বাংলাদেশ ভৌগলিক দিক দিয়ে নদী-মাতৃক দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ভ্রমপুত্র বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদী। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাছ চাষের খুবই উত্তম। বাংলাদেশ সরকারের মৎস গবেষণা ইনিস্টিটিউটের উদ্যোগে সারাদেশেই জেলেরা বিভিন্ন পদ্ধতি মাছ চাষ করে থাকে। বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হচ্ছে ইলিশ মাছ এবং এছাড়াও জেলেরা বিভিন্ন ধরণের মাছ চাষ করে বাজারে বিক্রয় করে থাকে।
এছাড়াও অন্যান্য মাছের ভেতর রুই, কাতল, মৃগেল, চিংড়ি, কই, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস ইত্যাদি। তবে বাজারে ইলিশ মাছের চাহিদাই ভোক্তাদের কাছে বেশী দেখা যায়। খেঁটে-খাওয়া জেলেরা পুকুর, হাওড় ও বিলে বিভিন্ন প্রজাতের মাছ চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকেন। বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলাতে শুরু হয়েছে মাছ ধরার উৎসব। এই উৎসবটি ঠাকুরগাঁয়ের টাংগন নদীতে উদযাপন করা হচ্ছে। ঠাকুরগাঁওয়ের পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওয়াতাধীন টাংগন ব্যারেজ খুলে দেওয়ায় এই মাছ ধরার উৎসব শুরু হয়। এই উৎসবে বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ শিকারীরা অংশগ্রহন করেছেন।
মাছ শিকারীরা টাংগন ব্যারেজের নিচে একত্রিত হয়ে মাছ ধরা শুরু করেছেন। কেউ কেউ টাংগন নদীর মাছ শুধুমাত্র ক্রয় করতে এসেছে। এই জায়গাটি ঠাকুরগাঁও শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে রাজাগাঁও ইউনিয়নের চাপাতি গ্রামে অবস্থিত। ঠাকুরগাঁওয়ের টংগন ব্যারেজ সবসময় খোলা হয় না। ব্যারেজটি ৩ মাস পর মাছ বড় হলে খুলে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে টংগন ব্যারেজে মাছ ধরার উৎসব শুরু হয়। ঠাকুরগাঁও জেলার টাংগন ব্যারেজ খুলে দেওয়ায় সদর উপজেলার চাপাতি, আটয়ারী উপজেলার সাতপাখি গ্রামের মানুষের ঢল দেখতে পাওয়া গেছে।
টাংগন ব্যারেজের পানি নেমে গেলে সেখানে শুরু হয় মাছ ধরার মহাউৎসব। বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার মানুষের টল দেখা দিয়েছে টাংগন ব্যারেজের নিচে। অধিকাংশরাই টাংগন ব্যারেজের নিচে তাবু টানিয়ে মাছ শিকারে ব্যস্ত আছে। ঠাকুরগাঁও জেলাতে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও হাজার হাজার মানুষের সমাগম দেখা দিচ্ছে। এছাড়াও মাছ শিকারীদের হাতে রঙে-বেরঙের বাহাড়ি কালারের জাল দেখতে পাওয়া গেছে এবং অনেকেই কলা গাছের ভেলা তৈরী করে পানিতে ভেলায় বেসে মাছ শিকার করছে।
মাছ ধরার জালগুলো বিশেষ ধরণের এবং মাছ শিকারীরা এই বিশেষ ধরণের জাল ফিকা ও লাফি দিয়ে মাছ শিকার করছে। শহর-বন্দর থেকে যেসকল ক্রেতারা টাংগন ব্যারেজে মাছ শিকার করতে আসে তাদের অধিকাংশই মাছের দামের উপর ভিত্তি করে ক্রয় করতে আসে। টাংগন ব্যারেজে মাছের ভেতর প্রতি কেজি টেংরা, গচি, শিং ও টোনা মাছ ৩০০/৪০০ শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রয় করা হয় এবং শৈল ও রুই মাছ কেজি দরে ৪০০/৫০০ শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রয় করা হয়।
মাছ ধরার উৎসব যেন এভাবেই প্রতি বছরই টাংগন ব্যারেজে ফিরে আসে বলে আশা করেছে সমগ্র ঠাকুরগাঁওবাসী।
সূত্র: কৃষিপ্রতিদিন