মানুষ মহান স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। পৃথিবীতে সৃষ্ট যত জাতি বা প্রজাতি আছে তার মধ্যে মানুষ হলো বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়ে অনেকটা ভিন্ন ও আলাদা প্রকৃতির। কারণ মানুষের মধ্যে এমন কিছু মানবীয় গুনাবলী আছে যা অন্য প্রজাতির মধ্যে নেই বা মহান স্রষ্টা দেন নি।
পৃথিবীতে অনেক জীব রয়েছে যাদের মানুষের মত জীবন আছে, মানুষের মত খাদ্য গ্রহণ করে, জীবন ধারনের উপকরণও রয়েছে মানুষের মত। কিন্তু তাদের মধ্যে মানুষের মত মানবীয় গুনাবলী দেওয়া হয় নি। তাইতো জীব হলেও তাদেরকে আমরা মানুষ বলতে পারি না, বরং ভিন্ন জাতের প্রজাতি নামে অবিহিত করে থাকি।
মানুষ হতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানবীয় গুন ও উক্ত গুনের পরিচর্যার পাশাপাশি মানবীয় গুনের স্বতঃস্ফূর্ত প্রয়োগ থাকতে হয়। মানুষ হওয়া সত্বেও যদি উক্ত গুনগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত বাস্তব প্রয়োগ আমাদের জীবনে না ঘটে তাহলে আমরা মানুষরূপী সৃষ্টি হলেও পশুরুপী ভিন্ন প্রজাতিতে অন্তর্ভুক্ত হতে সময় লাগবে না। নিচে তার কিছু বাস্তব নমুনা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আশা করি পরিপূর্ণ মানবীয় গুনাবলী সম্মৃদ্ধ সকল পাঠকবৃন্দ মনোযোগ দিয়ে আর্টিকেল টি পড়বেন ও অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন।
সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ “মানুষ” শব্দটি মনুষ্যত্ব, মননশীলতা, মানবতা, মহানুভবতা, মূল্যবোধ, উদারতা, মানসিকতা, ন্যায়পরায়নতা, শিষ্টাচার প্রভৃতি কিছু মানবীয় গুনাবলীর উচ্চতর বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পৃক্ত।
মানুষ হতে হলে মানুষের মানুষত্ব থাকতে হবে আর শুধু মনুষ্যত্ব থাকলে হবেনা মনুষ্যত্বের স্বতঃস্ফূর্ত প্রয়োগ প্রদর্শন করতে হবে। মানব জাতির পরিচয় মননশীলতা, মানবতা মহানুভবতা ও ন্যায়পরায়নতার মধ্যেই সুপ্ত থাকে। এই সুপ্ত গুনাবলীকে নিজস্ব বিবেক কে কাজে লাগিয়ে বিকশিত করতে হয়।
আজ পথে-ঘাটে, অফিস-আদালতে, গাড়িতে- বাড়িতে, চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে, সর্বক্ষেত্রে মানবতার চরম বিপর্যয় প্রদর্শিত হচ্ছে। একজন মানুষ অন্য জন মানুষকে অন্যায় ভাবে আঘাত করছে, নির্মম ভাবে হত্যা করছে, অন্যায় ভাবে মানুষের অধিকারকে হরন করছে, অন্যায় ভাবে মানুষের বাক স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করছে। আমি দেখছি কিন্তু আমার কোন প্রতিবাদ নাই। আমি শুনছি কিন্তু আমি না শোনার ভান করে উক্ত স্থান থেকে দ্রুত প্রস্থান করছি। আমি দেখছি কিন্তু না দেখার ভান করে নিজেকে উক্ত স্থান থেকে সরিয়ে নিচ্ছি। আমি সবই বুঝি কিন্তু না বোঝার ভান করে নিজেকে চরম পর্যায়ের নির্বোধ বানাচ্ছি। কিসের জন্য? কোথায় কোথায় গেল মানুষের মানবতা?? কোথায় গেল মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও সহমর্মিতা?? কোথায় গেল মানুষের বিপদে আরেকজন মানুষের সহযোগিতা?? কোথায় গেল মানুষের বিবেক নামক গতিমান যানবাহন টা?? কি কারণে আমরা এটা করছি?? অথচ মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীদের কে তথা পশুপাখি,জন্তু জানোয়ারকে আমরা দেখি তারা পরস্পরে নিজেদের বিপদে-আপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মানুষ ছাড়া আমরা অন্য প্রাণীদেরকে এটাও দেখতে পায় যে তারা একসাথে মিলেমিশে জীবন যাপন করছে। কোথায় গেল মানুষের প্রতি মানুষের মূল্যবোধ??
এমন তো একদিন ছিল একজন মানুষ অপরজন মানুষের স্বীয় দুঃখের দুঃখী হয়ে তার পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে উক্ত বিপদ থেকে তাকে উদ্ধার করেছে। এমন একদিন তো ছিল যে, যে মানুষ অন্যায় ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয় তাকে সবাই সমর্থন দেখিয়ে অপরাধীকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত বিচার করতো। কিন্তু মানুষের কোন বস্তু বা কোন জিনিসটির অভাবে মানুষ এখন সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ ছেড়ে দিয়েছে?? কি কারণে মানুষ এখন আর অপরাধীর কালো হাতকে রুখতে পারে না?? আসুন একটু জানার চেষ্টা করি।
মানুষ তার স্বীয় গুণাবলী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পশুত গুণাবলী নিজের ভেতর লালন করা শুরু করেছে। এর পিছনে একটাই কারন এই পৃথিবীর অর্থ সম্পদের প্রতি লোভ লালসা। স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার প্রবণতা। একটা পশু যেমন নিজের উদরপূর্তি ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করতে পারে না ঠিক তেমনি মানুষ এখন নিজের স্বার্থ উদ্ধার হলে অন্য কিছু চিন্তা করতে চায়না। স্বার্থ উদ্ধার হলে দুনিয়া উদ্ধার এমন নীতিতে মানুষ তার জীবনকে দিনাতিপাত করছে। কীসের ন্যায় কিসের অন্যায় কোন কিছুর বাছবিচার নাই।
অসৎ মানুষেরা অসৎ পন্থায় টাকার পাহাড়, সম্পদের পাহাড় জমা করে বড় বড় অট্টালিকায় বসবাস করে, দামি বস্ত্র, দামি গাড়িতে চলাচল করে এবং উন্নত খাবার গ্রহণ করে । অথচ তারই সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষ না খেয়ে দিন যাপন করে, চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরে যাই, অসংখ্য মানুষ ছেড়া বস্ত্র পরিধান করে দিন যাপন করে, অসংখ্য মানুষ শীতের সময়ে শীতের পোশাকের অভাবে রাস্তার পাশে চটের বস্তা বা পরিত্যক্ত কাপড় গায়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষকে না খেয়ে ধুকে ধুকে মরতে দেখা যায়। অসংখ্য মানুষ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকে, জীবনধারণের প্রয়োজনীয় উপকরণ থেকে বঞ্চিত থাকে।
এই সমস্ত সকল দৃশ্য তারা স্বচক্ষে দেখেও না দেখার ভান করে নিজেদেরকে শিক্ষিত, মার্জিত ও রুচি সম্মত মানুষ হিসেবে সমাজে পরিচিতি প্রদর্শন করে। মহান স্রষ্টা ধনীদের সম্পদে গরিবের হক রেখেছেন। ধনীদের উচিত গরীবদের যথাযথ হক বুঝিয়ে দেওয়া। এতে করে মানবতা প্রতিষ্ঠা হবে। এতে করে মানুষের প্রতি মানুষের মূল্যবোধ সজাগ হবে, মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা বৃদ্ধি পাবে, মানুষের প্রতি মানুষের সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে, মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা প্রকাশ পাবে।
আসুন আমরা এক ও অভিন্ন হয়ে পরস্পরের প্রতি সহযোগিতা,সহমর্মিতা, মহানুভবতা ও মনুষ্যত্বের হাত বাড়িয়ে দিই। অন্যায় কি অন্যায় বলি, ন্যায়কে ন্যায় বলি, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করি। অন্যায় কে প্রতিহত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। এই ভাবে যদি নিজের জীবনকে পরিচালনা করি তাহলে এই জগতের প্রত্যেকটা মানুষের জীবন সুন্দর হবে। মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারব।
(মো. ইদ্রিস আলী)