খুব বেশি মন খারাপ- কিছুই ভালো লাগছে না- অসহ্য!!! এমন কি মাঝে মাঝে অনুভব হয় না? যদি হয় তবে আপনিও মন খারাপের সাথে পরিচিত। আসলে আমরা মানব সমাজের প্রত্যেকেই মন খারাপের সাথে অভ্যস্ত।
‘মন খারাপ’ শব্দটিএ ব্যাখ্যা একেক জনের কাছে একেক রকম। কারো কাছে মন খারাপ ব্যাপারটা স্বল্প সময়ের জন্য। আবার কারো কাছে দীর্ঘ সময়ের জন্য। ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলা যায় এভাবে যে- সাধারণত মন খারাপ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটা স্বাভাবিক ঘটনা। কারো হয়তো ২-১ মিনিটের জন্য মন খারাপ হয়। আবার কারো হয়তো কয়েক ঘন্টা বা কয়েক দিনের জন্য।
“মন কেন খারাপ হয়?’ – এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর হয়তো আমাদের কারোরই জানা নেই। তবে আমরা লক্ষ্য করলে দেখবো যে, একেক জনের মন খারাপের পেছনে একেকটা কারণ কাজ করে। অর্থাৎ প্রত্যেকের মন খারাপের কারণ আলাদা।
আসুন আমরা মন খারাপের কয়েকটি কারণ জেনে নিই। বিভিন্ন গবেষণা ও অনুসন্ধানে মন খারাপের কয়েকটি কারন হলো-
- মন খারাপের প্রধান ও অন্যতম কারণ হলো চাহিদা অনুযায়ি কোনো কিছু না পাওয়া। আমরা দৈনন্দিন জীবনে সবসময় চেষ্টা করি আমাদের সকল চাওয়া-পাওয়া যেন পূরণ হয়। কিন্তু যখন আমাদের চাওয়া-পাওয়ার হিসেব প্রত্যাশা অনুযায়ি হয় না, তখনই আমাদের মন খারাপ হয়।
- কারো খারাপ আচরণ খুব সহজে আমাদের মনকে খারাপ করে দেয়। বিশেষ করে প্রিয় কোনো মানুষ, প্রিয় বন্ধু, প্রিয় সহকর্মী অথবা পরিবারের কেউ যখন খারাপ আচরণ করে তখন মন খারাপ হয়।
- নিজের অতি ব্যক্তিগত কোনো ঘটনা যা কাউকে বলতে পারছিনা বা বলার মতো বিশ্বস্ত কাউকে কাছে পাওয়া যায় না তখন আমাদের মন খারাপ হয়।
- অতীতের কোনো স্মৃতি বা ঘটনা হঠাৎ মনে পড়লে মন খারাপ হয়।
- ভালোবাসার সম্পর্ক হয়তো তা দীর্ঘ দিনের যদি ভেঙ্গে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় – তবে আমাদের মন খারাপ হয়। আমাদের অধিকাংশ মানুষের মন খারাপের অন্যতম কারণ সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়া।
- ক্যারিয়ারে সফল না হওয়া অথবা নিজের যোগ্যতা অনুযায়ি চাকরি না পাওয়া মন খারাপের অন্যতম একটি কারণ।
- পরিবারের অর্থকষ্টের কারণেও মন খারাপ হয়।
মন খারাপের যেমন নানা রকমের কারণ থাকে তেমনি মন ভালো করার ও নানা উপায় রয়েছে। এবার জানা যাক, মন ভালো করার উপায় গুলো-
- মন ভালো করার অন্যতম উপায় হলো ‘হাসি।’ হাসুন। হাসি না আসলেও হাসতে চেষ্টা করুন। কোনো মজার ঘটনা স্কুলের বা ছোটবেলার কোনো ঘটনা মনে করুন যা মনে করে আপনি হাসতে পারবেন। গবেষকদের দাবি, হাসি আপনার মন ও শরীর দুটোই সুস্থ রাখে। হাসি আপনার মুখে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। রোগ- প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- মন খারাপ হলে যা করতে মন চায় ,তাই করুন। ঘুমাতে, খেতে, খেলতে বা বেড়াতে যা মন চায়। কিন্তু অন্যের যাতে ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- গান শুনুন। কোনো কারণে যদি মন খারাপ হয় তবে গান সুনুন। প্রিয় কোনো গান। জোরে শুনতে থাকুন আর গলা ছেড়ে গাইতে থাকুন। গান মন ভালো করার অন্যতম টোটকা হিসেবে কাজ করে।
- ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করুন। বাইরে হাঁটতে যান। হাঁটতে থাকুন। হয়তো এমন কোনো দৃশ্য চোখে পড়বে যা আপনার মনকে নিমিষেই ভালো করে দেবে।
- বই পড়ুন। বই আপনার মন ভালো করার জন্য অপেক্ষা করছে।
- ঘরে পুরোনো ছবি থাকলে সেগুলো দেখুন।
- টিভি দেখতে পারেন। দেখতে পারেন কার্টুন। টম ও জেরি। হাসতে হাসতে কখন যে চোখ দিয়ে পানি বের হবে নিজেও টের পাবেন না।
- এতিম খানায় যেতে পারেন। সেখানের নিষ্পাপ শিশুদের হাসি দেখলে আপনার মন এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে।
মন খারাপ যদিও স্বাভাবিক একটা ব্যাপারা। আমাদের আচরণের কারণেই এটা দীর্ঘস্থায়ী রূপ ধারণ করে। বর্তমানে অনেকেই মন খারাপ ও বিষন্নতাকে গুলিয়ে ফেলেন। কিন্তু মনে রাখবেন, মন খারাপ ও বিষন্নতা এক নয়। দুটি সম্পুর্ণ আলাদা। সবাই ভালো থাকবেন।