উর্বর ভূ-খণ্ডবিশিষ্ট, অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল, ধানক্ষেত এবং নাতিশীতোষ্ণ দেশ নিয়ে বাংলাদেশ গঠিত। অপরূপ রূপে সাজানো এ দেশকে নিয়ে কবি বলেছেন-
“এমন দেশকে কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
ও সে সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।”
বাংলাদেশ এর মানুষের সংস্কৃতি, খাদ্য, পোশাক, আতিথেয়তা সবকিছু অন্যরকম; বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার। বাঙালিরা ভোজনরসিক নামে পরিচিত। পৃথিবীতে আমরা “মাছে-ভাতে” বাঙালি নামে পরিচিত। মাছ এবং ভাত বাংলাদেশ এর প্রধান খাদ্য হলেও এখানে একেক অঞ্চলের একেক ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য আছে। যেমন: ময়মনসিংহ এর মন্ডা, চাঁদপুরে পদ্মার ইলিশ, বগুড়ার দই, চট্টগ্রামের মেজবানি মাংস, পুরান ঢাকার বাকরখানি, বিরিয়ানি, আরও আছে বিভিন্ন ধরনের পিঠা।
পদ্মার ইলিশ :
বাংলাদেশের এর জাতীয় মাছ ইলিশ। পদ্মা নদীর রূপালি ইলিশ পৃথিবী বিখ্যাত। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রূপালি ইলিশ নদীতে ধরা পরে। বিদেশেও প্রচুর রপ্তানি করা হয় এই ইলিশ মাছ। ইলিশের রান্নার স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয়। ইলিশের কিছু রান্না হলো: ভাপা ইলিশ, ভাজা ইলিশ, সর্ষে ইলিশ, ইলিশ পোলাও, ইলিশ ভর্তা, নারিকেল ইলিশ ইত্যাদি। বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাসে অর্থাৎ বৈশাখ মাসের শুরুতে বাঙালিরা পান্তা ভাত আর ইলিশ ভাজা খায়। বর্ষাকালে সবাই ভুনা খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজা রান্না করে এবং বৃষ্টি উপভোগ করে।
ভর্তা:
বাঙালির খাবারের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ভর্তা৷ এমন কোনো বাঙালি নেই; যে ভর্তা পছন্দ করে না। আলু ভর্তা বাঙালিদের খুবই প্রিয়। এছাড়াও আরও নানা ধরনের ভর্তা আছে। মাংস ভর্তা, মরিচ ভর্তা, কালিজিরা ভর্তা, সবজি ভর্তা, ডিম ভর্তা, মাছ ভর্তা ইত্যাদি। একটু সরিষার তেল, শুকনো মরিচ আর পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি করা সব ধরনের ভর্তার স্বাদ হয় অতুলনীয়। ভর্তা ঝাল করে বানানো হয়। ভর্তা দিয়েই অনেক সময় খাওয়া শেষ হয়ে যায়, এত মজার একটি খাবার এটা।
শুটকি:
বাঙালিদের আরেকটি দেশীয় খাবার হলো শুটকি। মাছকে রোদে পুড়িয়ে, শুকিয়ে শুটকি করা হয়। বিভিন্ন ধরনের শুটকি আছে; যেমন: তেলাপিয়া শুটকি, ইলিশ শুটকি, লইট্ট্যা শুটকি ইত্যাদি। তেল, বেশী করে রসুন, পেঁয়াজ এবং সবজি দিয়ে অনেক ঝাল করে এই শুটকি করা হয়। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এবং কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে শুটকি পল্লী আছে। নানা ধরনের শুটকি পাওয়া যায় সেখানে। গ্রামের মানুষের কাছে শুটকি অনেক বেশী প্রিয়।
পিঠা/পায়েস:
বাঙালিরা আহার শেষ করে পিঠা বা পায়েস দিয়ে অর্থাৎ মিষ্টি দিয়ে। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করা হয়। নতুন চালের পিঠা আর খেজুরের গুড় দিয়ে নানা ধরনের পিঠা করা হয়। শীতকালে কৃষক নতুন ধান ঘরে তোলার সময় গ্রামীণ মহিলারা সেই চালের গুড়া দিয়ে পিঠা বানায়। যেমন: চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা, পাটিসাপটা, নকশি পিঠা, দুধ পুলি, নারকেল পিঠা, মসলা পিঠা ইত্যাদি। ঘন দুধ এবং খেজুর দিয়ে নতুন চালের পায়েস করা হয়। এসব পিঠা এবং পায়েস এর স্বাদ মুখে বলে শেষ করা যাবে না। এমন কেও নাই যে এসব পিঠা পছন্দ করে না। গরম গরম ধোয়া উঠা ভাপা পিঠা সকলের প্রিয়। চিতই পিঠা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভর্তা; মরিচ ভর্তা, কালিজিরা ভর্তা, সরিষা ভর্তা খাওয়া হয়। পিঠা এবং পায়েস বাঙালিদের ঐতিহ্য।
ফল:
বাংলাদেশ এ প্রচুর ফল উৎপাদন হয়। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, জামরুল, বেদানা, বেল, ইত্যাদি। এসব ফল অনেক মিষ্টি। এবং পাশাপাশি টক ফল ও রয়েছে যেমন: লটকন, জাম্বুরা, আমড়া, তেঁতুল ইত্যাদি। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা বিভিন্ন ধরনের ফলের জন্য বিখ্যাত। দেশ বিদেশে ও এই ফল রপ্তানি করা হয়।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার বলে শেষ করা যাবে না। বর্তমানে অনেক বিদেশী খাবার বাংলাদেশ এ প্রবেশ করলেও, এখনো যুগ যুগ ধরে বাঙালিরা তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার ধরে রেখেছে। খাবারের স্বাদ, গন্ধ ধরে রেখেছে। পাশ্চাত্য দেশের খাবার এদেশে জায়গা করে নিতে পারে নি। এমনকি দেশের বাইরেও এই বাঙালি ঐতিহ্যবাহী খাবার তুলে ধরা হয়েছে। আমরা সবসময় সচেতন থাকব, যেন আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার গুলো হারিয়ে না যায়, যুগের পর যুগ যেন ধরে রাখতে পারি।