Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

ভাষণ: বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও নৈতিকতা একই সূত্রে গাঁথা

বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সর্ববৃহৎ গোষ্ঠী হলো ‘ কিশোর ও তরুণ’ সমাজ। আবার এদের মধ্যে অনেকেই স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এই ইন্টারনেটের যুগে অফলাইনে হাতে বই নিয়ে পড়ার মত লোকের সংখ্যা যৎসামান্য। আর বিশেষত, ভাষণ সংক্রান্ত কোনো বই সব লাইব্রেরিগুলোতে পাওয়া যায় না৷ এছাড়াও গ্রামের লাইব্রেরিতে ‘ ভাষণ‘ সংক্রান্ত বই পাওয়া যায় না বললেই চলে। আবার অনেকেই আছেন আগেরকার মত বই খুঁজে ভাষণ বা কোনো বের করতে ততটা উৎসুক নয় যতটা উৎসকু ইন্টারনেটের প্রতি। 

দেখা যায় বিজ্ঞান কোনো সেমিনারে বক্তৃতা প্রদানে অথবা স্কুল/কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও নৈতিকতার ওপর আলোচনা সভায় শিক্ষার্থীদের বা জনসাধারণেরও বক্তৃতা দিতে হয়; কিন্তু  ‘ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও নৈতিকতা একই সূত্রে গাঁথা ” এই শিরোনামে সাধারণত বাংলা পাঠ্য বইতে কিংবা ইন্টারনেটেও তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যায় না; তাই সার্বিক বিবেচনা করে লিখেই ফেললাম — ” বিজ্ঞান , প্রযুক্তি ও নৈতিকতা একই সূত্রে গাঁথা ”  এই শিরোনামে একটি ভাষণ৷ তো আর দেরি কেন, শুরু করি আমাদের সেই কাঙ্ক্ষিত ভাষণটি লেখা।

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও নৈতিকতা একই সূত্রে গাঁথা “ এখানে উপস্থিত মান্যবর সভা সভাপতি, অতিথিবৃন্দ, ও প্রিয় শ্রোতামণ্ডলী আপনাদের সবার প্রতি  আমার সালাম ও নমস্কার। আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে আপনাদের সকলকে জানাই একরাশ ভালোবাসা ও বিজয় মাসের শুভেচ্ছা।  

হে সুহৃদগণ,

বিজ্ঞান প্রকৃতির খুঁটিনাটি বিষয়ে বিশদ আলোচনা, পর্যালোচনা, তথ্য-উপাত্ত, তত্ত্ব সংগ্রহ করে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়। আমাদের চারপাশে থাকা উদ্ভিদ, বন্য ও পোষ্য প্রাণি এবং দূর মহাকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র, গ্রহ-গ্রহাণুপুঞ্জ, জোয়ার-ভাটা, মৃত্তিকা গভীরে থাকা খনিজ পদার্থ, সমুদ্রতল ইত্যাদি সম্পর্কে আমাদের পূর্ণ ও সঠিক ধারণা দেয় বিজ্ঞান।  পরদিকে বিজ্ঞানের তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নত ও সহজ করে গড়ে তুলে প্রযুক্তি। প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের মানব জীবন অনেকাংশেই হয়ে ওঠেছে সহজতর৷ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একটি ছাড়া অন্যটি অচল।

হে উপস্থিত বন্ধুগণ, 

  বিজ্ঞানের সাথে প্রযুক্তির যেমন সম্পৃক্ততা রয়েছে তেমনিভাবে প্রযুক্তির সাথেও নৈতিকতার সম্পর্ক রয়েছে। নৈতিকতা ছাড়া প্রযুক্তি ভয়াবহ বিষময়, অপূর্ণ। বিজ্ঞানের তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তি যেমন মানুষের জীবনযাত্রাকে করেছে সহজ তেমনি মানুষের নৈতিকার পদস্খলনের কারণে উক্ত প্রযুক্তিই মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে, মনকে করেছে জটিল।  এই আধুনিক বিশ্বের অন্যতম আবিস্কার সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে কে না অবগত আছেন। বিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।

অপরদিকে পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতিও বিনষ্ট করেছে প্রযুক্তি আর তা শুধু নৈতিকতার পদস্খলনের কারনেই৷ সোশ্যাল মিডিয়ার মত শক্তিশালী একটি প্লাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত ছড়ানো হচ্ছে  মিথ্যা তথ্য,গুজব রটনাসহ, অডিও-ভিডিও ফাঁসের মতন ভয়াবহ তথ্য৷ আর এ গুজবের ফলে ব্যক্তি, পরিবার ধ্বংস ছাড়াও গোটা একটি দেশের মধ্যে অরাজকতার সৃষ্টি করে। আপনাদের হয়তো কুমিল্লার রানুয়ার দিঘীর সেই কুরআন অবমাননার ঘটনার কথা মনে আছে; যা একদল কুচক্রীমহল উদ্দেশ্য প্রণোদিত হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে আবহমানকাল ধরে চলে আসা বন্ধুত্বপূর্ণ ও ঐক্য সম্পর্ক মুছে দিতে সোশ্যাল মিডিয়াকে ( ফেসবুক) ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গার পরিবেশ তৈরিতে তারা সফল হয়েছে। এতে অনেকেই আহত, নিহত হয়েছে এবং ঘর-বাড়িতে হামলা হয়েছে।

আর তার প্রধান কারণ নৈতিকতা বিবর্জিত আচরণ, মনোভাব৷  এছাড়াও নৈতিকতার মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সাইবার বুলিং, পাইরেসির  মত কর্মকাণ্ড অনলাইন-অফলাইন গণমাধ্যমগুলোতে নিউজ হচ্ছে।দিনকে দিন বেড়েই চলেছে সাইবার বুলিং।প্রোগ্রামিংকে কাজি লাগিয়ে আন-ইথিকেল হ্যাকিংয়ের স্বীকার হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ওয়েবসাইট। তাছাড়াও এই হ্যাকিংকে কাজে লাগিয়ে ক্রেডিট  কার্ডের পিন কোড হ্যাক করে নিমিষেই হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা৷ অচল করে দিচ্ছে বিভিন্ন ওয়েবসাইটগুলো।এছাড়াও ফিশিং সাইটকে কাজি লাগিয়ে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে টাকা চাওয়া হচ্ছে আর টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ব্যক্তিগত তথ্য ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়৷ আর এতে করে সুইসাইডকে বেছে নেয় বহু তরুণ-তরুণী!

আর এভাবে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের  ফলে প্রযুক্তি মানব সভ্যতার উন্নতি ও মানুষের জীবনযাত্রার মানকে সহজ করে গড়ে তোলার পরিবর্তে এক মহাসংকটে পতিত করেছে, প্রযুক্তিভিক্তিক মানব জীবন উন্নতির পথে অনৈতিকতা মূল অন্তরায়৷ আমাদের মানব জীবনকে উন্নত ও সহজ করে গড়ে তোলার জন্য যেমন প্রযুক্তির উৎকর্ষতার প্রয়োজন তেমনিভাবে নৈতিকতা ও মূল্যবোধেরও প্রয়োজন। তাই আমরা বলতেই পারি,  ”  বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও নৈতিকতা একই সূত্রে গাঁথা। ” 

Related Posts

25 Comments

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No