ধ্রুব ছেলেটার খুব ভয়। সামান্য কোনো কিছু দেখলেই সে ভয়ে তটস্থ হয়ে যায়। তার স্বভাবও খানিকটা মেয়েলি। তার হাঁটার ধরণটাও অনেকটা মেয়েলি টাইপের (যদিও এখন সে পুরুষের মতোই সব চালচলন শিখে গেছে)। স্কুলের সবাই তাই তাকে মাইয়া মাইয়া বলে ক্ষ্যাপায়। কেননা, সে তেলাপোকা দেখলেও ভয়ে লাফিয়ে উঠে।
কিন্তু সে পড়ালেখায় দুর্দান্ত এক বালক। সে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিলো। আর সে ১০২৩ নাম্বার পেয়ে সব বিষয়ে A+ পেয়ে গোল্ডেন নাম্বার পেল।
গত ৩০ ডিসেম্বর তার রেজাল্ট বেড়িয়েছে। আজ ৪ঠা জানুয়ারী, ২০২২। তার স্কুল থেকে নোটিশ দিয়েছে গত ৩ জানুয়ারী। নোটিশে লেখা ছিল, আগামী ৪ জানুয়ারী এসএসসি-২১ ব্যাচের পোলাপাইনরা করোনার ভ্যাকসিন নিতে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চলে যাবে।
এই নোটিশ শোনার পর, ধ্রুব খুব ভয় পেয়ে গেলো। কারণ, সে ইঞ্জেকশনে যে খুব ভয় পায়। ভয়ে সে ইনজেকশন দিতে চায় না। কিন্তু, তাকে তো ভ্যাকসিন দিতেই হবে।
কি করে সে এই ইঞ্জেকশনের ব্যাথা সহ্য করবে? সেই নিয়ে সে দুর্ভাবনায় পড়ে গেছে।
৩ ডিসেম্বর সারাদিন সে ছটপট করে বেড়িয়েছে। তার মনে শুধু ওই একটাই ভাবনা। ইঞ্জেকশন সে কি করে দিবে?
আমাদের কিছু বদমাইশ পোলাপাইন আছে, যারা অন্যকে ভয় দেখিয়ে নিজের গৌরব বাড়ায়। তারা ধ্রুবকে বলেছে, “করোনার ইঞ্জেকশনে প্রচুর ব্যাথা হয়। পাতলা পায়খানা হয়। খুব জ্বরও আসতে পারে। ইঞ্জেকশন ছোট হলে কি হবে, দেওয়ার সাথে সাথে তোর হাত ফুলে যাবে। আমাদের কিছুই হবে না। কারণ, আমাদের হাত পুরুষের হাত। তোর হাত তো মেয়েলি। তাই তোর হাতে প্রচুর লাগবে। তুই ব্যাথায় ছটপট করবি।”
এরকম নানা ভুয়া তথ্য দিয়ে ধ্রুবকে তারা ভয় পাইয়ে দেয়। ধ্রুব ছেলেটা তো এমনিই ভীতু টাইপের। সে ওদের এসব কথা শুনে ভয়ে রাতে ভালো করে ঘুমাতে পর্যন্ত পারেনি।
অবশ্য আমি রাতের দিকে তাকে বলেছি, “দ্যাখ, ওরা তোকে ভয় দেখাচ্ছে। তুই ওদের ওসব কথায় পাত্তা দিস না। একটা কাজ কর। তুই সবার আগে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে যাবি। তাহলে সবার আগে তোকে ভ্যাকসিন দিবে।”
আমি তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আরও বললাম, “সবার প্রথমে যে ভ্যাকসিনটা নেয়, তাকে নার্সরা খুব যত্নসহকারে ইঞ্জেকশন দেয়। এতে তোর একদম ব্যাথা লাগবে না।
আর ওরা(বদমাইশ পোলাপাইন) তো অলস। ওরা এমনিতেই দেড়ি করে আসবে। ফলে ওরা তোকে ভয় দেখাতেও পারবে না। বরং, তুইই ওদের ভয় দেখিয়ে চলে যেতে পারবি।”
এসব কথায় সে কিছুটা ভরসা পায়।
পরের দিন। আমি সকাল সকাল লাইনে গিয়ে দেখি লাইনে ৮ জন দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক সবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের ভীতু ছেলেটা। সেই সবার প্রথমে ভ্যাকসিন নিয়ে আসলো। আমিও কিছুক্ষণ পর ভ্যাকসিন নিলাম। ভ্যাকসিন নিয়ে আমরা গেট থেকে বের হচ্ছিলাম।
মন সময় আমাদের বদমাইশ পোলাপাইনরা প্রবেশ করতেছিল। তারা ধ্রুবকে দেখে বলল, “কিরে ইঞ্জেকশনের ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছিস নাকি?” আমি উত্তর দিবো এমনসময়,
সবাইকে অবাক করে দিয়ে ধ্রুব ভ্যাকসিন কার্ডটা দেখিয়ে বলল, “যুদ্ধের ময়দানে সাহসীরা কই? ভীতুরাই তো যুদ্ধে জয়লাভ করলো!”
Right
Humm
খুব ভালো লাগলো
Superb. দেখিয়ে দিয়েছো পাগলা।
Ok
পড়ে ভাল লাগল। ধন্যবাদ।
nice post
nice post
nice post
N