আপনি কি বেশি কথা বলেন ?
প্রাণবন্ত ও প্রফুল্ল মনে কথা বলা একটা বড় গুণ। তবে তারও একটা অনুপাত থাকা চাই। কম কথা বললে হবেন আন সোশ্যাল। আর বেশি বললে হবেন বাচাল। যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই বলে থেমে যেতে হবে। অন্যকে বলার সুযোগ দিন। যে বিষয়ে জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে কথা না বলাই ভালো। ভয়ংকর ভাবে ধরা খাবেন। বিষয়টা নিয়ে অন্যরা বললে, আপনি শুধু শুনে যান।
আপনি কি বেশি অভিযোগ করেন ?
জীবনের প্রতি অভিযোগ। এটা হলো না কেন? ওটা পেলাম না কেন? প্রত্যেকেরই সমস্যা আছে। যেমন আপনার, তেমন অন্যরও। সেটা যেকোনো সমস্যাই হোক না কেন। এর বাইরে কেউ না। সুতরাং নিজের সমস্যা নিজের কাছেই রাখুন। সমাধান খুঁজুন। অন্যকে ঢাকঢোল পিটিয়ে বলতে যাবেন না। অন্যরা অলরেডি তার নিজের সমস্যা নিয়েই জর্জরিত। সম্পর্ক রাখার ও ভদ্রতার খাতিরে কিছুদিন হয়তো সে শুনবে। কিন্তু পরে আপনাকে একজন নেগেটিভ মানুষ মনে করে সে আপনার থেকে দূরে সরে যাবে।
আপনার কথায় কি আদেশের সুর আছে ?
কোন কোন ক্ষেত্রে কথায় আদেশের সুর রাখা যায়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে। আপনি যদি একজন নেতা হতে চান, তবে ঠিক আছে। কিন্তু বন্ধুদের মাঝে ? একেবারেই একসেপ্টেড নয়। অনেক সময় এটা আমরা নিজের অজান্তেই করে থাকি। একটা সত্য ঘটনা। এক বাঙালি ভদ্রলোক ঢাকা থেকে কানাডা যাচ্ছিলেন। যাত্রাপথে পানির পিপাসা পাওয়াতে বিমানবালাকে ডেকে বললেন তাকে এক গ্লাস খাবার পানি দিতে।
পানিটা দেওয়া বিমানবালার কর্তব্য। এবং দিলেনও। কিন্তু দেবার সময় যা বললেন তা মনে থাকার মত। বললেন আপনি কি ‘ প্লীজ ‘ বলা শেখেননি ? ভদ্রলোক কিন্তু সরল মনেই চেয়েছিল। কিন্তু বিমানবালার কাছে চাওয়াটা আদেশ মনে হয়েছে। বলার সময় একটু খেয়াল রাখলেই হত। আবার অনেক সময় আড্ডায় বন্ধুদের বিভিন্ন অনুরোধ করি। যেমন, চায়ের অর্ডার দে তো, একটা সিগারেট ধরা তো ইত্যাদী।। বন্ধুকে বলা যেতেই পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে বলার সময় গলার স্বরে। গলার স্বরের একটু এদিক ওদিক হলেই কথাটা অনুরোধ না অর্ডার তা ঠিক হয়ে যায়।
আপনি কি কথার মধ্যে বাম হাত ঢুকান ?
অর্থাৎ, কেউ একজন কিছু বলছে। তার বক্তব্য পুরোপুরি না শেষ হতেই আপনি ইন্টারাপ্ট করলেন। থামিয়ে দিলেন। অথবা নিজের মতামত দিলেন। আমি যখন এটা লিখছি আপনাদের জন্য, হঠাৎ খেয়াল করলাম এই দোষটা আমার নিজেরও আছে। কিন্তু হঠাৎই খেয়াল করলাম। আগে বুঝিনি।
অর্থাৎ সম্ভবত আমাদের সবার মধ্যেই কম বেশি সমস্যাটা আছে। অথচ আমরা বুঝতে পারছি না। কথার মাঝে ইন্টারাপ্ট করলে বক্তা অপমানিত বোধ করে। এবং আপনাকে অপছন্দ করতে শুরু করে। আপনি যদি তার কথার মূল্যায়ন না করেন, তাহলে সে করবে কেন? আবার অনেকে আছে, কথা শেষ হবার আগেই বলে “আমি জানি আপনি কি বলবেন” । আপনি যতই জানেন না কেন, আপনার চুপ থাকা উচিত যতক্ষণ না বক্তা তার কথা শেষ করছে।
আপনি কি সবজান্তা ?
ছোটবেলায় পাঠ্যপুস্তকে একটি গল্প পড়েছিলাম। গল্পের নায়কের নাম ছিল, সবজান্তা শমসের আলী। তিনি সব জানতেন। সব বিষয়ে তার অগাধ জ্ঞান। অথচ অন গোয়িং পড়াশোনার কোনো অভ্যাস তার ছিল না। অন গোয়িং মানে, পাঠ্যপুস্তকের বাহিরে অন্যান্য বই পড়া। মনে রাখবেন, পাঠ্য পুস্তক আমাদের শুধুমাত্র ওইসব জ্ঞানীই দেয়, যা দিয়ে আমরা কর্মসংস্থান যোগাতে পারি। এটা কখনোই মানুষকে জ্ঞানী করে না।
খাদ্য সংগ্রহ করার কিছু টেকনিক শেখায়। সার্কাসের হাতিকে সঠিক ট্রেনিং এর মাধ্যমে যদি ফুটবলের উপর দাঁড় করানো যায়, তবে সঠিক ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে আদম সন্তানকেও, বুয়েট, মেডিকেল, অর্থনীতি, ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শী করানো যায়। মোটা মোটা বই শেষ করানো যায়।
কিন্তু তাতে প্রকৃত জ্ঞান আসেনা। আর তাই নিয়ে যদি, কেউ বড়াই করে, তবে নিঃসন্দেহে সে হয়ে যাবে ঘৃণার পাত্র। খেয়াল করলে দেখবেন, সমাজে এমন লোক অনেক আছে। যারা তাদের ডিগ্রীর গর্বে মাটিতে পা ফেলেনা। অন্য কেউ কিছু বলতে গেলে, শুনতে চায় না। শেখাতে চাইলে, শিখতে চায় না। বরং, ন আলোচনায় আড্ডায় নিজের জ্ঞানের বহর ছাড়তে থাকে। অবশ্যই অবশ্যই এ ধরনের মানুষেরা অন্যের কাছে বিরক্তি কারণ হয়ে দাঁড়ায়।