তখন রাত ১১ টা মত বাজতে চলেছে,বাসটি দ্রুত গতিতে চলছে।বাসটি রাজশাহী পৌঁছাতে আর আধা ঘন্টা মত লাগবে।শিহাব ঘুমিয়ে আছে,তবে সামনের সিটের রবিন জেগে রয়েছে।সে শিহাব কে জাগিয়ে দিলো এবং বলল আর ঘুমিও না,এইতো চলে এসেছি!শিহাব গা-মোড়া দিয়ে চোখ খুললো,তার খুব ঠান্ডা লাগতে শুরু করলো।তো সে ব্যাগ থেকে ফুলহাতা একটি টি-শার্ট বের করে পরে নিলো।পরবর্তীতে রাজশাহী বাস স্ট্যান্ডে এসে বাস থামলো,তখন আনুমানিক রাত ১১.৪৫ মিনিট!!
রবিনের থেকে শিহাব বিদায় নিলো,কারন রবিন নবাবগঞ্জ যাবে।তো রাতে সে বাস স্ট্যান্ড থেকে রওনা হলো রাজশাহী রেলগেটের দিকে এবং পৌঁছাতে পৌঁছাতে ১২ টা বেজে গেলো সে তো শিহাব তার গ্রামের উদ্দেশ্যে যাওয়ার মত অটো খুঁজতে লাগলো কিন্তু পাচ্ছিলো না।অবশেষে পেয়ে গেলো,এবং রেলগেট থেকে তার গ্রামে যেতে আরো ২ ঘন্টা মত লাগবে।প্রথম অটো তাকে কাশিয়াডাংগা পর্যন্ত নিয়ে গেলো,এরপর সে রিক্সা খুজতে লাগলো কিন্তু সে পাচ্ছিলো না কোনভাবেই তো যাই হোক এরকম অনেক সময় কেটে যাবার পর একটা রিক্সার দেখা পেলো।তবে বলে রাখা ভালো সময়টি ছিলো নভেম্বর ২০১৭,সুতরাং মোটামোটি শীত কাজ করছে।
রিক্সাওয়ালা টা মুখে গামছা দিয়ে ছিলো,আর আলো বলতে রিক্সায় নিচে হারকিন যা নিভু নিভু জলছিলো।শিহাব কে দেখে রিক্সাওয়ালা জিজ্ঞেসা করলো,মামা কোথায় যাবেন?শিহাব আনন্দের সাথে বলে উঠলো মামা আমি ——- যাবো বলেই রিক্সায় উঠে পড়লো।কিন্তু রিক্সাওয়ালা আর একটি শব্দও করলোনা।সে চলতে শুরু করলো।প্রায় ১০ মিনিট মতো চলার পর শিহাব অনুভব করলো যে কি যেন একটা গন্ধ পাচ্ছে,গন্ধ টা তার পরিচিয় তবে সে কিছুতেই মনে করতে পারলোনা।
মিনিট পার করলো শিহাব।তারপর ফোনটা পকেটে রেখে দিলো।তবে সে একটি অবাক হলো কারন সে যেখানে যাবে সেখানের পথ ১৫ মিনিটের বেশি না।তবে ইতিমধ্যে ৩০ মিনিট হয়ে গেছে।সে রাস্তা ঠিকমত দেখতে পাচ্ছিলোনা।সব অন্ধকার।হারিকেনের আলোয় খুব অল্প ঝাপসা দেখা যায় সব।সে এবার বললো মামা এইটা কোন রাস্তা??আবারো সাইলেন্ট!! কোন জবাব নেই।এবার একটু রাগ নিয়ে শিহাব ঃ- আরে মামা সমস্যা কি কথা বলেন না ক্যা?? কোথাই যাচ্ছি এই রাস্তা দিয়ে?? জাবাব এলো মামা এই অন্য রাস্তা,অই রাস্তার কাজ চলে।
তবে শিহাব খুব ভালোভাবে জানে যে তার বাসার রাস্তা একটাই।আবার ভাবলো অনেক বছর পর আসছে হয়তো রাস্তা হয়ছে।টেনশন না নিয়ে ফোনটা আবার বের করলো।কিন্তু যা দেখলো সে কোনভাবেই প্রস্তুত ছিলোনা।দেখলো তার ফোনে ৩.১৫ বাজে।এবার তার টনক নড়লো।তার বুঝতে বাকি রইলো না সে যে বাজেভাবে বিপদে।এইটা স্বাভাবিক হতে পারেনা।ফোন করার জন্য রবিনের নাম্বার ডায়াল করতে গিয়ে দেখে কোন প্রকার নেটওয়ার্ক নেই।
কোন ভাবেই যা সম্ভব নাহ।তার এলাকায় কোন নেট প্রব্লেম নেই,তবে নেটওয়ার্ক কেউ নাই।সে ভালো মতই ভয় পেয়ে গেলো।রাস্তার দিকে তাকালো,চোখ মুছে ভালোভাবে।সে দেখলো আশেপাশে শুধুই বাশঝাড় আর কবর।সে ভয়ে শিউরে উঠলো,মুখ থেকে আওয়াজও বের করতে পারছে না সে।শরীর যেন অবস হয়ে আসছে।হটাত তার মাথায় আসলো সে একটা মরা বাসায় গেছিলো রবিনের সাথে।সেখানে যেই গন্ধ পেয়েছিলো এই গন্ধটাও সেটাই।এবার সে ভয়ের ছোটে চলন্ত রিক্সা থেকে লাফ দিলো আর বিপরীত দিকে জানপ্রান ছেড়ে দৌড় শুরু করলো।
এমতা অবস্থায় সে একটা গাছের ধাক্কা খেয়ে পড়লো।উঠে বসতেই দেখলো,সেই গাছের ডালের সাথে অই রিক্সাওলাটা ফাঁস দিয়ে ঝুলে রয়েছে মুখে অই গামছা,আর তার লাল দুটো চোখ তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।সে চিতকার করতেই সেই ঝুলন্ত শরীরটা রশি ছিটে পড়লো তার সামনে।এবার সে আর নিতে পারলোনা।সে অজ্ঞান হয়ে গেলো।সকালে সে দেখলো সে এক অজানা বাশের ঝাড়ে শুয়ে রয়েছে।রোদ মুখে এসে পড়ছে তার।লাফ দিয়ে উঠে।রাস্তায় এসে দেখে সে তার বাসা থেকে প্রায় ২০ কিলো মতো দুরের এই বাশ ঝাড়ে।পরে রবিনের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারে।
যে সে রবিনের সাথে যেই মরা বাসায় গেছিলো সেটি ছিলো এক রিক্সাওয়ালার সুইসাইড কেস।সেই রিক্সাওয়ালা এক বড় আম গাছের সাথে গলায় দড়ি দিয়ে আত্নহত্যা করেছিলো।আর তার মুখেও গামছা জড়ানো ছিলো। শিহাব আল্লাহ আল্লাহ করে।এবং বুঝতে পারে তার সাথে আরো কত খারাপ কিছু হতে পারতো।এই যাত্রায় সে বেচে যায়।