মা এবং স্ত্রীর (অর্থাৎ বউ – শাশুড়ির) ঝগড়া আমাদের সমাজের একটি খুবই সাধারণ ঘটনা। আমাদের দেশে এমন পরিবার খুব কমই আছে, যেখানে একই পরিবারে বউ এবং শাশুড়ি আছে কিন্তু ঝগড়া – ঝাটি নেই! বিয়ের পর কিছুদিন সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকলেও পরবর্তীতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মনোমালিন্য দেখা দেয়। শাশুড়ি যা করতে চান বউ তা পছন্দ করেন না। আবার বউ যা করতে চান শাশুড়ি তা পছন্দ করেন না। এ নিয়ে নীরব ক্ষোভ একসময় বিস্ফোরণে রূপ নেয়। আর এই ঝগড়া – ঝাটির মাঝে পড়ে যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে দুর্বিসহ যন্ত্রণায় ছটফট করে মরেন “স্বামী বেচারা”!!
আজ আমি এই সমস্ত আভাগা স্বামীদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলবো। শুরুতেই আমি একটি শিক্ষামূলক ঘটনার বিবরণ দিতে চাই। যা শুনলে আপনার বুদ্ধির ঘট খুলে যেতেও পারে। আর এই অবাঞ্ছিত পরিস্থিতিকে সামাল দেয়ার রাস্তাটা পেযেও যেতে পারেন।
মূল ঘটনাঃ ঘটনাটি ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতারও আগের, মানে ১৯৪৭ এর আগের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মৌলভী এবং একজন পন্ডিতমশাই – এই দুই প্রফেসরের পরস্পরের ইগোর লড়াইয়ে একবার বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে পড়ে।
তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী একজন তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান ও রাজনীতিবিদ ছিলেন এবং বলা বাহুল্য, তিনি খুবই বুদ্ধিমানও ছিলেন। তিনি নিজেই এই অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হলেন।
প্রথমেই মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় মৌলভী সাহেবকে একা ভাইস চ্যান্সেলরের রুমে ডেকে নিলেন। তাকে খুবই বিনয়ের সঙ্গে বললেন, “ছিঃ ছিঃ মৌলভী সাহেব এটা কি আপনাকে মানায়? আপনি হলেন গিয়ে নবাবের জাত। আপনি কিনা একজন হিন্দু বামুন ভিখিরির সঙ্গে ইগোর লড়াইয়ে নেমেছেন? না, না, না! এটা আপনাকে মানায় না! আপনি কি বুঝতে পারছেন না যে, এতে আপনারই স্ট্যাটাস ফল করে যাচ্ছে?”
মৌলভী সাহেব মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে এত সম্মান পেয়ে চুপ করে গেলেন। ভবিষ্যতে আর পন্ডিতমশাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে নিজের স্ট্যাটাসকে আর ছোটো না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন।
এদিকে মৌলভী সাহেব চলে যেতেই মন্ত্রী মহোদয় পন্ডিতমশাইকে ডেকে পাঠালেন। তাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন, “ছিঃ ছিঃ পন্ডিতমশাই, এটা কি আপনাকে মানায়? আপনি হলেন গিয়ে জ্ঞানী – গুণী মানুষ, গুরুর জাত। আপনি কিনা একজন সামান্য মৌলভীর সঙ্গে ইগোর লড়াইয়ে ব্যস্ত? না, না, পন্ডিতমশাই এটা আপনাকে মানায় না! আপনি কি একবারও ভেবে দেখেছেন। এতে আপনারই স্ট্যাটাস ফল করে যাচ্ছে?”
পন্ডিতমশাই মন্ত্রী মহোদয়ের কাছ থেকে এমন কথা শুনে চুপ করে গেলেন এবং মৌলভী সাহেবের সঙ্গে আবার ঝগড়া না করে নিজের স্ট্যাটাস বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন।
ফলশ্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কেটে গিয়ে শান্তি ফিরল।
যে সকল ভাইয়েরা মা এবং বউয়ের ঝগড়ার মাঝে অসহায় হয়ে মরে যেতে চাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলি –
ঃ মা আর বউ যখন ঝগড়া করে, তখন আপনি নিজে মন্ত্রীমশাই হয়ে যান। একটু বুদ্ধি খাটান আর জীবনকে উপভোগ করুন নিজের মত করে!!!
ভালো থাকুন শরীর এবং মনে।
শুভেচ্ছা রইল।
আল্লাহ্ হাফিজ।