সময়মত সাহায্য পেলে কিভাবে একটি জীবন বেঁচে যেতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ মুখ হতে মুখের সাহায্যে কৃত্তিম শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থা গ্রহণ।পানিতে ডুবে,কোন কারনে অক্সিজেনের অভাব,বৈদ্যুতিক শক,বিষপান বা গ্যাস গ্রহণ প্রভৃতি নানা কারনে শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে।যে কারণেই হোক শিশু কিংবা কিশোরকে কিংবা পুর্ণবয়স্ককে বাচাঁতে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে দ্রুত মুখ থেকে মুখে শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যবস্থা করতে হবে।
অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সঙ্গে শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধকে গুলিয়ে ফেললে হবে না।তাই প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে বুকের উঠা নামা বা কফের লক্ষণ আছে কিনা।না থাকলে ধাপে ধাপে মুখে মুখে শ্বাসপ্রশ্বাস কার্যক্রম চালু রাখতে হবে।
এর জন্য নিম্নে কিছু ধাপ লক্ষ্য করা যাক :
১) চিৎকার করে কাউকে অ্যাম্বুলেন্স বা ডাক্তার ডাকার অনুরোধ করতে হবে।
২)শিশুর জিভ সামনের দিকে টেনে দেখতে হবে মুখ-তালু-গলায় কিছু আটকে আছে কিনা।থাকলে আস্তে উপুর করে আঙুলের সাহায্যে বের করে আনতে হবে।
৩)শিশুকে শক্ত খাট,টেবিল বা মাটিতে চিৎ করে শুইয়ে দিতে হবে যাতে নাক সোজা আকাশের দিকে থাকে।এবার মুখ যতখানি খোলা যায় হ্যাঁ করতে হবে।এতে শ্বাসনালির ভেতর বাতাস ঢুকে সহসা শ্বাসপ্রশ্বাস শুরু হয়ে যেতে পারে।
৪)শ্বাসপ্রশ্বাস এর লক্ষ্যণ দেখা না গেলে মুখে-মুখে শ্বসনের ব্যবস্থা নিতে হবে।এ কাজের শুরুতে গভীর শ্বাস নিতে হবে।ছোট শিশু হলে তার নাক-মুখ ঢেকে নিজের মুখ চেপে ধরতে হবে।এর পর আস্তে আস্তে ফুঁ দিতে হবে,লক্ষ্য রাখতে হবে যেন রোগীর বুক সামান্য ফুলে উঠে।জোরে ফু দেয়া যাবে না,তাহলে শিশুর ফুসফুসের কোথাও ছিড়ে যেতে পারে।
একটু বয়স্ক শিশুর ক্ষেত্রে,একহাতে ওর নাক চেপে ধরে মুখের উপর মুখ স্থাপন করতে হবে।এভাবে দুবার ফুঁ দিতে হবে।
৫)ধাপ ৪ চলাকলীন কখনওবা রোগীর হৃদ্স্পন্দন থেমে যেতে পারে।এমন অবস্থায় দুবার প্রশ্বাস দেওয়ার পর রোগীর নারী চেপে দেখতে হবে।কনুইয়ের সামনে দুই আঙুলে হালকা চাপ দিয়ে নাড়ির অবস্থা বুঝতে হবে।সামান্য বয়স্ক শিশুর ক্ষেত্রে ঘাড়ে শ্বাসনালির পাশে আঙুলের চাপে নাড়ির স্পন্দন একেবারেই না পেলে বুকের মাঝখানে উরঃফলকে চাপ দিয়ে মালিশ করতে হবে।
6)ঘটনাস্থলে একাধিক মানুষ থাকলে একজন বুক মালিশ করবে,আরেকজন মুখ-মুখে শ্বাস চালিয়ে যেতে হবে।কম বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে 3 আঙ্গুল দিয়ে নিপলের ঠিক নিচে চাপ দিয়ে মলিশ করতে হবে।ঘরে যদি আর কেউ না থাকে তাহলে একবার মুখ-মুখে একবার শ্বাস দিয়ে ৫ বার মালিশ করতে হবে।আরেকটু বয়স্ক শিশুর ক্ষেত্রে বেশি চাপের প্রয়োজন হতে পারে,তখন হাতের তালুর গোড়া ব্যবহার করা যেতে পারে।মলিশের সময় বুক প্রায় দেড় ইঞ্চি পর্যন্ত চেপে নিচে নামিয়ে দিতে হতে পারে।নাড়ির স্পন্দন না পাওয়া পর্যন্ত কিংবা মৃত্যু নিশ্চিত না জানা পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে।
বিশেষ মুখ-মুখে শ্বাস প্রশ্বাস: অনেক সময় শিশু-কিশোর-যুবক বয়সি লোক পানিতে ডুবে মৃত্যু বরণ করে।যেকোন কারণেই হোক ডুবন্ত ব্যক্তিকে টেনে এনে উদ্ধারকারী ব্যক্তি কুলের কাছে এসে একটু দাঁড়ানোর জায়গা পেলে সঙ্গে সঙ্গে মুখ থেকে মুখে শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
কৃত্তিম শ্বাসপ্রশ্বাস:পানিতে ডোবা,বিদ্যুতিক আঘাত,কার্বন মনোঅক্সাডের বিষক্রিয়া ইত্যাদি কারণে শ্বাসক্রিয়ার ব্যাঘাত সৃষ্টি হলে যে বিশেষ কৌশলে কৃত্তিমভাবে ফুসফুসে বাতাস সরবরাহ করে গ্যাস বিনিময় ঘটানোর মাধ্যমে শ্বসন প্রক্রিয়া চালু রাখা হয় তাঁকে কৃত্তিম শ্বাসপ্রশ্বাস বলে।
সবাই সতর্ক থাকি। আর এই পদ্ধতিগুলো সবাইকে জানতে।কবে কখন কার বিপদ চলে আসবে জানা নেই।