সারাবিশ্বে অসংখ্য ধনী ব্যক্তি রয়েছেন, এর মধ্যে যাদের সম্পদের মূল্য ১০০ কোটি ডলারের বেশি, তাদের আমরা বিলিওনিয়ার হিসেবে চিনি। ফোর্বসের হিসেব মতে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এমন ব্যক্তির সংখ্যা ২ হাজার ৬৪০ জন। তাদের সর্বনিম্ন সম্পদের পরিমান এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় দশ হাজার তিনশো ষোলো কোটি টাকার সমান।
স্বাভাবিকভাবেই যে কারো মনে প্রশ্ন আসতে পারে, বিলিওনিয়াররা এতো টাকা কোথায় রাখেন? কারন, একজন সাধারণ মানুষ সহজেই তাদের অর্থ ব্যাংকে জমা রাখতে পারলেও, একজন বিলিওনিয়ারের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয়। আবার এতো টাকা বিলিওনিয়াররা নিজের কাছেও ফেলে রাখেন না। কারন একসাথে এতো টাকা এক জায়গায় রাখাটা কখনোই নিরাপদ নয়।
তাই বিলিওনিয়াররা তাদের অর্জিত সম্পদ বিভিন্ন ভাবে সংরক্ষণ করে রাখেন। এক্ষেত্রে তারা সাধারণত দুটো জিনিস মাথায় রাখেন। এক হচ্ছে অর্জিত সম্পদ যেনো কোনো ভাবেই হ্রাস না পায়। দ্বিতীয়ত সেই সম্পদ কিভাবে আরো বাড়ানো যায়। যার কারনে তারা সবসময় লাভজনক উপায়ে নিজেদের বিশাল অংকের অর্থ সংরক্ষণ করে থাকেন।
এজন্য অধিকাংশ বিলিওনিয়ারই নিজেদের সম্পদ সরাসরি ব্যবস্থাপনা করেন না। বরং লাভজনকভাবে সম্পদ সংরক্ষণ করার জন্য তারা আর্থিক উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে থাকেন। নিজেদের অর্থ নিরাপদে সংরক্ষণ এবং আরো বৃদ্ধি করার জন্য তারা বিভিন্ন খাতে সেই অর্থ সংরক্ষণ করেন। কারন এতো টাকা এক জায়গায় সংরক্ষণ করা অথবা বিনিয়োগ করা কখনোই নিরাপদ নয়।
অর্থ সম্পদ সংরক্ষণে বিলিওনিয়ারদের প্রথম পছন্দ সিকিউরিটিজ ক্রয়। এটি তাদের অর্থ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান উৎস। সিকিউরিটিজ বলতে বন্ড, পুঁজিবাজার থেকে কেনা শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ ইত্যাদিকে বুঝানো হয়। বেশির ভাগ ধনীরাই তাদের সম্পদের উল্লেখযোগ্য অংশ এই খাতে বিনিয়োগ করে থাকেন। আর্থিক বিনিয়োগের এই উপকরন গুলো কেনাবেচার মাধ্যমে তারা আর্থিক ভাবে লাভবানও হয়ে থাকেন।
প্রায় সময় আমরা বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় যে উঠানামা দেখতে পাই- তা মূলত এসব সিকিউরিটিজ এর মূল্য হ্রাস বা বৃদ্ধির কারনেই হয়ে থাকে। সিকিউরিটিজের পর সম্পদ সংরক্ষণে শীর্ষ ধনীদের অন্যতম প্রিয় খাত হচ্ছে রিয়েল স্টেট। কারন এটি ধনীদের সম্পদ সংরক্ষণের অন্যতম নিরাপদ উৎস।
আবার এই খাতে বিনিয়োগ করলে ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদে সহজেই বিশাল পরিমানে প্যাসিভ ইনকাম করা সম্ভব। অন্যদিকে এই খাতে অর্থ বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীরা অনেক সময় সরকারের নিকট থেকে কর মওকুফ পেয়ে থাকেন, যা তাদের কম খরচে সম্পদ সংরক্ষণে সাহায্য করে।
নিরাপদে অর্থ সংরক্ষণের অন্যতম উৎস হলো ব্যাংক। ফলে ধনীদের কাছে এটিও বেশ জনপ্রিয়। কারন ব্যাংকের কাছে আমানত হিসেবে অর্থ রাখার ক্ষেত্রে ব্যাংক তাদেরকে সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা প্রধান করে থাকে। আবার ব্যাংকে আমানত হিসেবে জমা রাখা অর্থের বিপরীতে ব্যাংক উচ্চ হারে যেই সুদ বা মুনাফা প্রদান করে, সেটাও তাদের আয়ের অন্যতম উৎস।
যার কারনে বেশিরভাগ সময়ই শীর্ষ ধনীরা নিজেদের সম্পদের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যাংকে আমানত হিসেবে জমা করে রাখেন। বাকি সবার মত বিলিওনিয়ারদেরও নগদ অর্থের প্রয়োজন হয়। কারন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সুবিধা কাজে লাগাতে চান তারা।
যার জন্য তাদের নগদ অর্থ বা সহজেই নগদে পরিবর্তন করা যায়- এমন তরল সম্পদের প্রয়োজন হয়। আবার ব্যবসায়িক প্রয়োজন ছাড়াও ব্যাক্তিগত জীবনযাপনের জন্যও তাদের অনেক অর্থের প্রয়োজন পড়ে।
তবে বর্তমান সময়ে নগদ অর্থ বেশি রাখা তাদের জন্য খানিকটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কারন অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতির কারনে নগদ অর্থের মান দ্রুতই কমে যাচ্ছে। ফলে ধনীরা এই মূহুর্তে নিজেদের কাছে কম নগদ অর্থ সংরক্ষণ করছেন।
অতিধনীদের সম্পদ রক্ষার আরেকটি কৌশল কাঁচামাল ও নিত্যপন্যে বিনিয়োগ। এইখাতে মুদ্রাস্ফীতিও অস্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতির ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। মুদ্রাস্ফীতির কারনে আর্থিক বাজার যেকোনো সময় অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। এসময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। ফলে মুদ্রাস্ফীতি হলেও তাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমান খুবই কম হয়। আবার নিত্যপন্য ও কাঁচামালের উপর সার্বিক অর্থনীতি ও জনসাধারণ নির্ভরশীল হওয়ায় সহজে এগুলোর চাহিদাও কমে না।
যার কারনে, শীর্ষ ধনীরা এজেন্টের মাধ্যমে শিল্পে ব্যবহৃত মূল্যবান ধাতু, প্রাকৃতিক গ্যাস, এবং কৃষিজাত বিভিন্ন পন্যে বিনিয়োগ করে থাকেন। শীর্ষ ধনীদের লাভজনক উপায়ে সম্পদ সংরক্ষণের আরেকটি খাত বৈদেশিক মুদ্রায় বিনিয়োগ। যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে সেই দেশের মুদ্রার মান বাড়ে কমে।
বিনিময় হারের এই হ্রাস বৃদ্ধি থেকে লাভ করেন তারা। যার কারনে অনেক সময়ই ধনীদের বিভিন্ন দেশের মুদ্রা কিনে রাখতে দেখা যায়। মুদ্রা ছাড়াও মুদ্রা-নির্ভর সম্পদে বিনিয়োগ করেন তারা। ফলে কোনো একটি বৈদেশিক মুদ্রার মান কমলেও, অন্য মুদ্রার শক্তিশালী অবস্থান তাদের লোকসানের ঝুঁকি কমায়।
বর্তমানে অনেক ধনী ব্যাক্তিই মুদ্রার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রায় বিনিয়োগ করে থাকেন। কারন এইখাতে বিনিয়োগ করে প্রচুর পরিমানে মুনাফা অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ঝুঁকির পরিমান অনেক বেশি থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন গোপন বিনিয়োগ, ঋণদান সহ বিভিন্ন রকম খাতে বিনিয়োগ করে বিলিওনিয়াররা তাদের সম্পদ সংরক্ষণ করে রাখেন।