে মেয়েকে নিয়ে অাসতে ,অামরা মাঠে দাড়িয়ে অাছি ।সিড়ি দিয়ে এত লোক উঠতেছে যে ,যারা উপরে উঠে গেছে তাদের নামতে খুব কষ্ট হবে ।দশ মিনিট পরে দেখি ছেলেকে কোলে করে অাসতেছে ।সেই ভাবির কাছে বিদায় নিয়ে তাড়াহুড়া করে অটোতে উঠে পড়লাম ।অার একটু পড়ে অটো সিএনজি কিছুই পাওয়া যাবেনা ।
অটোতে বসে ছেলেকে জিজ্ঞেস করতেছি অাব্বু তুমি ঠিক অাছো তো ?সমস্যা হয়নি তো ?খারাপ লাগেনি তো ? অারো স্যালাইন খেয়েছিলে ?পরীক্ষা কেমন হয়েছে বলতে হবে না ,যা হয় হোক তুমি ঠিক অাছো তো ?এবার অামার ছেলে অাম্মু অামি ঠিক অাছি ।সমস্যা হয়নি স্যালাইন খেয়েছি একবার টয়লেটে শিসু করতে গেছি ।অার পরীক্ষার খাতা দুইবার রিভিশন দিয়েছি ।
এবার ছেলের বাবার পালা অামি বলতেছি , কি ব্যাপার তুমি দেয়াল টপ্কালে কি করে ?তুমি না একদম গেইট ধরে দাড়িয়ে ছিলে ?বলতেছে অারে অামি যেই শুনেছি এই গেইট খুলতে দেড়ি হবে ।অামি ভিতর থেকে বের হয়ে দেয়াল টপ্কে ঠুকে গেছি ।অার এক দৌড়ে ছেলের কাছে দেড়ি হলে ছেলে ভয় পাবে তাই ।
তিন মাস পরে রেজাল্ট বের হয়েছে ।১ম শ্রেণী থেকে রোহানদের সাথে চার জন পরীক্ষা দিয়ে ছিলো ।অার এই চার জন থেকে দুই জন বৃত্তি পেয়েছে ।অার এই দুই জনের ভিতরে অামার রোহানের নাম অাছে ।বৃত্তির রেজাল্ট গ্রেটিং সিস্টেম দুইটা একটা সাধারন গ্রেট অারেকটা ট্যালেন্টপুল ।
অামার রোহান ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে ।