ধরি’ মোতিন একজন তরুন উদ্যোক্তা। সে চাচ্ছে বিদেশ থেকে কিছু পন্য নিয়ে এসে বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি করতে। কিন্তু সে জানেনা কিভাবে পন্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আজকে আমি সে বিষয়েই কিছু আলোচনার চেষ্টা করব। যাতে করে আপনি জানতে পারেন কি করে বিদেশ থেকে কোন পন্য আমদানি করে ব্যবসা শুরু করবেন।
প্রথমেই বলি পৃথিবীর যে কোন দেশ থেকে পন্য আমদানির পদ্ধতি প্রায় একই রকম। তো ধরে নেই, মোতিন চায়না থেকে কিছু ইলেক্ট্রনিক পন্য আমদানি করতে চায়। পন্য আমদানির শুরুতে মোতিনকে ‘আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের অধিদপ্তর’ থেকে একটি আমদানি লাইসেন্স করতে হবে।
আমদানি লাইসেন্স করতে আপনার যে সমস্ত কাগজপত্র লাগবেঃ-
১। আমদানি কারকের জাতীয় পরিচয় পত্র
২। আমদানি কারকের ৩ কপি ছবি
৩। ট্রেড লাইসেন্স
৪। ব্যাংক সলভেন্সী সার্টিফিকেট
৪। ট্রেড এ্যাসোসিয়েশন সনদ
৫। আমদানিকারকের TIN সার্টিফিকেট
আমদানি লাইসেন্স করার পর এবার আপনি; যে দেশ থেকে পন্য আনবেন সেই দেশের একজন উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারীর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেকেই alibaba.com থেকে পন্যের বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করে থাকে । এছাড়া আরও অনেক উপায়ে আপনি আপনার পছন্দের বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তবে বর্তমানে সবাই ইন্টারনেট ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক ব্যবসার ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ ও বাকি কাজগুলো করে থাকে।
তো আপনি যখন আপনার পছন্দের সরবরাহকারীকে পেয়ে যাবেন তখন উক্ত সরবরাহকারীকে আপনার প্রয়োজন অসুসারে পন্যের ধরন, কালার, সংখ্যা ইত্যাদি বিষয় গুলোর তালিকা পাঠাবেন একই সাথে পন্যের মূল্য ঠিক করে নিবেন। সরবরাহকারীর সাথে সবকিছু ঠিক হয়ে গেলে এবার সরবরাহকারী আপনাকে একটি (PI-‘প্রফরমা ইনভয়েস’) পাঠাবে। উক্ত (PI -‘প্রফরমা ইনভয়েস’)-এ পন্যের সমস্ত তথ্য থাকবে এবং উক্ত (PI – ‘প্রফরমা ইনভয়েস’) অবশ্যই বিক্রেতা বা প্রতিষ্টানের পেডে হতে হবে ও তাতে প্রতিষ্ঠানের বা বিক্রেতার শীল সহ সাক্ষর থাকবে। উক্ত (pi- ‘প্রফরমা ইনভয়েস’) আপনাকে ই-মেইল করে পাঠালেও হবে।
এবার আপনাকে উক্ত সরবরাহকারীর উদ্দেশ্যে LC ওপেন করতে হবে LC আপনাকে ব্যাংক থেকে ওপেন করতে হবে। LC করতে হলে আপনাকে (PI -‘প্রফরমা ইনভয়েস’)-এর কপি, আমদানি লাইসেন্সর কপি, ট্রেড লাইসেন্সের কপি, পন্যের মূল্য ইত্যাদি নিয়ে একটি ব্যাংক-এ যেতে হবে। সবকিছু ঠিক দেখলে ব্যাংক LC ওপেন করে দিবে। এখানে বলে রাখা ভাল যে সরবরাহকারী যদি আপনার কাছ থেকে LC দাবি না করে তবে আপনাকে LC দেয়া লাগবে না। আসলে LC হল সরবরাহকারীর টাকা পাওয়ার নিশ্চিয়তার কপি। অর্থাৎ মনে করুন সরবরাহকারীর পন্য হাতে পেয়ে যদি আপনি টাকা না দেন তবে সরবরাহকারী কি করবে। আবার আপনিও পন্য পেয়ে টাকা সরবরাহকারীকে দিলেন না। তাই ব্যাংক দুই পক্ষের মধ্যস্থতাকারির ভূমিকায় কাজ করে। যাই হোক LC-এর কাগজ এবার আপনাকে সরবরাহকারীর নিকট পাঠাতে হবে। সরবরাহকারী LC-র কাগজ পাওয়ার পরে আপনার পন্য উৎপাদন এবং সরবরাহের ব্যবস্থা করবে। এবার সরবরাহকারী আপনার চাহিদা মত পন্যগুলো জাহাজে বা বিমানে লোড করবে। সাধারনত সবাই জাহাজে করেই পন্য আনে। জাহাজেবা বিমানে পন্য লোড করার পরে জাহাজ কর্তৃপক্ষ সরবরাহকারীকে Bill of Loading প্রদান করবে। এবার সরবরাহকারী Bill of Loading -এর একটি কপি আপনাকে ই-মেইল করবে বা যে কোন মাধ্যমে মাধ্যমে আপনার কাছে পাঠাবে। এতে করে আপনি নিশ্চিত হলেন যে আপনার পন্য জাহাজে বা বিমানে সত্যিই উঠানো হয়েছে। উক্ত Bill of Loading -এ পন্য কত তারিখে বাংলাদেশে আসতে পারে তার একটি আনুমানিক তারিখ থাকবে। এবার নির্ধারিত তারিখে আপনি পোর্টে গিয়ে C&F এজেন্টের সহযোগিতায় আপনার পন্য খালাস করিয়ে আনবেন। এখানে আপনি C&F এজেন্টের সহযোগিতা না নিতে চাইলে আপনি একাও কাজগুলো করতে পারেন। তবে কাস্টমস-এর কাজগুলো কঠিন বিধায় সবাই C&F-এর এজেন্টদের সহযোগীতা নিয়ে থাকে। তারা আপনার পক্ষ হয়ে কাস্টমস–এর সমস্ত কাজ করে দিবে। কাস্টমসের কাজ শেষ করার পর এবার আপনি আপনার পন্য বন্দর থেকে বের করার অনুমতি পাবেন। তখন আপনি সে পন্য দিয়ে আপনার কাক্ষিত মনের ইচ্ছা পূরন করতে পারবেন। ধন্যবাদ। আশা করি আপনার বিদেশ থেকে কোন পন্য আনতে আর সমস্যা হবে না । যদি এই লিখার মাধ্যমে আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে শেয়ার করে আপনার পরিচিতজনদের জানিয়ে দিন যেন তারাও জানতে পারে । ধন্যবাদ আবারো।