আজ থেকে ৪০০ বছর আগে মানে ১৬০০ শতাব্দীর সাহিত্যতে মঙ্গল গ্রহকে দ্বিতীয় পৃথিবী বলা হয়েছে। বর্তমানে বৈজ্ঞানিকদের কার্যকলাপ অর্থাৎ তাদের নেওয়া পদক্ষেপকে দেখে সেই দাবি অনেকটাই সঠিক বলে মনে হচ্ছে। শত শত বছর ধরে মানুষের মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার পরিকল্পনা নাসা এবং স্পেস এক্সের আগামী প্রোজেক্ট গুলোর দরুন হয়তো বাস্তবায়িত হতে চলেছে।
তবে এ বিষয়ে কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়, মঙ্গল গ্রহকেই কেন দ্বিতীয় পৃথিবী হিসেবে ধরা হচ্ছে? আচ্ছা আমরা ধরে নিলাম মঙ্গল গ্রহই দ্বিতীয় পৃথিবী, তাহলে মানুষ মঙ্গল গ্রহে কিভাবে যাবে? আর মানুষ যদি সেখানে গিয়ে পৌঁছায়ও তাহলে সেখানে বসতি স্থাপন করবে কি করে? আজকে এই আর্টিকেলে আমরা এ বিষয় গুলো সম্পর্কেই জানার চেষ্টা করবো।
সবার প্রথমে আমরা এটা জানবো যে মানুষ মঙ্গল গ্রহে কিভাবে পৌঁছাবে। কারণ মানুষ যদি মঙ্গল গ্রহে না পৌঁছাতে পারে তাহলে মঙ্গল গ্রহে বসতি বানানোর স্বপ্নই অহেতুক। ১৯৭১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন মার্স২ এবং মার্স৩ নামক রোবটকে প্রথমবার মঙ্গল গ্রহে পাঠান। কিন্তু মঙ্গল গ্রহের ভূমিতে পৌঁছানো মাত্রই রোবটগুলি ফেটে যায়। ফলে মিশনটি অসম্পূর্ণই থেকে যায়।
তারপর ১৯৭৬ সালে একটি ল্যান্ডারকে নাসা মঙ্গল গ্রহে নামায় এবং এটি একটি সফল মিশনে পরিণত হয়েছিল। এটিই প্রথম মঙ্গল গ্রহের ছবি মানব সভ্যতার কাছে পৌঁছায়। তার ঠিক ২১ বছর পর মানব সভ্যতা এমন একটি রোবটকে মঙ্গল গ্রহে পাঠায়, যা শুধু মঙ্গল গ্রহে নামেইনি বরং চলাচলও করেছিল।
তারপর নাসা আরও দুটি রোবটকে মঙ্গল গ্রহে পাঠায়। এর সবথেকে বড় ব্যাপার ছিল নাসার এই মিশনটি মাত্র ৯০ দিনের ছিল, কিন্তু মঙ্গল গ্রহে পৃথিবীর তুলনায় অনেক বেশি বাতাস থাকার কারণে এই রোবটে জমা সব ধুলো নিজে থেকেই পরিষ্কার হতে থাকে এবং সূর্যের তাপ থেকে এই রোবটের সোলার সিস্টেম অটোমেটিক্যালি চার্জ হতে থাকে। যার ফলে এই মিশনটি ৯০ থেকে বেড়ে ছয় বছর পর্যন্ত চলেছিল। কিন্তু মঙ্গল গ্রহের মাটি ক্ষার প্রবণ হওয়ায় এই দুটি রোবটই নষ্ট হয়ে যায়।
অবশেষে নাসা মঙ্গলে যে রোবটটিকে পাঠায় তার নাম ছিল কিউরিওসিটি। এই রোবটটিতে সোলার প্যানেলের পরিবর্তে নিউক্লিয়ার জেনারেটর ব্যবহার করা হয়েছিল এবং এটি প্রায় ১৩ বছর মঙ্গল গ্রহের ভূমিতে চলাফেরা করেছিল। কিন্তু এত সময় কাটানোর পরেও সব রোবট গুলো মঙ্গল গ্রহের মাত্র ৪১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছিল। কারণ এই সমস্ত রোবট যে কাজ ছয় মাসে করে, মানুষ সেই কাজ মাত্র ২ ঘণ্টাতে কমপ্লিট করে ফেলতে পারে।
কিন্তু কথাটা এটা নয় যে এই তিনটি রোবট কতটা যাত্রা করেছিল, কথাটা হলো এই রোবট গুলি কি কি তথ্য মানবসভ্যতাকে মঙ্গল গ্রহ সম্বন্ধে দিয়েছিল। যে তথ্য পাওয়া যায় তার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। কারণ এই রোবট গুলোর থেকে পাওয়া তথ্য থেকেই বিজ্ঞানীরা অনুমান করতে সক্ষম হয় মঙ্গলেও বসতি সম্ভব।