মহামারির অভিজ্ঞতা:কীভাবে করোনাসহিষ্ণু এলাকা গড়া সম্ভব।
কোভিড ১৯ মহামারী একটি অনাকাঙ্কিত বিভীষীকার নাম। ভয়াবহ এক পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৩ টি দেশ ।একের পর এক আক্রান্ত হচ্ছে,মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে ।আপনজনকে হারানোর বেদনা ,রোগীর আর্তচিৎকার,শেষ মুহুর্তেও বেচে থাকার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা সুন্দর পৃথিবীর স্নিগ্ধ পরিবেশকে বিভীষীকাময় করে তুলেছে ।
ছয় মাসেরও অধিক সময়ের দীর্ঘ লকডাউনে তিক্ত দেশবাসী।দেশের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা। স্কুলমাঠে নেই ছোট ছেলেমেয়ের দূরন্তপনা। এক অতিসূক্ষ্ম অথচ প্রাণঘাতী ভাইরাস এর ভয়ে সাতশত কোটি জনগণ অবরুদ্ধ। খোলা নেই কোনো কারখানা,নেই শপিংমল কিংবা পার্ক। রপ্তানী নেই,আমদানী নেই দেশের অর্থনীতি যেন স্থবির হয়ে পড়েছে । মসজিদে নামাজ হয়নি প্রায় দু মাস।
সবাই অপেক্ষায়। একটি করোনা বিহীন সুন্দর প্রভাতের অপেক্ষায়।তবে ভাইরাসবিহীন এক সুন্দর প্রভাতই যে মানবসমাজে শান্তি নিয়ে আসবে এমনটা কিন্তু নয় ।
কোভিড ১৯ মহামারীর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আবারো একটি স্বপ্নের করোনাসহিষ্ণু বাংলাদেশ গড়তে হবে। যে দেশে করোনার মতো মহামারীর ছোবলে জনজীবন বিপর্যস্ত হবে না। যে জাতি দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকবে। তবে সে যাত্রা যে কন্টকবিহীন হবে না তা তো সহজেই অনূমেয়। তবে স্বপ্নের করোনাসহিষ্ণু দেশ গড়ার চ্যালেন্জকে মোকাবিলা করতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন ।
মহামারী করোনার অভিজ্ঞতা:চাই সচেতনতা বৃদ্ধি :
করোনা পরিস্থিতিতে সচেতনতা বৃদ্ধি একান্ত প্রয়োজনীয়।
চলুনতো একবার ঘুরে আসি ছয় মাসে আগের বাংলাদেশে।করোনা তখনো আমাদের দেশে প্রবেশ করতে পারেনি। যদিও এটা একান্তই মহান আল্লাহরই ইচ্ছা তবে বস্তুগত দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় করোনার প্রতিকার নেই জানা সত্বেও আমরা প্রতিরোধ করতে গাফিলতি করেছি। দেশের প্রবেশ পথে জাতীয়ভাবে কয়েকটি সাধারণ থার্মাল স্ক্যানার এর ব্যবস্থা করতে পারিনি। আইসোলেশন নামমাত্র যা হয়েছিলো তা লোক দেখানো ছাড়া কিছুই নয়। ৮ই মার্চ বাংলাদেশে যে তিন জন ব্যাক্তির প্রথম করোনা শনাক্ত হয় তাদের মধ্যে দু`জন ছিলেন ইতালী ফেরত ও তৃতীয় জন তাদেরই পরিবারের সদস্য। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের আক্রমণ এভাবেই শুরু হয়েছিলো।অসতর্কতার মাধ্যমে করোনা ভাইরাসকে যেন দরজা খুলে দেশে প্রবেশ করানো হয়েছিলো।
স্পষ্টত;আমাদের সচেতনতার ঘাটতি ছিলো। চীনে করোনাভাইরাসের উৎপত্তির পর থেকে বাংলাদেশে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পূর্বে তিন মাসেরও অধিক সময় পাওয়ার পরও আমরা কেউ এই মহামারীকে আমলে নেই নি। করোনাভাইরাসের উৎপত্তি যেহেতু বাংলাদেশে নয়,সতর্কতা অবলম্বন এবং বিদেশফেরত ব্যক্তিদের যথাযথভাবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা গেলে হয়তোবা আজ আমার দেশে হাজার হাজার মানুষকে প্রাণ দিতে হতো না করোনাভাইরাসের হাতে।
তাই মহামারী মোকাবিলায় সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন হতে হবে।
এ জন্য
– আমাদের শিশুদেরকে ছোটবেলা থেকে স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করতে হবে।তার জন্য শ্রেণী উপযোগী করে স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
-স্কুল, কলেজ , ভার্সিটি তথা সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক ক্লাস গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
-প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে অবহিত থাকতে হবে।
–
তাছাড়া
-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ জনগণকে সচেতন হতে পোস্ট করতে পারেন।
-গণমাধ্যমে সচেতনতা বিষয়ক অ্যাড তৈরী করা যেতে পারে।
-জনপ্রিয় ইউটিউবারগণ তাদের ইউটিউব চ্যানেলে ডিডিও তৈরী করে জনগণকে সচেতন হতে উৎসাহিত করতে পারেন।
মহামারী করোনার অভিজ্ঞতা:চাই স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন
করোনা ভাইরাস থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্বিতীয়ত যে বিষয়টির উপর গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন তা হলো স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন ।
চিকিৎসা ব্যাবস্থার উন্নয়নে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহন করা যায় তা হলো
১।স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বৃদ্ধি :বলা হয়ে থাকে অর্থই সকল অনর্থের মূল ।আবার অর্থ ব্যতীত উন্নয়ন সম্ভব নয়।তাই স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বৃদ্ধি ,এখন সময়ের দাবী।
২।অর্থায়ন নিশ্চিত হলে লক্ষ্য দিতে হবে অবকাঠামো উন্নয়নের পথে ।
দেশে বিদ্যমান হাসপাতালগুলোর প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।ডাক্তারদের দোষারোপ না করে হাসপাতালের গুণগত মান উন্নয়নের দিকে লক্ষ্য দিতে হবে।
৩।বর্তমানে চিকিৎসাব্যাবস্থা প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল।তাই হাসপাতালগুলোতে উন্নত যণ্ত্রপাতির ব্যাবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৪।মাস্ক ,গ্লাভস,ওটি ড্রেস,গাউন,নিডল,ক্যানুলা এসব সরন্জাম এর পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে ।
মহামারী করোনার অভিজ্ঞতা:চাই ক্লিনিক্যাল রিসার্চে গুরুত্বারোপ :
-মেডিকেল স্টুডেন্ট,ডাক্তার ও চিকাৎসাসেবার সঙ্গে জড়িত সকলকে গবেষণার প্রতি উৎসাহিত করতে হবে।
এজন্য
– এম বি বি এস কারিকুলামকে এমনভাবে সাজাতে হবে যেখানে মুখস্তবিদ্যার চেয়ে চিন্তা ,বিশ্লেষণ ও গবেষণাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে ।
– গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় প্লাটফর্ম ,ট্রেইনার এর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে ।
– যেহেতু মেডিক্যাল রিসার্চ ব্যায়বহুল প্রক্রিয়া তাই ভালো ফলাফলের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
যেসব উপকার হবে :
১। নতুন নতুন রোগ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে ।
২। রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার জীবনচক্র জানা গেলে তাদের প্রতিহত করার ব্যাবস্থা গ্রহন করা যাবে।
৩। নতুন নতুন ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করা যাবে।
৪ । সর্বোপরি বাংলাদেশী গবেষকদের মেধা,মনন কাজে লাগিয়ে চিকিৎসা সেবাকে উন্নত হতে উন্নততর করা যাবে ।
মহামারির অভিজ্ঞতা:চাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি :
করোনা ভাইরাসের আক্রমণে দেখা যায় যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষতি বেশি হচ্ছে । যেমন বৃদ্ধ ব্যক্তি বা যাদের অন্যান্য কো মরবিডিটি থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার বেশি। তাই করোনা সহিষ্ণু হতে হলে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে।
এক্ষেত্রে যেসব পরামর্শ প্রদান করা যায় তা হলো
-নিয়মিত শরীরচর্চা :প্রতিদিন কমপক্ষে ত্রিশ মিনিট হালকা বা মাঝারী ধরণের ব্যয়াম করতে হবে।
-খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন:আমাদের দেহে ভিটামিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।তাই খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন মৌসুমী ফল,সবুজ শাকসবজি রাখতে হবে।
-পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
-অসাধু ব্যবসায়ী গণ অন্তত করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হলেও খাদ্যে ভেজাল দেওয়া হতে বিরত থাকবেন। কারণ খাদ্যে দূষণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসের এক অন্যতম কারণ।
বলতে চাই সবার শেষে
শিক্ষা পেয়েছি করোনা থেকে
অবহেলা নয় সচেতন হতে
স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি
ভবিষ্যৎে দিবে মুক্তি
দেশের মেধা কাজে লাগিয়ে
করোনাসহিষ্ণু দেশ যাবে এগিয়ে
গড়বো মোরা মোদের দেশ
করোনাসহিষ্ণু বাংলাদেশ ।