বয়ঃসন্ধিকাল আসলেই ছেলে ও মেয়েদের একটাই সমস্যা- ব্রণ। ব্রণ যেন তাদের চিরশত্রু। ব্রণ সরানোর চেষ্টায় তারা জনম জনম কাটিয়ে দেয় কিন্তু পরবর্তীতে দাগ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। অতঃপর দাগের ঝামেলায় পরতে হয়।
এভাবে সেভাবে, ড্রেসিং টেবিলে ক্রিমের ভান্ডার বসিয়ে, হাত দিয়ে স্ক্র্যাচ করে ব্রণ তোলার প্রতিযোগিতা লেগেই আছে৷ এ অভিজ্ঞতায় খুব কম মানুষই রয়েছেন যারা সফল হয়েছেন। ব্রণ দূর করার এই নির্ঘুম চেষ্টায় যারা ব্যার্থ, তাদেরকে নিয়েই আজ ব্রণ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।
ব্রণ কি?
লালচে ত্বক, প্যাপুল, পিম্পল, নডিউল, তৈলাক্ত ত্বক, ক্ষতচিহ্ন এসবকিছুকে একসাথে ব্রণ বলা যায়। ব্রণ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় থাকতে পারে তবে এটিকে বেশিরভাগ সময়ই মুখে ভাসতে দেখা যায়। ব্রণ একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগবিশেষ। ব্রণে আক্রান্ত ত্বক বাহির থেকে লালচে বর্ণ ধারণ করে। এর ভিতরে মাঝেমাঝে পুঁজ থাকে। সাধারণ ভাবে না চুলকালেও মাঝেমাঝে এটি প্রচুর বিরক্তিকর কারণ হয়ে দাড়ায়।
ব্রণ কেন হয়?
ব্রণ হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। ব্রণ অনেক কারনেই হতে পারে। সাধারণভাবে বলা যায় এটি হরমোন পরিবর্তনের কারনে হয়ে থাকে। এছাড়াও-
১। রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে ব্রণ হয়ে থাকে। বর্তমানে রাতে ঘুমানোর সময় মোবাইল টেপা একধরনের ফ্যাশন হয়ে যাচ্ছে। হয় মোবাইলে গান শোনা, মুভি দেখা অথবা চ্যাটিং করা। ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইলের ভেতর গুজে থাকা। ফলে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মুখের উপর তেলের হালকা আস্তরণ পরে যা ক্ষুদ্র ব্রণের জন্ম দেয়।
২। শারিরীক অবস্থা যদি ঠিক না থাকে তবে ব্রণ হতে পারে। আমরা প্রতিনিয়তই আজেবাজে জিনিস খেয়ে চলেছি। এতে আমাদের পেটের অবস্থা খারাপ হয়। এখানে ক্লিয়ার করলে ভালো যে আজেবাজে খাবার বলতে অবশ্যই তৈলাক্ত খাবার বোঝানো হয়েছে। এসব তৈলাক্ত খাবার খেলে মাঝেমাঝে বদহজম হয়। আর এই বদহজম আমাদের মুখের চামড়ার আস্তরণের উপর খুব বড়সড় প্রভাব ফেলে যা ব্রন হওয়ার অন্যতম কারন।
৩। মুখ পরিষ্কার না রাখা। মুখ পানি দিয়ে পরিষ্কার না করা হলে মুখের উপর হালকা তেলের আবরণ যায় না। ফলে ব্রণ দেখা দেয়।
৪। আজেবাজে নাইট ক্রিম ব্যবহার করা। বাজারে কিংবা সস্তা ফার্মেসিতে দেখা যায় কম দামেই কিছু নাইট ক্রিম বিক্রি করছে। সেগুলো ব্রণ দূরীকরণে তো সাহায্য করেই না বরং ব্রণের পরিমাণ আরো বড়িয়ে দেয়।
৫।অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় থাকা৷ পারিবারিক কারনে ডিপ্রেশন ব্রণ উঠাতে বড় ভূমিকা পালন করে।
ব্রণ দূরীকরণের উপায়ঃ
ব্রণ দূর করার প্রচুর উপায় থাকলেও সাধারণ কিছু উপায় ঠিকমতো অবলম্বন করলেই ব্রণ পিছু হটা শুরু করে।
১।অধিক পরিমানে পানি পান করতে হবে।
২।তৈলাক্ত যুক্ত খাবার, ফাস্টফুড এড়িয়ে যেতে হবে।
৩।রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে হবে এবং সকাল সকাল উঠে ব্যায়াম করতে হবে।
৪।পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধৌত করতে হবে। বাহির থেকে আসলে ফেসওয়াস ব্যবহার করা যায়। তবে দিনে ২ বার ফেসওয়াস ব্যবহার করাটাই উত্তম।
৫।সস্তা নাইট ক্রিম পরিহার করতে হবে। তবে বিউটিসিয়ান অথবা ডাক্তার এর পরামর্শে কোনো নাইট ক্রিম ব্যবহার করা যায়।
৬।অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা চলবে না। যথাসম্ভব ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে হবে।
৭।ভিটামিন যুক্ত খাবার খেতে হবে। খাবারে শাকসবজি রাখার অভ্যাস গড়তে হবে। ভিটামিন সি ও ডি যুক্ত খাবার খেলে ব্রণ থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যেতে পারে।
ব্রণ দীর্ঘমেয়াদি। অনেকেই ব্রণের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন৷ বয়ঃসন্ধিকালে ব্রণ উঠবে স্বাভাবিক। এ নিয়ে মাথা ব্যাথা করার কিছুই নেই। তবে সবথেকে ভালো হবে যদি ব্রণে ভুলেও হাত না দেওয়া যায়। এতে ব্রণ কমে গেলে ত্বক সুরক্ষিত থাকবে। ধন্যবাদ