বাংলা নববর্ষ রচনার কবিতা, নববর্ষের কবিতা – আসছে বাংলা নববর্ষ। নববর্ষের নাম শুনলেই চোখে ভাসে লাল- সাদা রং, ফুলের মালা অথবা গাজরা, বৈশাখী মেলা আর নাগরদোলার ছবি। হবেই না বা কেন? আবহমান কাল ধরে বাঙালির ঐতিহ্য বহন করে আসছে বাংলা নববর্ষ। মূলত সম্রাট আকবরের সময় থেকে বাংলা সাল গণণা শুরু হয়। ফসল কাটা আর মাড়াইয়ের সুবিধার জন্য ঋতু বিবেচনায় এই বাংলা নববর্ষ গণণা শুরু হয়। বৈশাখ মাসের প্রথম দিন বাংলা নববর্ষ পালন করা হয়।
নববর্ষের আয়োজন / বাংলা নববর্ষ রচনা
নতুন বছরে আচার- অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে না তা কি হয়? সেই আয়োজনেও রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। মূলত বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরা আর এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এসব আয়োজনের উদ্দেশ্য।
এখনো অঞ্চলভেদে নানা অনুষ্ঠান হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো বৈশাখী মেলা। যা মোটামুটি সারা দেশে সব জায়গায় বসে। কোনো কোনো এলাকায় তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত বৈশাখী মেলা চলে। এছাড়া রয়েছে পুণ্যাহ, হালখাতা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, কবিগান, কীর্তন, যাত্রা, বৈশাখী মেলা, আবৃত্তি-নাচ-গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।
এছাড়া আয়োজন করা হয় নৌকাবাইচ, হাডুডু, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগ লড়াই, ম্যাজিক শো ইত্যাদি। হালখাতা অনুষ্ঠানের জন্য দোকান নতুনভাবে সাজানো হয়। দোকানগুলোতে মিষ্টিমুখ করানোসহ গ্রাহকদের জন্য নতুন হিসাবের খাতা খোলা হয়। এখন ছোট ছোট শহর আর মফস্বল এলাকাগুলোতে এই হালখাতার প্রচলন বেশি।
ঢাকা শহরে নববর্ষ পালন
রাজধানী ঢাকা নগরীতে ভোর হবার সাথে সাথেই পয়েলা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে যায়। নগরীর বটতলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি আর ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর প্রাঙ্গণে জনসাধারণের উপস্থিতিতে বেশ বড় করেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ছায়ানট সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এছাড়া এলাকাভেদে বৈশাখের মেলা বসে। নাচ, গান, আবৃত্তি আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
নববর্ষের ভোজন
নববর্ষের খাওয়া দাওয়া মানেই পাতে পান্তা- ইলিশ থাকা চাই। এছাড়া ভর্তা, ভাত, বেগুন ভাজা, ভুনা খিচুড়িও নববর্ষের পদ হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। এদিন বাঙালিয়ানার অংশ হিসেবে মাটির থালায় খাওয়ার চল রয়েছে।
এদিন দেশে- বিদেশের সকল বাঙালি এক হয়ে ঐতিহ্যবাহী বাংলা বর্ষবরণ উৎসব পালন করে। এই একটি উৎসব এখনো বাঙালির ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে।
নববর্ষের কবিতা
বছর ঘুরে এলো বাংলা নববর্ষ
বছরের প্রথম দিন
চারদিক রঙ্গিন।
ঐ যে দেখো নাগরদোলা
দিকে দিকে মানুষের মেলা
মনের ক্লান্তি আর দ্বিধাগুলো মুছে ফেলে
এবার এক হবার পালা।
বৈশাখে মেলা বসেছে
হচ্ছে খাওয়া দাওয়া
আমরা বাঙালি
পরিচিতি বহন করছে নববর্ষের হালখাতা।
এখনো বসে জারি সারি গানের আসর
যাত্রাপালা আর শোভাযাত্রার আয়োজন।
সবাই সেজেছে রঙ্গিন সাজে কারণ
আজ বাংলা নববর্ষ।
নববর্ষকে ঘিরে আরও অনেক গান, কবিতা রচিত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে এখনো তার ছাপ রয়েছে। পয়েলা বৈশাখের দিন এসো হে বৈশাখ এসো এসো গানের সাথেই এখনো পালন করার রীতি রয়েছে।
নববর্ষের জন্য ছোট কবিতা
১. পুরনো বছর হলো গত
নতুন বছর আসবে বলে
রাত পেরোলেই সবাই জানবে আজ
শুভ নববর্ষ।
২. ঝরা পাতা জানান দিচ্ছে
শেষ হচ্ছে বছর
আবহাওয়া বলে দিচ্ছে
বৈশাখ চলে এসেছে
শুরু হচ্ছে নতুন বছর।
৩. বৈশাখের দমকা হাওয়া
হঠাৎ ঝড়
কালবৈশাখীর তোড়ে ঝরে পড়া আম্র
আজ শুভ নববর্ষ।
৪. ছোট বেলা পেরিয়ে এসেছি অনেককাল
আজও পালন হয় বৈশাখ
তবুও কেন জানি বারবার মনে হয়
কিছু একটা নেই।
সময় বদলেছে আর বদলেছি আমিও
হয়তো আগের সেই আবেগ নেই।
নতুন বছরে নতুন আলো
সবার বর্ষ কাটুক ভালো।
৫. এখনো কি বৈশাখের ঝড়ে
কাঁচা আম ঝরে পড়ে?
বসন্ত বাতাসে কোকিলের কন্ঠের পরে
গরমকাল আসে গুমোট আবহাওয়া নিয়ে?
তবুও বৈশাখ সুন্দর
নববর্ষের শুভেচ্ছা সবাইকে।
৬. বর্ষবরণ সবার জন্য আনন্দের বার্তা বয়ে আনুক
জরা ক্লান্তি মুছে
নতুন করে বাঁচবো আমরা
একসাথে বাঙালি পরিচয়ে।
যদিও সময়ের সাথে সাথে অনেক বদল হয়েছে নববর্ষের আয়োজনে। তবে মূল ধারা একই আছে। এখনো বৈশাখে লাল আর সাদা রঙ্গের পোশাক প্রাধান্য পায়। ছেলেরা পাঞ্জাবি আর মেয়েরা শাড়ি পরে। মাথায় ফুল পরে। ছোট ছেলেমেয়েরা নতুন পোশাক পরে মেলায় আসে। সব বয়সী মানুষ নাগরদোলায় চড়ে। আনন্দ করে।
বর্ষবরণে আজও বাঙ্গালি তাদের সত্ত্বাকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা করছে। সেই সাথে নিজেদের অস্তিত্ব আর জাতিগত পরিচয় তুলে ধরছে বিশ্ববাসীর কাছে – বাংলা নববর্ষ রচনার কবিতা। আজ এই পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ