বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট বড় অনেক জমিদার বাড়ি। তাদের মধ্যে মহেড়া জমিদার বাড়ি অন্যতম। মহেড়া জমিদার বাড়ি টাংগাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলায় অবস্থিত। টাংগাইল পুলিশ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের পাশেই অবস্থিত হওয়ায় এ জমিদার বাড়ি অন্য যেকোনো জমিদার বাড়ির তুলনায় অধিক সুন্দর ও সংরক্ষিত।
মহেড়া জমিদার বাড়ি আট একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। জমিদার বাড়ির প্রথমেই রয়েছে বিসাখা সাগর নামের এক বিশাল দীঘি এবং প্রবেশের জন্য রয়েছে বিশাল রাজকীয় দুটি ফটক। জমিদার বাড়ির প্রধান আকর্ষণ হলো এর রাজকীয় প্রাসাদসমুহ। প্রাসাদগুলো যথাক্রমে চৌধুরী লাজ, মহারাজ লাজ, আনন্দ লাজ, কালীচরণ লাজ এবং রানীমহল নামে পরিচিত। প্রাসাদগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন সময়ের স্থাপাত্যশৈলী, বাহারি রঙ এবং অপরুপ কারুকাজ এর এক দারুন সন্নিবেশ।
তাছাড়া এখানে রয়েছে সাজানো গোছানো ফুলের বাগান, নায়েব সাহেবের ভবন, কাচারি ঘর, এবং বেশ কিছু ছোট বড় পুকুর। বর্তমানে এখানে ছোট একটি চিরিয়াখানা এবং শিশুদের খেলার স্থান যুক্ত করা হয়েছে। একদিনের আনন্দ ভ্রমণ বা বনভোজন এর ক্ষেত্রে সব বয়সের মানুষের জন্যই এটি আদর্শ স্থান হিসাবে বিবেচিত।
মহেড়া জমিদার বাড়িতে আসার উপায়:
ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল হতে টাংগাইল বা উত্তরবঙ্গে গমনকারী বাস অথবা গাবতলী বাস টার্মিনাল হতে উত্তরবঙ্গে গমনকারী বাসে চড়ে নাটিয়াপাড়া বাস স্ট্যান্ডে নামতে হবে। সেখান থেকে রিকশা, সিএনজি, অটোরিকশা বা মোটরবাইকে চড়ে সোজা মহেড়া জমিদার বাড়ি চলে আসবেন।
যারা ঢাকার পরিবর্তে অন্য কোথাও থেকে আসতে চান তারা প্রথমে টাংগাইল আসবেন। টাংগাইল পুরাতন বাস স্ট্যান্ড হতে পুলিশ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের বাসে চড়ে মহেড়া জমিদার বাড়ি চলে আসবেন। বলাবাহুল্য যে, বাসটি প্রতি ঘন্টায় একবারই পাওয়া যায়। সময় মিলিয়ে বাসটি পাওয়া দুস্কর। তাই যদি বাসটি না পান তাহলে সিএনজি বা অটোরিকশায় করেও মহেড়া জমিদার বাড়ি আসতে পারবেন।
তাছাড়া আপনারা ট্রেনেও আসতে পারেন। সেক্ষত্রে আপনাকে প্রথমে টাংগাইল ট্রেন স্টেশনে নামতে হবে এবং সেখান থেকে অটোরিকশা করে প্রথমে টাংগাইল পুরাতন বাস স্ট্যান্ডে এবং সেখান থেকে উপরে উল্লেখ্য উপায়ে মহেড়া জমিদার বাড়ি আসতে পারবেন।
ভ্রমণের খরচ :
ঢাকা মহাখালী হতে টাংগাইলের বাস ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আর গাবতলী হতে টাংগাইলের নন-এসি বাসের ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা তবে এসি বাসে ৪০০ টাকা। টাংগাইল হতে মহেড়ার বাস ভাড়া ২৫ টাকা এবং সিএনজি বা অটোরিকশার ভাড়া ৪০ টাকা। তবে নাটিয়াপাড়া বাস স্ট্যাডে নামলে সেখান থেকে মহেড়ার ভাড়া (সিএনজি বা অটোরিকশা) ২০ টাকা।
জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করতে ৮০ টাকা মূল্য এর টিকেট কিনতে হবে আর গাড়ি পার্কিং করতে চাইলে অতিরিক্ত ৫০ টাকা প্রদান করতে হবে। শিশু পার্কে প্রবেশের টিকেটের মূল্য ২০ টাকা। তাছাড়া এখানে অবস্থিত সুইমিংপুলে সাতার কাটতে চাইলে গুনতে হবে ৩০০ টাকা। এখানে আপনি চাইলে দীঘিতে থাকা নৌকায়ও চড়ে ঘুরতে পারেন তবে নৌকায় উঠার আগে দরদাম কর নিবেন কারণ ছুটির দিনে নৌকার ভাড়া বেশ খানিকটা বেশি হয়।
(বি.দ্র.:- এখানে জনপ্রতি হিসাব উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া বাস ভাড়া এবং টিকেটের মূল্য সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই আসার আগে অবশ্যই খোঁজ খবর নিয়ে আসবেন।)
থাকা এবং খাবার এর ব্যবস্থা :
পরিবার নিয়ে থাকতে চাইলে আমি আপনাদেরকে টাংগাইল শহরে থাকার পরামর্শ দিব। শহরে বেশ কিছু ভালো হোটেল পেয়ে যাবেন। হোটেলভেদে রুম প্রতি ভাড়া পরবে ১৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা।
খাবারের জন্য টাংগাইল পুলিশ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে একটি ভালো মানের ক্যানটিন বিদ্যমান রয়েছে। সেখানে আগে গিয়ে অর্ডার করলে খুব স্বল্প মূল্যেই আপনার পছন্দের খাবার খেতে পারবেন। আপনি চাইলে বাসা থেকেও খাবার আনতে পারেন আর ইনিস্টিউটের সামনের মাঠে বসে খাবার খেতে পারবেন তবে অবশ্যই মাঠ নোংরা করবেন না।
সতর্কবার্তা :
জমিদার বাড়িটি সংরক্ষিত এলাকা এবং পুলিশ বাহিনী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। তাই অনুমতি ব্যাতিত প্রাসাদের অভ্যন্তরে বা ছাদে উঠার চেষ্টা করবেন না। তাহলে হেনস্তা তো হবেন ই, সাথে জরিমানাও গোনতে হতে পারে। আর বাগান এর ফুল ছিড়া বা গাছের ডাল ভাংগা থেকে বিরত থাকবেন।
ধন্যবাদ।