” মা ” অদৃশ্য বাতাস যেমন, সব সময় আমাদের ঘর জুড়ে বহমান, আমাদের সারাক্ষণই ছুঁয়ে যায় তেমনি, মা। মা হলো বাতাসের মতো। শারীরিক ভাবে আশেপাশে না থাকলেও কোথাও যেন থেকে যায়। হয়তো আমাদের আত্মা বা রুহের মধ্যের একটা বিশাল অংশ জুড়ে মা রয়েছে।
তাই হয়তো আমরা যেখানে, যে অবস্থায়, যেমনি থাকি না কেন মা সব সময় আমাদের মধ্যে থেকে যায়। মায়ের ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা সব সময়ই যেন থেকে যায় আমাদের অস্তিত্বের। মা মাটির মতন। বৃক্ষ যেমন মাটির সাথে শিকড় বেঁধে আকড়ে থাকে, তেমনি আমরা মানুষ মায়ের সাথে নাড়ির বন্ধনে আকড়ে থাকি। খুঁজে ফিরি সেই প্রশান্তি যা শুধু মাত্র মায়ের কোলে, তাঁর আচল তলেই পাওয়া যায়।
চাঁদ কিংবা সূর্য, পাহাড় কিংবা সাগর, ফুল, পাখি সব কিছুর তুলনা করা যায়। কিন্তু মা। মায়ের কোন তুলনা হয় না। মা, শুধু মা ই হয়। সারাদিন মা, মা করে ডাকলেও যেন বুকের ভেতরের তৃপ্তি মেটে না। ঘর ভরা জোছনা কেউ এনে দিলেও, সেই ঘরে মা না থাকলে জোছনার আলোও ফিকে মনে হয়। মা ছাড়া জীবন কল্পনা করা, অক্সিজেন ছাড়া পৃথিবীতে বেচেঁ থাকার মতন। মা চলে যায়। পৃথিবীর অন্যান্য মানুষের মতন মায়েরাও চলে যায়।
এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর বুকে আমাদের একা ফেলে। কিন্তু যার দেহ থেকে এই দেহের জন্ম, যার রক্ত এই দেহে বহমান, যার হাতের স্পর্শ, গায়ের গন্ধ, স্নেহের গান সব কিছুই এই দেহ, মন, অস্তিত্বে আছে সেই মানুষটাকে কি কখনো নিজে থেকে দূর করা যায়?তাঁর দেয়া শিক্ষা, তাঁর দেয়া গুন, তাঁর সাথে জুড়ে থাকা স্মৃতি, এসব মুছে ফেলা যায়? ভুলে যাওয়া যায়? চলে যায়?মানব মস্তিষ্ক এক সময় স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলতে শুরু করে।
কিন্তু মা কে ভুলিয়ে দেয়ার মত ক্ষমতা এই মস্তিষ্কের কাছেও নেই। আমি একজন মৃত্যুশয্যায় কাতর মা কে দেখেছিলাম। যে কি না নিজের শেষ নিঃশ্বাসের দিনগুলোতেও নিজের সন্তানদের কথা ভাবতেন। সব ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের মা’কে আর নিজের সন্তানদের ভুলেন নি। তাঁর বিলুপ্ত স্মৃতিশক্তিতেও তাঁর মা এবং সন্তান শেষ মুহূর্ত অব্দি ছিল। আর থাকবে।
মা হতে হলে লোকে বলে নিজেকে হারাতে হয়। নিজের স্বপ্ন ভাঙতে হয়। মা তো সেই কারিগর যার স্বপ্নের আঁচলে ঠাই পায় অনেকগুলো স্বপ্ন। শুধু মায়েরাই পারে নিজের চোখে সন্তানের স্বপ্ন বুনতে। নিজের দেহ চিড়ে অন্য একটা মানুষের জন্ম দিতে। নিজে না খেয়ে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে।
এত ত্যাগের পরও নিজেকে অসহায় কখনো ভাবে না। সন্তানের সুখে সুখী, সফলতায় সফল হয়, মা। সন্তানের মঙ্গলের জন্য কখনো হয় কোমল আবার কখনো দৈত্যের মতন। কে আছে আর এতটা আপন? কার কোলে এতো শান্তি? এতো নিরাপদ? কেই বা বাসে এতো ভালো। যার কোল জুড়ে আনন্দ আর আলো। পুরো পৃথিবী একদিকে আর অন্যদিকে মা।
আমরা সন্তানরা নিজেরা আগে বাড়তে বাড়তে মা কে অনেক পেছনে ফেলে আসি। সময় অসময়ে অবহেলার পথেও হেঁটে যাই। কিন্তু মা, কখনোই সেই পথে হাঁটেন না। সে পারেই না। নিজের দেহের অংশকে কে কোনদিন অবহেলা করতে পারে? সন্তান হিসেবে আমাদের ব্যার্থতা, মা কে অবহেলা করা। ভেবে দেখুন একদিন ঘরে যদি বাতাস না আসে, বা আপনার ঘরে অক্সিজেন না থাকে তাহলে আপনি কেমন বোধ করবেন? মায়ের বেঁচে থাকা অব্দি শুধু ডেকে যান,
মা, মা, মা।
কেননা একটা সময় পর মা ডাকার জন্য আত্মাটা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু মা থাকবে না। ফিরে আসবে না।যে টুকু আছে সময় সেটুকু মন উজাড় করে দিন।