আসসালামুআলাইকুম বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই প্রথমে সবাইকে জানাই নারী দিবসের শুভেচ্ছা।আজকে আমরা নারী নেতৃত্বের কিছু কথা নিয়ে আলোচনা করব।আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে তো চলুন শুরু করা যাকঃ
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাজনীতি ও আন্দোলনে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বে রয়েছে দুজন নারী।একজন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।অন্যজন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আশির দশকের মধ্যভাগে দুজনই বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারের হত্যার পর তার জোযষ্ঠা কন্যা রাজনীতিতে আসেন। অপরদিকে সেনাশাসক ও রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানের হত্যার পর তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। দুজনই প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন সুতরাং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থায় নারী নেতৃত্বের ভূমিকা অপরিসীম।
বাংলাদেশ সংবিধানে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রবেশ ঘটেছে। সকল নারী পুরুষ মৌলিক অধিকার প্রদান করেছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজভিত্তিক বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের প্রবেশ ঘটেছে।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল। এ দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি ১৯৮১ সালে এ দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধান হিসেবে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত পালন করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তাঁর দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করলে তিনি প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন।এর পর ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিরোধীদলীয় নেতা ও ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এ দলে আরো বেশ কয়েকজন নারী অন্যতম শীর্ষ স্থানে আসীন রয়েছে। বর্তমান সংসদের উপনেতার দায়িত্ব পালন করেছেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। এছাড়া মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডা, দীপুমনি। এছাড়া ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ মহিলা লীগ নামে এ দলটির একটি অঙ্গ সংগঠনও রয়েছে।
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম দল বিএনপির চেয়ারপার্সন এর দায়িত্ব পালন করেছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী, ১৯৯৬ সালে বিরোধীদলীয় নেতা, ২০০১ সালের পুনরায় প্রধানমন্ত্রী এবং ২০০৮ সালে পুনরায় বিরােধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে বেশ কয়েকজন নারী অধিষ্ঠিত রয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দল নামে এ দলটির একটি অঙ্গ সংগঠন আছে।বাংলাদেশের অন্যতম আরো একটি প্রভাবশালী দলের নাম াতীয় পার্টি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও সেনাশাসক। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এই দলটির চেয়ারম্যান। তবে এ দলেও ককজন নারী নেতৃত্ব রয়েছেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। বেগম রওশন এরশাদ তাদের মধ্যে অন্যতম । জাতীয় পার্টির স্থায়ী কমিটিতে একজন এবং জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে ৪ জন মহিলা সদস্য আছে। এছাড়া অন্যান্য দলের কার্যনির্বাহী পরিষদে মহিলাদের অংশগ্রহণ রয়েছে।নারীর ক্ষমতায়নের একটি বিশেষ দিক হলাে সংরক্ষিত আসন ব্যবস্থা। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য ৫০টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলে আনুপাতিফ হারে সংরক্ষিত আসনে প্রতিনিধিত্ব পায়। এছাড়া উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও সংরক্ষিত ব্যবস্থা রয়েছে। উপজেলা পরিষদে একজন মহিলা। ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতি তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একজন মহিলা সদস্য সরাসরি ভােটে নির্বাচিত হন। সুতরাং জাতীয় ও স্থানীয় রাজনৈতিক দল ব্যবস্থায় নারীর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। এসব নারী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত। জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের নারীরা আনুপাতিক হারে রাজনৈতিক দলের মনােনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে ১৫টি সংরক্ষিত আসনে সবাই আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে ৩০টিতে বিএনপি এবং ১৯৮৬ সালে ৩০টিতে জাতীয় পার্টির নারী নেতা নির্বাচিত হন। তবে সরাসরি ভােটে নারীরা নির্বাচিত না হওয়ার কারণে ভাদের ক্ষমতা প্রয়ােগের ক্ষেত্র সংকীর্ণ। তাছাড়া, নারী আসনের জন্য নির্দিষ্ট নির্বাচিত এলাকায় নির্বাচিত সাংসদও থাকেন।
সংখ্যায় কম হলেও ১৯৭৩ সাল থেকে এ বং সাধারণ আসনে নারীর প্রতিষন্দ্বিতা করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন। সাধারণ আসনে এ প্রতিদবন্দ্িতা দিন দিন বাড়ছে। এটি একটি ইতিবাচক দিক। পাকিস্তান আমলের চেয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এবং আশির দশকের চাইতে নকইয়ের বশকে নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বেশি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে কয়েকজন নারী সরাসরি ভােটে নির্বাচিত হয়েছেন। এরা হলেন শেখ হাসিনা, রওশন এরশাদ, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বেগম মতিয়া চৌধুরী, এডভােকেট সাহারা খাতুন, সানজিদা বেগম, সেগুফতী ইয়াসমিন এমিলি প্রমুখ।
নারী উন্নয়ন ও এজেন্ডা বাস্তবায়ন : নারী নেতৃত্ব বাংলাদেশের নারী উন্নয়নের এজেন্ডা বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষভাবে এমিকা রাখে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ইশতাহারে যেসব বিষয় প্রাধান্য পায় তা হলাে :
নারী শিক্ষার উপর জোর দেওয়া। ২. সরকারি চাকরিতে নারীদের অংশগ্রহণ ও সুযােগ সুবিধা বৃদ্ধি ।। ৩, নির্যাতিত মহিলাদের আবাসন ও যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধি। ৪. নির্যাতিত মহিলাদের জন্য আইনগত সুবিধা প্রদান করে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান। ৫. দুঃস্থ মহিলাদের জন্য ভাতা ও আর্থিক সুবিধা প্রদান। ৬. নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা ইত্যাদি। সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশের প্রধান দলগুলাে এসব সুবিধার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং এসব সুযোগ সুবিধা বাস্তবায়ন করতে নারী নেতৃত্ব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
পরিশেষে বলা যায়, স্বাধীনতার পরবর্তীকালে বাংলাদেশের দল ব্যবস্থায় নারী নেতৃত্বের পরিধি দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশের পর বর্তমান সময় পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের পরিস্থিতি নিয়ে এটা প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের রাজনৈতিক উন্নয়নের গতিশীলতা বৃদ্ধিতে নারীসমাজের সম্পাক্ততার বিকল্প নেই। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে তাই দরকার প্রতিটি রাজনৈতিক দলে না তে হলে তাই দরকার রাজনৈতিক দলে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি।