এক বাড়িতে পোষা কুকুরেরা বাস করত। বাড়ির মালিক কুকুরদের পোষতো এবং থাকতে দিতো।
একদিন কুকুর গুলোর সাথে কয়েকটা নেকড়ের দেখা হল। নেকরা কুকুরদের ডেকে বলল, তোমরা তো সব দিক থেকেই আমাদের সাথে একই, কোথাও কোন তফাৎ নেই। তফাৎ শুধু একটাই আর সেটা হল চিন্তাভাবনার। কুকুরেরা বলল সেটা কিরকম? নেকড়েরা বলল আমরা চাই স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকতে।
আর তোমরা তো মানুষের চাকর হয়ে থাকতেই বেশী ভালোবাসো। তোমরা যদি আমাদের মত স্বাধীন থাকতে চাইতে তাহলে মানুষেরা তোমাদের গলায় লোহার শিকল পড়াতে পারতো না। তোমাদের ওপর জোর খাটাতে পারতো না। বাস মাত্র কয়েক বেলা খাবারের জন্য তোমরা রাত জেগে মানুষের গরু ছাগল হাঁস মুরগি ঘর বাড়ি পাহারা দাও। এতে কি তোমরা অপমান বোধ করো না! আরো দেখো মানুষেরা ভালো খাবার খেয়ে তোমাদের খাওয়ায় এঁটোকাটা। আর তোমরা তাই আনন্দ করে খাও। এসব অপমান তোমাদের কি গায়ে লাগেনা! আর আমরা তো সেটা কখনোই মেনে নিতে পারব না।
আমাদের সঙ্গে এখানেই তোমাদের অমিল। মানুষের এত অপমান তোমার সহ্য করো কেন? শুনে কুকুরেরা চিন্তায় পড়ে গেল। তারা ভাবলো ঠিকই তো। আমরা কেন মানুষদের এই অপমান সহ্য করব। পরে তারা বলল, তাইতো ভাই, তোমরা তো ঠিক কথাই বলেছ। এই অপমান আর সহ্য করা যায় না। তবে আমাদেরকে বলে দাও এখন আমাদের কি করা উচিত? নেকড়েগুলো বলল, যারা এমন অপমান করে তাদের জিনিস চুরি করে অপমানের শোধ তুলতে হবে। কুকুরেরা তখন জানতে চাইলো, তা কিভাবে করা যায়? নেকড়েরা বলল তোমরা আমাদের ভাইয়ের মতো। তোমাদের অপমান মানে আমাদের অপমান। যদি তোমরা আমাদেরকে সাহায্য করো তবে আমরাই তোমাদের হয়ে প্রতিশোধ নিবো।
কাজটা হলো, যে বাড়ির ছাগল ভেড়া তোমরা পাহারা দাও সে গুলোকে আমাদের হাতে তুলে দাও। তারপর সেগুলো কে আমরা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেব। নেকড়েদের বুদ্ধি কুকুরদের ভালো লাগলো। তারা খুব সহজেই তাদের পরামর্শ মেনে নিল। কুকুরেরা নেকড়েদের বলল, আজ তোমরা আমাদের বাড়ির আশেপাশেই থেকো। বাড়ির লোকজন ঘুমিয়ে পড়লে আমরা তোমাদের পথ ছেড়ে দেব। আর সেই সময় তোমরা ভেতরে ঢুকে পড়বে।
সেই রাতে কুকুরদের কথা মতোই কাজ হল। অনেক রাতে তাদের বাড়ির মালিক এবং লোকজন ঘুমিয়ে পড়ল। কুকুরেরা নেকড়ের দলটিকে তাদের বাড়িতে প্রবেশ করালো। কিন্তু নেকড়েদের পরিকল্পনা ছিল একটু ভিন্ন। তারা বাড়িতে প্রবেশ করেই সর্বপ্রথম আক্রমণ করলো কুকুরদের ওপরেই। কুকুরেরা কিছুই বুঝে উঠতে পারল না। তারা বলল আমরা তো তোমাদেরই বন্ধু, কেন আমাদের ওপর আক্রমণ করছো।
নেকড়ে গুলো বলল যে কুকুর এতদিন তার মালিকের আদর-যত্ন পাওয়ার পরেও তার বিশ্বাস রক্ষা করতে পারেনি তাদেরকে আমরা বিশ্বাস করি কী করে। এই বলে নেকড়েগুলো সবগুলো কুকুরকেই মেরে ফেলল। তারপর বাড়ির অন্যান্য সকল গরু ছাগল হাঁস-মুরগির ওপর আক্রমণ করল এবং তাদেরকে তাড়িয়ে জঙ্গলের দিকে নিয়ে গেল।