শনিবার দিন রসায়ন ল্যাব এ রসায়ন এর কিছু পরীক্ষণ করছিলাম আমরা।ল্যাব কেনো তাড়াতাড়ি শেষ হচ্ছে না,এই নিয়ে অস্থির ছিলো প্রায় সবাই।অনেকে ল্যাবের কাজ শেষ করে উঁচু টুল এ বসে ঘুম দেওয়ার চেষ্টায় ছিল রত।খাঁ খাঁ দুপুর বলে একটা কথা আছে,তখন ছিল তেমনই একটা সময়।এমন সময় হঠাৎ ই সবাইকে রীতিমত চমকে দিয়ে,অদ্ভুত চাপা স্বরে ডাকতে লাগলো একটা কুকুর।একটা কুকুর থেকে কিছুক্ষণের মধ্যেই চাপা স্বরে ডেকে ওঠা শুরু করলো আরও অনেকগুলো।সবাই একটু বিরক্ত হলো।যারা ঘুমাচ্ছিল তারা আরও বেশি।কুকুরগুলো আর মারামারির সময় পেল না,ভাবলো অনেকে।কিন্তু এ যেন ঠিক কোনো মারামারি নয়।মনে হচ্ছিলো কুকুরগুলো পুরো কলেজের চারপাশে ঘুরছে আর কান্না করছে।কি যেন এক চাপা কষ্ট প্রকাশ করছে তারা।এমন চলতেই থাকলো কিছুক্ষণ।থেমে থেমে কান্না।আর কলেজের চারপাশে ঘুরপাক খাওয়া।যতই দূর থেকে তাড়ানোর চেষ্টা করা হোক না কেন,তারা যেন চলে যেতে অনিচ্ছুক।
২.তার পরের শনিবার সকালে ক্লাস করার সময়,দূর থেকে কলেজ মসজিদের খাটিয়া বের করা দেখলো ছাত্রছাত্রীরা।যারা প্রথম থেকে এই কলেজে চাকরি করছেন,সেই শিক্ষকেরাও তাদের জানামতে কলেজের খাটিয়া বের করা দেখেনি কোনোদিন।হ্যা,আজকে তার প্রয়োজন হলো,কারণ কলেজের ফুলের বাগানের মালী আজ সকালে মারা গেলেন স্ট্রোক এ।পুরোনো খাটিয়াতে অনেক ময়লা জমে ছিল স্বভাবতই।তাই ধুয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছিলো।দূর থেকে সেই দৃশ্য চোখে পড়ছিল ছাত্রছাত্রীদের।মৃত্যু অদ্ভুত।ছাত্রছাত্রীরা যাকে সবচেয়ে কঠোর শিক্ষক বলে জানত,সেও আজ কেমন চুপচাপ,শিক্ষার্থীরা কি করছে সেদিকে মনোযোগ দিচ্ছেন না,তিনি।ঠিক যখন খাঁ খাঁ দুপুর গড়িয়ে গেল,শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হলো।
৩.মিতুর সাথে তার এক দূরসম্পর্কের দাদার মৃত্যুর গল্প বলছিল ভাষ্মতী।তার সেই দাদা মারা যান অ্যাক্সিডেন্টে।তলপেটের উপর দিয়ে চলে গিয়েছিল একটা ট্রাক।লোকাল হাসপাতালের ডাক্তাররা বললেন কিডনিসহ পেছনের সব অঙ্গগুলো থেতলে গেছে।এখানে কিছুই করা সম্ভব নয়।মারা যাওয়ার আগে চারঘন্টা সময় দিয়েছিল সেই দাদা।তবে সাথে সাথে মারা গেলেই বোধহয় ভালো হত।মাঝে মাঝে অসম্ভব যন্ত্রণার চেয়ে মৃত্যু কিছুটা ভালো।সেই দাদা যেদিন মারা গেলেন,তার মা ছিলেন না বাসায়।আত্মীয়ের বাড়িতে আগের রাতে ঘুমের মধ্যে জেগে উঠছিলেন আর বলছিলেন,আমার এমন কেন লাগছে। কিছুক্ষণ পরপর গ্রামের সেই বাড়িতে জানালার ধারে এসে এক কুকুর কাঁদছিল!অনেক হেই হেই করেও সেই কুকুরকে তাড়ানো যাচ্ছিল না।সেই রাতে ঘুমের মধ্যেই সেই দাদার মা বলছিলেন,কেন কুকুর কাঁদছেএতো?
অসময়ে বন্ধুদের নিয়ে সাইকেলসহ বের হয়েছিলেন সেই দাদা।রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন।হঠাৎ বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি করতে করতে এক বন্ধু তাকে ধাক্কা মারলো।তখনই মৃত্যুর দূত হিসেবে ট্রাক এসে থেতলে দিয়ে গিয়েছিল সেই দাদাকে।
৪.মিতুর বাসায় ঘটে যাওয়া কাহিনীটা আরও ভয়ানক।তাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া মারা যাবার আগেরদিন,প্রচন্ড কেঁদেছিল একটা কুকুর।থামছিল না সেই কুকুর।এক ভয়ানক গা হীম করা ডাক ডাকছিল সেটা।মিতুর এগুলো মোটেই পছন্দ নয়।কুকুরদের কান্নাকে ভয় পায় সে।হঠাৎ অশুভ কথা মনে উঁকি দিয়েছিল মিতুর।কেউ মারা যাবে না তো?সত্যিই তাই।রাত তিনটায় খবর এলো তাদের ভাড়াটিয়ার মা মারা গেছেন।কুকুরের কান্নাও থেমে গিয়েছিল কিছুক্ষণ আগে।এরপর থেকে কুকুরের কান্নাকে এড়িয়ে চলে মিতু।জানে অশুভ কিছু আছে ওই ডাকাডাকিতে।শুভ কিছু নেই ই ওতে।কুকুরকে এমনিতে খেতে দিলেও শুধু কান্নার জন্য তাদেরকে ঘৃণা করতো মিতু।হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছিল।সে সবসময় পাশে একটা কুকুর রেখে দিত।ভালোই বাসত সেই কুকুরকে।আবার অদ্ভুত কাহিনীগুলো মনে পড়লে ভয়ে চুপসে যেত সে।
অনেকদিন কেটে গেছে এর মধ্যে।সময়ের স্রোতে মিতু হয়ে গেল বুড়ো।মিতু একা থাকতো বাসায়।কারণ তার ছেলেমেয়েরা মানুষ হয়ে যে যার মতো চলে গিয়েছিল বিদেশ।বুড়ো হয়ে গেলেও একশ বছর পর্যন্ত বাঁচার আশা করতো সে।প্রচন্ড মানসিক শক্তি ছিল তার।তার বাসায় সঙ্গী হিসেবে ছিল একটা কুকুর।এতগুলো বছরে অনেকবার তার কুকুর বদলেছে,অনেকগুলো মারা গেছে।হঠাৎ দোতালা থেকে মিতু শুনতে পেল,একতলায় কুকুরটি কাঁদছে।কিন্তু ক্ষুধায় তো কাঁদার কথা নয়।বহুদিন আগেকার সেই ঘটনাগুলো মনে পড়ে গেলো মিতুর।একবিন্দুও ভাবলো না মিতু।রাইফেল টা বের করলো ঘর থেকে কয়েকটা সিঁড়ি ভেঙেই কুকুরটার দিকে গুলি ছুঁড়ে মারলো মিতু।কিছুক্ষণ ছটফট করে মারা গেল সেটা।একটু মৃদু হাসি দিয়ে কুকুরটার মৃত শরীরটাকে ফেলতে নিচে নেমে আসছিল মিতু।
ঠিক ওই মুহূর্তেই হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেল মিতু।এমনিতেই বয়সের ভারে ছিল দুর্বল।নিচে পড়ে সাথে সাথে মারা গেল মিতু।পাশাপাশি পড়ে রইল মিতু আর তার কান্না করা কুকুরের লাশ।