ফোর্সেস গোল ২০৩০ (Forces Goal 2030) হল বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকে আধুনিকায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর আকার বৃদ্ধি, আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম সংগ্রহ ও সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রশিক্ষন প্রদান। পরিকল্পনায় দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের উপর জোর দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদে ৪ টি ধাপে এটি সম্পন্ন হবে বলে যানা গেছে। ইতোমধ্যে এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার প্রায় ৪ শতাংশ সুদে ১০ বছর মেয়াদি লুনে রাশিয়ার কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলারের (প্রায় আট হাজার কোটি টাকা) অস্ত্র ক্রয় করার চুক্তি করেছিল।
বিমানবাহিনী
ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রসর, সুপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং সুসজ্জিত বাহিনী হিসেবে তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে যা বাংলাদেশের আকাশস্থলের হুমকিকে বাধা দিতে পারবে। এই পরিকল্পনাটি এয়ার পাওয়ার এবং এয়ার ডিফেন্স সক্ষমতা উভয়কেই শক্তিশালী করার উপর জোড় দেয়। বর্ধিষ্ণু দায়িত্ব ও কর্তব্যকে কার্যকরীভাবে পালন করার জন্য এই বিমান বাহিনী দুটি ভিন্ন কমান্ডে বিভক্ত হয়েছে: দক্ষিণাঞ্চলীয় এয়ার কমান্ড ও উত্তরাঞ্চলীয় এয়ার কমান্ড। ইতিমধ্যেই দুটো এয়ারবেজ গঠিত হয়েছে – একটি কক্সবাজারে এবং অন্যটি ঢাকার বঙ্গবন্ধু এয়ারবেজ সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডের অধীনে বরিশালে একটি নতুন এয়ারবেজ এর প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। কক্সবাজার এয়ারবেজকে আধুনিকায়িত এবং বর্ধিত করা হবে। দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডে একটি মেরিটাইম এয়ার সাপোর্ট অপারেশন সেন্টার (MASOC) গঠন করা হবে। সিলেটে আরেকটি এয়ারবেজ তৈরি করা হচ্ছে। বিমান বাহিনী ১০৫ এডভান্স জেট ট্রেইনিং ইউনিট নামে একটি এডভান্সড ফাইটার পাইলট ট্রেইনিং ইউনিট তৈরি করছে। এই ইউনিটে তিনটি ট্রেইনিং স্কোয়াড্রন থাকবে যা পাইলটদেরকে ফাইটার জেট চালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদান করবে।
সেনাবাহিনী
পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি সুপ্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, অস্ত্রে সুসজ্জিত ও প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রসর বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠবে যা দেশকে প্রচলিত ও অপ্রচলিত হুমকির হাত থেকে রক্ষা করবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার কার্যক্রমকে তিনটি স্বাধীন কর্পে ভাগ করা হবে – কেন্দ্রীয়, পূর্বাঞ্চলীয় ও পশ্চিমাঞ্চলীয়। সর্বমোট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের সংখ্যা ১০টি করার জন্য তিনটি নতুন ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন – সিলেট ১৭ নং ইনফ্যান্টি ডিভিশন’ কক্সবাজারের রামুতে ১০ নং ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন এবং বরিশাল-পটুয়াখালীতে ৭ নং ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন তৈরি করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইনে একটি রিভারিন ব্রিগেড (নদীভিত্তিক ব্রিগেড) তৈরি করা হচ্ছে। বান্দরবন জেলার রুমায় একটি পূর্ণবর্ধিত ক্যান্টনমেন্ট প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের ৯৭টি নতুন ইউনিট যোগ করার একটি পরিকল্পনা রয়েছে। এদের মধ্যে ১৯টি ইউনিট গঠিত হবে সিলেট ক্যান্টনমেন্ট এর জন্য, ২২টি রামু ক্যান্টনমেন্টের জন্য এবং লেবুখালিতে অবস্থিত শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্টের ৫৬টি ইউনিট গঠন করা হবে। কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের প্রস্তাবিত ক্যান্টনমেন্টের জন্য একটি রিভারিন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটেলিয়নও গঠন করা হবে।ব কিছু সাধারণ ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটেলিয়নকে প্যারা ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটেলিয়ন এবং মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটেলিয়নে পরিণত করারও কাজ চলছে। বিশেষ কার্যক্রম সক্ষমতার (স্পেশাল অপারেশন ক্যাপাবিলিটি) জন্য ২ নং কমান্ডো ব্যাটেলিয়ন গঠন করা হয়েছে। এই ব্যাটেলিয়ন ১ নং কমান্ডো ব্যাটেলিয়নের সাথে মিলে দেশের একটি একক প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে।
নৌবাহিনী
ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি সুসজ্জিত তৃমাত্রিক নৌবাহিনী গঠনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে যা বাংলাদেশের সামুদ্রিক স্বার্থকে রক্ষা করতে পারবে। নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন ও বর্ধিতায়নের কাজ একই সাথে চলবে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী কক্সবাজারের পেকুয়াতে বিএনএস শেখ হাসিনা নামে একটি সাবমেরিন বেজ গঠন করছে। দেশটির সর্ববৃহৎ নেভাল বেজটি পটুয়াখালীর রাবনাবাদে গঠিত হচ্ছে যার নাম বিএনএস শের-ই-বাংলা । এই বেজে সাবমেরিনের নোঙ্গর ও বিমানচালন সুবিধা (বার্থিং এন্ড এভিয়েশন ফ্যাসিলিটি) থাকবে। বিএনএস শেখ মুজিব নামে আরেকটি পূর্ণবর্ধিত বেজ ঢাকার খিলক্ষেতে নির্মাণ করা হচ্ছে। চটড়গ্রামের সন্দ্বীপ চ্যানেলে একটি ফ্লিট হেডকোয়ার্টারের নির্মাণকাজ চলছে যেখানে জাহাজ নোঙ্গরের সুবিধা থাকবে।