(সত্যিকার ঘটনা)
আমার বন্ধু ফরহাদ। খুব সাধারণ একজন ছেলে। চারিত্রিক সৌন্দর্য ও দৈহিক সৌন্দর্যের দিক দিয়ে একদম পারফেক্ট। এবার এইচএসসি দিয়েছে। খুব মেধাবীও বটে।
ভালোবাসার দিক দিয়েও কিছুটা কম নয়। যার জলন্ত প্রমাণ আমি নিজেই।ফরহাদের ভালোবাসার ছায়াতলে যে মাত্র ১মিনিটের জন্য বিশ্রাম নিছে সে কখনও ফরহাদকে ভুলতে পারে নাই। জি আমি সেই মহামানব ফরহাদের জীবনের খুব কষ্টের কাহিনী নিয়ে এসেছি। এই গল্প যে শুনছে সে কাঁদছে। অনেকে মনে করেন ফেসবুক প্রেম মানে টাইমপাস। জি না, সব এক না। যার জীবন্ত প্রমাণ ফরহাদ-নদীর ভালোবাসার গল্পে।
তাহলে শুরু করা যাক?
সেদিন ছিলো ১৬এপ্রিল। ফরহাদের খুব সাধারণ একটা ফেসবুক আইডি আছে যা দিয়ে সে শুধু বন্ধুদের সাথে দুষ্টমি করে। কিন্তু সেদিন কী হলো জানেন? তার একটা পোস্টে নদী নামের একটা মেয়ে খুব ধারূনভাবে কমেন্ট করতেছিলো। ফরহাদের সাথে অনেক্ষণ পোস্ট বিষয়ক কমেন্টে কথা হলো। তারপর ফরহাদ বলে বসলো,
আমরা কী ইনবক্সে কথা বলতে পারি?
মেয়েটাও চটপট রাজি হয়ে গেলো। রাজি হবেই না বা কেন? ফরহাদের ছন্দে ছন্দে ভালোবাসার আবেগ দিয়ে যে কমেন্টগুলা করছে তাতে যেকোন মেয়ে ফরহাদের সাথে কথা বলতে চাইবে।
এবার ইনবক্সে ফরহাদ-নদী অপরিচিত আলাপ শুরু,,
ফরহাদের পক্ষ থেকে শুরু
– কেমন আছেন?
-ভালো আপনি?
-মনে হয় আছি।
-কী করতেছেন?
-এইত্তো বসে আছি। আপনি?
-আকাশের চাঁদের জ্যোৎস্না উপভোগ করতেছি আর তাঁরা গুনতেছি।
-তাঁরা কী গুনা যায় নাকি?
-হুম, যায় তো। এই দেখুন আকাশে মাত্র একটা তাঁরা আছে😆😆😆
-এত্তো বড় আকাশে মাত্র একটা তাঁরা?
-মেঘলাতো তাই তাঁরা আর দেখা যাচ্ছে না।
-বাহ, আপনি তো খুব রোমান্টিক!
-তাই? আচ্ছা চা খাবেন?
-আজিব তো! আমি কী আপনার পাশে নাকি যে চা খাবো?
-না পাশে না থাকলে কী হইছে? আমার কল্পনায় দেখতেছি আপনি আমার পাশে।
-না আপনি খান। আমি খেয়েছি।
-ভাত খেয়েছেন?
-না ইচ্ছা করতেছেনা।
-এই আমি এসএমএস বন্ধ করে দিলাম যান কিছু খেয়ে নিন। তারপর কথা হবে।
-এখন ইচ্ছা করতেছেনা।
-তাহলে কোন কথা নাই আপনার সাথে।
-ওকে বাবা। খাচ্ছি তবে আপনি কোথাও যাবেন না কিন্তু!
-ওকে,, ৫মিনিটের মধ্যে খেয়ে আসবেন।
৫মিনিট পর,,,
-আছেন?
-জি ম্যাডাম, আপনার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।
-আচ্ছা আমরা তো এখনো পরিচয় হই নাই।
-কীভাবে হবো বলুন? আপনি যে রোমান্টিক কথা শুরু করছেন আমি তো ভুলেই গেছি আমরা অপরিচিত।
-হা হা হা, সরি সরি। ঠিক আছে আগে আপনার পরিচয়,,
-আমি নদী, বাসা গাজীপুর, এবার এইচএসসি দিছি।
-আমি রায়হান, বাসা চট্রগ্রাম। আপনার মতো আমিও এইচএসসি দিছি।
-আমরা তো ফ্রেন্ড হতে পারি?
-হুম অবশ্যই।
-তাহলে কোন আপনি নয়,শুধু তুমি ওকে?
এভাবে একে অপরের সাথে রাত প্রায় ৩টা পর্যন্ত চ্যাটিং হয়। তার শুভ রাত্রি বলে ঘুমিয়ে পড়ে একদিনের মধ্যে তাদের মধ্যে খুব ভালো লাগা তৈরি হলো।
সকালে প্রতিযোগিতা শুরূ করলো, কে কার আগে শুভ সকাল বলবে।
এইভাবে তাদের মাঝে খুব রোমান্টিক চ্যাটিং হয়।
প্রায় ৩০দিন পর,,,
আশ্চর্যের কথা কী জানেন? এই কয়দিন তারা শুধু মেসেঞ্জারে কথা বলছে। একে অপরের মধ্যে কেউ মোবাইল নাম্বার চায় নাই।
কিন্তু আজ হঠাৎ ফরহাদ বলে উঠলো,
-তোমার কন্ঠ শুনতে খুব ইচ্ছা করতেছে।
-তাহলে কী করা যায়?
-কিছু যদি মনে না করো আমরা যদি মাত্র একদিন ফোনে কথা বলি?
-আজিব তো! তুমি এতদিন পর এটা বলছো? সত্যি ফরহাদ তুমি খুব ভালো মানুষ। অথচ অন্যান্য ছেলেরা দেখো। প্রথমদিন কথা হতে না হতেই নাম্বার, ছবি চেয়ে বসে থাকে।
-তাহলে নাম্বারটা তো পেতে পারি?
-তোমার নাম্বার দাও কল দিচ্ছি।
-*********
এবার শুরু হলো, ফোনে আলাপ। প্রতিদিন ফোনে কথা না বলে ২জনই থাকতে পারে না
এর ১০দিন পরে ফরহাদ নদীর পিক চেয়ে বসলো।
নদীও দিয়ে দিলো।
আবার শুরু ২জনের মধ্যে রোমান্টিক কথা। এমনভাবে কথা বলছে মনে হয় তারা একে অপরের পাশে আছে। রাত্রে ঘুমানোর সময় বলতো, আমি তোমার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছি। ঘুমাও সোনা। এইভাবে কানে মোবাইল রেখে কথা বলতে বলতে নিজেদের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়তো।
৫মাস পর,,,
ফরহাদ নদীকে প্রপোজ করে বসলো,,, নদীও গ্রহণ করলো। গ্রহণ করবেই না বা কেন। যে ফরহাদের ভালোবাসা মাত্র এক ঘন্টার জন্য পেয়েছে সে ফরহাদকে ভালোবেসে ফেলেছে। আর নদী প্রায় ৬মাস!! চিন্তা করা যায়? যাইহোক শুরু হলো, ফরহাদ-নদীর ভালোবাসার অধ্যায়।
এইভাবে আরও ৬মাস পার হয়ে গেলো।
হঠাৎ একদিন নদীর মোবাইল বন্ধ, ফেসবুকেও এক্টিভ নেই। কী হলো কিছু বুঝতেছেনা ফরহাদ। নদীর এক চাচাতো বোনের সাথে ফরহাদের যোগাযোগ হতো। ৩দিন পর ওকে কল দিতেই কান্না আওয়াজ!!
-কী হলো? নদীর কোন খবর নাই কেন?
-ভাইয়া, নদীর পেটে অনেক বড় অসুখ হয়েছে। তাকে এখন অপারেশন করা হচ্ছে। ভাইয়া দোয়া করবেন,,,
হঠাৎ ফরহাদের বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। মোবাইলটা হাত থেকে পড়ে গেছে আর ফরহাদ মাটিতে চুপ হয়ে বসে রইলো। অনেক কথা বলার চেষ্টা করলেও কোন কথা নাই।
এইভাবে ৩দিন পার হয়ে গেলো। এই ৩দিন এক গ্লাস পানি পর্যন্ত ফরহাদ মুখে দেয় নাই।
হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠলো। মোবাইল হাতে নিতেই ফরহাদ বলে উঠলো।
-নদী। নদী তুমি কেমন আছো? তুমি জানো কত চিন্তা করতেছিলাম তোমার জন্য?
-আমি ভালো তুমি? খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করতেছো?
এইভাবে আগের মতো কথা শুরু।
হঠাৎ একদিন তার চাচাতবোনের কল।
-ভাইয়া আজ আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো। কী ভাবে যে বলি?
-আরে কোন চিন্তা করো না বলে ফেলো।
-আপনি নদীকে ভুলে যান।
-কী? তোমার এত্ত বড় সাহস? তুমি নদীকে ভুলে যেতে বলছো?
কাঁদো কাঁদো গলায়,,,
-ভাইয়া নদী অনেক বড় প্রবলেম। ওর চিকিৎসার জন্য সাপ্তাহে প্রায় ২০হাজার টাকা লাগে। আপনি পারবেন ওকে বিয়ে করে এই খরচ চালাতে?
-মানে কী বলতেছো এগুলা?
আপনি নদী মায়ের সাথে কথা বলুন,,
ওর মাও কাঁদো কাঁদো গলায়,,
-বাবা, আমি তোমার পাঁয়ে ধরি তুমি আমাদের ও নদীর ভালোর জন্য ওকে ভুলে যাও। ওর এক খালাতো ভাই ডাক্তার। ও ওই নদীর চিকিৎসার দায়ভার নিয়েছে। ও নদীকে বিয়ে করতে চায়। তোমার সম্পর্কে যতটুকু জানি তুমি নদীর চিকিৎসার খরচ চালাতে পারবেনা।
ফরহাদ আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না। কলিজাটা পেটে যাচ্ছে। ও নদীকে কত্তটা ভালোবাসে বুঝাতে পারবেনা। কিন্তু ভালোবাসার মানুষের ভালোর জন্য ফরহাদ নদীকে ছেড়ে দিছে। নদী ফরহাদের সাথে পালাতে চাইলেও ফরহাদ ফিরিয়ে দিছে। আজও ফরহাদ প্রতিদিন রাত্রে একাকী চোখের পানি ফেলে আর নদী? শুনা গেছে ও এখনো ওর স্বামীকে ওকে স্পর্শ পর্যন্ত করতে দেয় নাই।
এখনো নদী কল করলে ফরহাদ কেটে দেয়।
নদী কোনদিন বাচ্চা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিছে আর ফরহাদ সিদ্ধান্ত নিছে কোনদিন বিয়ে করবে না।
বাংলার নতুন ভালোবাসার ইতিহাস গড়ে উঠলো। যা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।