বাবা অর্থের লোভে জোর পূর্বক আমাকে বিয়ে দিলেন এক হাতি সাইজ মোটি মেয়ের সাথে। এটাকে বিয়ে না বলে, বলা যায়, ক্যাংগারুর পিঠে হাতি চাপিয়ে দেওয়া।
অনেক ধুমধামের সাথেই বিয়ে হলো। সবাই কতো আনন্দে মেতে ছিলো, নাচগান, হইহুল্লোড়, সেলফি, কি খুশি সবাই। একমাত্র আমি ছাড়া। ফটোগ্রাফার বার বার বলছিলো, ভাইয়া একটু হাসুন। আমি এক পর্যায় বললাম, আমি হাসমুনা তোর কী? তুই ছবি তুললে তুল, না তুললে, না তুল।
আমার বউ বললো, এমন করেন কেনো, একটু হাসলে কি হয়। এই বলে একটা চিমটি কাটলো। মনে হলো, যেখানে চিমটি কাটছে ওখানকার মাংস উঠিয়ে নিয়ে গেছে।
মেয়ের পরিবারের সাথে ছবি তোলা শুরু হলো। যাকে বলে, ফ্যামিলি ফটো। মানে বিষয় টা এমন, অনেক গুলো হাতির সাথে একটা জিরাফ দাড়িয়ে আছে। ছবি তোলার পর্ব শেষে বিদায় দেওয়া হলো। বিদায় দেওয়ার সময় মেয়ের মা মেয়ে, আর আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলেন। আর আমাকে বললেন, বাবা আমার মেয়েকে আগলে রেখো, কখনো কষ্ট দিওনা। একমাত্র মেয়ে আমার। আমি কিছু বললো, সে সুযোগ কথায়। উনি আমাকে এমন ভাবে চেপে ধরে রেখেছেন, ঠিক মতো নিশ্বাসটায় নিতে পারছিনা। এর মধ্য আবার মেয়ের বাবা কাঁদতে কাঁদতে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন। আমার অবস্থা এমন যে, যেনো আমার গলা টিপে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর আমি হাত পা আছড়াচ্ছি। অবশেষে মেয়ের মামা উনাদের শান্তনা দেওয়ার জন্য ছাড়িয়ে নিলেন। নয়তো দম আটকে নিশ্চিত মারা যেতাম।
রুহি হাতি ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। আমি দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি। ভেতরে যেতে চাচ্ছি না। আরাফাত, বড় ভাবি, মামাতো বোনেরা ভেতরে যাওয়ার জন্য ঠেলছে। এর মধ্য আরাফাত বলে বসলো, যা দোস্ত, যুদ্ধ সংগ্রাম কাকে বলে দেখিয়ে দে ভাবিকে। বড় ভাবি মুচকি হাসলে ও মামাতো বোনেরা শব্দ করে হেসে উঠলো। আমি আরাফাতের কান আমার মুখের নিকট এনে বললাম, মনে আছে বন্ধু, স্কুল লাইফে তুই বলতি, বিয়ে করবি তুই কিন্তু বাসার করবো আমি। আমি তোকে কিল মারতাম। ভাই তোর পায়েপড়ি বাসর টা তুই কর। আরাফাত আমাকে অশ্লীল বলে, ধাক্কা দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
হাতের ঘড়ি খুলে টেবিলে রাখতেই, রুহি হাতি বললো, আমার খিদে পেয়েছে। আমি ফোন দিয়ে আরাফাত কে দুই প্লেট খাবার পাঠাতে বললাম। আম্মা আর আরাফাত এসে খাবার দিয়ে গেলো। আমি রুহিকে বললাম, তুমি শুরু করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
প্লেটের দিকে তাকিয়ে, আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছি। একটু ও অবশিষ্ট খাবার নেই। একা সব সাবাড় করে দিয়েছে। রাগে বললাম, তোর মতো পেটুক আমি জীবনে দেখনি। তুই তো পাইলে পৃথিবী খেয়ে ফেলবি। আমার জন্য একটু রাখলে কি হতো হাতির বাচ্চা। রুহি কোনো কথা ছাড়া এসে, আমার দু’পায়ের মাঝখানে লাথি মারলো। আমি এক রকম মুখ চেপে ধরে পড়ে গেলাম। মনে হলো কিছুক্ষণের জন্য নিশ্বাস নিতে পারলাম না। আসলে বাসর রাতে মেয়েরা একটু চিল্লালে ঠিক আছে। কিন্তু ছেলেরা চিল্লালে, সাথে সাথে দরজা ভেঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
ফ্লোরে পড়ে আছি। রুহি বললো, ওখানে আর পড়ে থাকবেন না। আজ আমাদের বাসার রাত, এই রাত চলে গেলে আর ফিরে পাবেন না। খাটে উঠে আসুন। আমি বললাম, চুপ থাক ডরিমনের বাচ্চা। বাসর কি দিয়ে করবো, কথাই লাথি মারছিস? একটা কথা বলে রাখি শোন, আমি হাতির সাথে বাসর করতে চায়না এবং কোনো দিন করবো না। রুহি রাগি গলায় বললো, কি বললেন আপনি? আমি কিছু বলতে যাবো, তার আগেই এসে পেট বরাবর কিক মারলো। আমি উড়ে গিয়ে দেওয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে ফ্লোরে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
সকাল ৮ টা। চা স্টলে, লম্বা বাঁশের মাচায় বসে আছি। আমার সামনের মাচায় এলাকার ছোট ভাই বসে আছে। তার ফোনে গান বাজচ্ছে, ছারে উমরে হাম, মার মারকে জিলিয়ে। এক পালতো আব হামে জিনেদো। গানটা ভালো লাগছে। দোকানী মতিন মামা বললো, মামা এই লন আপনের আদা দেওয়া রং চা। হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিতেই, আরাফাত এসে পিঠে থাবড়া দিয়ে বললো, বন্ধু কী অবস্থা। রাতে ঘুমটুম হয়নি মনে হয়?
আমি মতিন মামাকে আরেক কাপ চা দিতে বলে, আরাফাত কে বললাম, নারে জেগে ছিলাম। জীবনের সেরা রাতে কেউ ঘুমায়। আরাফাত, সব বুঝেগেছে এমন একটা হাসি দিয়ে বললো, তা তুই আজকে ধবধবে সাদা লুঙ্গি আর সাদা চাদর পরে আছিস কেনো? ওহ মনে পড়ছে। গভীর চিন্তার করলে তুই আবার এমন বেশ ধরে থাকিস। তা কি ভাবছিস এমন?
আমি দাড়িয়ে বুদ্ধি পাইছি বলে একটা চিল্লানি দিলাম। আরাফাত কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, লুঙ্গি লেংটি মেরে বাসার দিকে দৌড় দিলাম।
বাসার দরজা হালকা খুলে শিয়ালের মতো উঁকি দিলাম। না সবাই সবার কাজে বাস্ত। ছোট ভাই দেখলাম ব্যাট নিয়ে বাইরে খেলতে যাচ্ছে। ডাক দিয়ে বললাম, তোর মোটি ভাবি কথাই? ভাবি সহ সবাই ছাদে আড্ডা দিচ্ছি বলে ছোট ভাই চলে গেলো। আমি সাধারণ ভঙ্গিতে আমার রুমে ঢুকলাম। একটা চিঠি লিখলাম রুহি কে। প্রিয়, হাতি। আমি এ বাসায় থাকলে দূর্বলের উপর সবলের অত্যাচার চলতে থাকবে। তাই আমি পালিয়ে যাচ্ছি। ইতি, আপনার পলায়নকারী শুটকা জামাই। চিঠি লিখা শেষ হতেই, ঝটপট ব্যাগ গুছিয়ে, চোরের মতো পা টিপে টিপে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম।
ফোন বাজাচ্ছে। আরাফাতের ফোন। ফোন রিসিভ করে বললাম, কি হয়েছে বল? আরাফাত বললো, কিরে কথাই তুই? কিছু না বলে ওই ভাবে দৌড় দিলি কেনো? আমি বললাম, আমি বাসের ছাদে। বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছি। আরাফাত বললো, হায় হায় মানুষ বিয়ে করার জন্য বাড়ি থেকে পালায়। আর তুই বিয়ে করে বাড়ি থেকে পালাচ্ছিস কেনো? আমি কিছু না বলে, ফোন কেটে অফ করে দিলাম। আর একটা হাসি দিলাম। হাসি টার অর্থ এই, জ্ঞানিদের কাজ কারবার তুই কি বুঝবি।
সমাপ্ত।