আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম দেশের নাম কি তাহলে আপনি হয়ত এক নিশ্বাসে বলে দিতে পারবেন। জ্বি হ্যাঁ দেশটির নাম ভ্যাটিক্যান সিটি। ধর্মীয়, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভ্যাটিক্যান সিটি বেশ সমৃদ্ধিশালী।
ভ্যাটিকান সিটি – নামটা শুনলেই প্রথমে যে কথাটা মাথায় আসে তা হল এটা পোপের দেশ, পোপের শহর।
ইউরোপ মহাদেশে ইতালির রোম শহরে ভ্যাটিকান সিটি অবস্থিত। ১৯২৯ সালে ভ্যাটিকান সিটি স্বাধীনতা লাভ করেছিল।
উত্তর-পশ্চিম রোমের ভ্যাটিকান পাহাড়ের উপর একটি ত্রিভুজাকৃতি এলাকায়, তিবের নদীর ঠিক পশ্চিমে, ভ্যাটিকান শহর অবস্থিত। দক্ষিণ-পশ্চিমের পিয়াৎসা সান পিয়েত্রো বা সেন্ট পিটার চত্বর বাদে বাকি সবদিকে ভ্যাটিকান শহর মধ্যযুগ ও রেনেসাঁর সময়ে নির্মিত প্রাচীর দিয়ে রোম শহর থেকে বিচ্ছিন্ন।
সম্পূর্ণভাবে রোমের অভ্যন্তরে অবস্থিত।
ভ্যাটিকান সিটি বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র, যার আয়তন ১১০ একর বা ০.৪৪ বর্গ কি.মি। পুরো দেশটি ঘুরে দেখতে সময় লাগবে আপনার ঘণ্টাখানেকর মতো।
এর জনসংখ্যা ২০১৭ সাল পর্যন্ত আনুমানিক ১০০০ জন। দেশটির সাক্ষরতার হার ৯৯.২%। এই দেশে সাধারণত ল্যাটিন এবং ইতালিয়ান ভাষায় বেশি ব্যবহৃত হয়। তবে সরকারি ভাবে কোনো ভাষা সেখানে নেই। এই দেশের মুদ্রা ইউরো।
ভ্যাটিকান সিটি ব্যাঙ্কে দুনিয়ার তাবৎ গির্জার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রয়েছে বলেই শোনা যায়। শুধুই কি তাই, পৃথিবীর সবচেয়ে সংরক্ষিত আর্কাইভটিও তো এখানেই।
হাজার বছরের পুরোনো দলিল, বই, ছাপা না হওয়া বাইবেল, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির হাতে লেখা ডায়েরি, গ্যালিলিও এর বই সবই রয়েছে এই সংগ্রশালায়।
ভ্যাটিকান যাদুঘরগুলি পৃথিবীর বৃহত্তম জাদুঘরের সংলগ্ন 1400 টি কক্ষ রয়েছে। ভ্যাটিকান জাদুঘর কমপ্লেক্সে জাদুঘর, আর্ট গ্যালারির 3,000 বছর, সিস্তাইন চ্যাপেল এবং পোপ্যাল প্রাসাদের কিছু অংশ রয়েছে। রফেলের কাজকর্মের একটি রুমসহ শিল্পের একটি বিস্ময়কর পরিমাণ রয়েছে।
ভ্যাটিকান সিটিতে কোন হাসপাতাল নেই। সুতরাং এখানে জন্মসূত্রে নাগরিক হওয়ারও সুযোগ নেই। যদিও স্বল্পমেয়াদী নাগরিকত্ব দেওয়া হয় কিন্তু সেটা “জস অফিসি” নামক বিশেষ কোটার আওতায় শুধুমাত্র যারা সেখানে কাজ করবে তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে নাগরিকত্বও শেষ হয়ে যাবে। তাই বলা যায় শুধুমাত্র জন্ম নিলেই ভ্যাটিকান সিটির নাগতিকত্ব পাওয়া যায় না। নাগরিকত্ব পেতে গেলে সেখানকার লোকদের কাজের সাথে যুক্ত থাকতে হয়।
মাত্র ১.০৫ কিমি দৈর্ঘ্য এবং ০.৮৫ কিমি প্রস্থ বিশিষ্ট এই দেশটিতে কোনো হাইওয়ে কিংবা এয়ারপোর্ট নেই। হেঁটে চলাফেরা করাটাই উত্তম। দেশের পশ্চিম প্রান্তে ভ্যাটিকান সিটি হেলিপোর্ট রয়েছে। যা কিছু বিশেষ কাজে ব্যবহার করা হয়। এই দেশের সবচেয়ে কাছে এয়ারপোর্ট লিওনার্দো দা ভিন্সি ফিউমিচিনো রয়েছে যা ইতালির রাজধানী রোম শহরে অবস্থিত। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রেলপথ রয়েছে ভ্যাটিকান সিটিতে। সেগুলি সাধারণত জিনিসপত্র নিয়ে আসার জন্য ব্যবহার করা হয়।
ভ্যাটিকান শহরের রাজনীতি একটি পরম ধর্মীয় রাজতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। পোপ হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। রাষ্ট্রের নির্বাহী কর্মকাণ্ড, আইন প্রণয়ন ও বিচার ব্যবস্থা সমস্ত কিছু পোপের অধীনে পরিচালিত হয়।
রাজার পুরো ক্ষমতা আছে দেশ পরিচালনা করার। আর এই রাজা আর কেউ না, ইনি হলেন পোপ নিজেই। এজন্য ভ্যাটিকানের রাজার কথা কম শোনা যায়। আর এই রাজার জন্যই ভ্যাটিকান সিটি ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিতে পারে না।কারণ শুধু গণতান্ত্রিক দেশই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে পারে।মজার বিষয় হচ্ছে জাতিসংঘ দ্য হোলি সি’কে কোম্পানি সদস্য হিসেবে নিলেও ভ্যাটিকান দেশকে এর সদস্যপদ দেয় নি।আর এই দ্য হোলি সি ভ্যাটিকান এর জনগণকে পাসপোর্ট দেয়। এটি অন্য সব দেশ থেকে আলাদা। কারণ শুধু মাত্র ভ্যাটিকানেই পাসপোর্ট দেয়ার দায়িত্ব দেশের উপর না দিয়ে একটি কোম্পানির উপর দেয়া।
ভ্যাটিকান সিটিতে পুরোপুরি রোমের মতো একই ধরনের জলবায়ু বিদ্যমান: নাতিশীতোষ্ণ ও মৃদু। নগর রাষ্ট্রটির শীতকাল (সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য মে) আর্দ্র এবং গ্রীষ্মকাল (মে থেকে সেপ্টেম্বর) উষ্ণ ও শুষ্ক।
ভ্যাটিকান সিটির নিজস্ব আর্মি রয়েছে ।তাঁদের অফিশিয়াল নাম ‘পটেনশিয়াল সুইস আর্মি’। সদস্য সংখ্যা মাত্র ১৩৫। পোশাকটা যথেষ্ট ভুতুড়ে হলেও এই বাহিনীতে যোগ দিতে যথেষ্ট নিয়ম কানুন মানতে হয়। বয়স সীমা ১৯ থেকে ৩০। প্রত্যেকের উচ্চতা হতে হয় কমপক্ষে পাঁচ ফিট সাড়ে আট ইঞ্চি। ক্যাথলিক হতে হয়, এর চেয়েও বড় ব্যাপার এদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ। ৫০০-এর বেশি বছর ধরে এই বাহিনী পোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে।
জনসংখ্যার তুলনায় এখানে টুরিস্ট বেশি আসে। জনসংখ্যা যেখানে বর্তমানে ১০০০-এর আশেপাশে সেখান প্রতিবছর ভ্রমণ করতে আসে সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন মানুষ। কারণ, ধর্মীয়, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভ্যাটিক্যান বেশ সমৃদ্ধশালী।
২4 ফেব্রুয়ারি ২014 তারিখে ভ্যাটিকান ঘোষণা করে যে এটি অর্থনীতির জন্য একটি সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করে, হোলি সি এবং ভ্যাটিকান সিটির সমস্ত অর্থনৈতিক, আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য দায়ী, কার্ডিনাল জর্জ পেলের নেতৃত্বে। পোপ ফ্রান্সিস কোন নিরীক্ষক-জেনারেলকে যে কোনও সময়ে যেকোনো সংস্থার র্যান্ডম অডিট করার জন্যও নিযুক্ত করেছেন, এবং আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং প্রথাগুলির সাথে সম্মতি নিশ্চিত করার জন্য ভ্যাটিকানের 19,000 অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করার জন্য একটি মার্কিন আর্থিক পরিষেবা সংস্থা নিযুক্ত করেছেন। পোর্টিফাইং এও আদেশ দেন যে, অ্যাপোস্টোলিক দেখুন এর বংশধরদের প্রশাসন ভ্যাটিকানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হতে পারে, বিশ্বব্যাপী অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো দায়িত্বসমূহ।ভ্যাটিকান সিটির ভূমিপ্রকৃতি মৌলিকভাবে শহুরে এবং ভূখণ্ডের কোন অংশই উল্লেখযোগ্যভাবে কৃষি বা প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের জন্য সংরক্ষিত নয়। নগর রাষ্ট্রটির সীমিত অঞ্চলের কারণে একটি ভালো ভূমি অর্থনীতি বিদ্যমান।
ভ্যাটিকানে গেলে আপনি যেমন তেমন পোশাক পরিধান করতে পারবেন না। বিশেষ করে হাফ প্যান্ট বা শর্ট স্কার্টে তাদের বিধিনিষেধ আছে।
ভ্যাটিকান সিটি সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম দেশ হলেও সেখানকার মানুষরা খুবই ফুটবল প্রেমী হয়। তাদের নিজস্ব ন্যাশনাল ফুটবল টীম রয়েছে। প্রত্যেক বছর সেখানে ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ হয়।
ধন্যবাদ!!