সৃষ্টি থেকে শেষ অবধীর কেন্দ্রে রয়েছে নারী হাজার রূপ একটি নারীর, যেন রহস্যের ভান্ডারী, কখনো মা, বোন, নানী বা প্রিয়তমা স্ত্রী তাদের জন্যই সুন্দর ধরনী, স্রষ্টার করিগরী।[১] প্রাচীন কাল থেকেই নারী সমাজ ও ইতিহাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাদের ছাপ রেখে গেছে। সে সময় থেকেই দেখা যাবে কাব্যশিল্প, সাহিত্য, চিকিৎসা, দর্শন, গণিতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবদান রয়েছে। তারপরও আজকের বিশ্বায়নের যুগে দেখা যাবে নারীরা অনেক জায়গায় অবহেলিত। এই লিখাটার উদ্দেশ্যই পুরোটাই এদেশের প্রেক্ষাপট থেকে নারী শিক্ষার গুরুত্ব, ইতিহাস এবং অগ্রগতির দিকে আলোকপাত করা হবে।
ছোট একটা গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। শান্ত এবং মারিয়া ওরা ভাইবোন। দু’জনেই লেখাপড়া করে। ভাইটি বড়, বোটি দু’বছরের ছোট। লেখাপড়ায় বোন বেশি মেধাবী। গ্রামের পথ দিয়ে একসঙ্গে হেঁটে স্কুলে যায় দু’জন। ক্রমে বড় হয়ে ওঠে তারা। এসএসসি’তে যথেষ্ট ভাল ফলাফল করে বোনটি কিন্তু তারপরে সেই পুরানো গল্প। ভাল পাত্র পাওয়া যায় এবং একদিন বিয়ে হয়ে যায় মেয়েটির। এভাবেই সমাপ্তি ঘটে তার শিক্ষা জীবনের। বাংলাদেশের অধিকাংশ ঘরেই এই গল্প শোনা যাবে। [২]
অনেক সময় দেখা যাবে মেয়ের মা-ই বলছে, “মাইয়্যা বড় হইছে এতো পড়ালেখা করে কি হবে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে।“ বিয়ে দিতে দেরী করবে বা দিবে না সে কথা এখানে আসছে না বরং মেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা প্রাসঙ্গিক। কারণ বিয়ের পরও চাইলে পড়াশোনা করা যায় কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশে এ ট্রেডিশন গড়ে উঠে নি তাই বলা যায় সুশিক্ষায় শিক্ষিত একটা জাতি পারে সিস্টেমের মধ্যে পরিবর্তন আনতে। পরিস্থিতি হয়ত গত ২০ বছরের তুলনায় এখন বলা যায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে শহর অঞ্চলে দেখা যাবে মেয়েরা অনেক সচেতন তারপরও একটা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা এখনও পিছিয়ে আছে, মফস্বল বা গ্রামে এখনও আগেরমত রয়ে গেছে সব।
প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এখনও নারী-পুরুষের বৈষম্য রয়েছে যা প্রায় ৮.৬ শতাংশ । বাংলাদেশে মোট জনগোষ্ঠীর ৪২.৩ শতাংশ অসাক্ষর। নারীরা সাক্ষরতার হারে এখনও পুরুষের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জন
শিক্ষিত পুরুষের বিপরীতে ৮৫ জন শিক্ষিত নারী রয়েছে।[২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী] যা পূর্ববর্তীতে ১০০ তে ৬২ জন ছিল। দেশে মোট শিক্ষার হার ৫৭.৭% অনেদিকে নারী শিক্ষার হার ৫৩.৪%। [৩]
প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে ছেলেশিশু ও মেয়েশিশুর সংখ্যা ভর্তির সময় সমান হলেও মেয়েশিশুদের মধ্যে ড্রপআউট বা ঝরে পড়ার সংখ্যা বেশি। ৩৩ শতাংশ মেয়েশিশু প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই ঝরে পড়ে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার ১৭.৭২% এবং মাধ্যমিক ৪৫.৮০ ভাগ। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মেয়েদের ভর্তির হার এখনও পুরুষের তুলনায় কম। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষায় নারীদের ভর্তির হার অনেক কম। কৃষি ও প্রকৌশল শিক্ষায় মেয়েদের সংখ্যা মাত্র ৯ শতাংশ। ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে যা অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এই উপবৃত্তির বিভিন্ন শর্তে মানা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রী উপবৃত্তির ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ। উপস্থিতি, ৪৫ শতাংশ নম্বর প্রাপ্তি, অবিবাহিতা থাকা ইত্যাদি আবশ্যিক পূর্বশর্ত মানা হয় না বলে অনেক অভিযোগ রয়েছে। ফলে, আর্থিক সুবিধার জন্য ছাত্রী ভর্তির হার বৃদ্ধি পেলেও তারা মানসম্মত শিক্ষা অর্জন
করতে সক্ষম হচ্ছে না।[২]
কেন নারী শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ?
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, “আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি উন্নত জাতি বিনির্মানের নিশ্চয়তা দিচ্ছি।“ যাই হোক, বর্তমানে আমাদের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় আমাদের এসব বাস্তবতা একেবারে মুছে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। গ্লোবাল সবাজে বসবাস করা সত্ত্বেও আমরা বসে রয়েছি এবং পিছিয়ে পড়াটাকে সুযোগ দিচ্ছি। এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, “যে কোন স্থানে যখনই কোন মানুষ নির্যাতিত, নিগৃহীত, নিপীড়িত বা উৎপীড়নের স্বীকার হয় তার অধিকার আছে তখন চুপ করে থাকা বা প্রতিবাদ করার।“[৪]
সময় আমাদের তৈরী করে নিতে হবে জাতিকে সামনে এগিয়ে নিতে এবং একটা স্বনির্ভর উন্নত দেশ গড়তে। তো সবকিছুর জন্য নারী শিক্ষা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
নারী শিক্ষা শিশু মৃত্যুর হার কমায়
এক গবেষণায় দেখা গেছে যদি পৃথিবীর সব নারীর গড়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা থাকতো তাহলে শিশু মৃত্যু অর্ধেকে নেমে আসতো, যা প্রায় ৩০ লক্ষ শিশুর জীবন বাঁচাত। আমাদের দেশে যদি সুশিক্ষায় শিক্ষিত নারী সমাজ থাকতো দেশের পরিবেশই হয়ত অন্যরকম থাকতো। ক্রিস্টিনা ট্রেইলর এক কলামে লিখেছিলেন, “সকল শিশুরা গুরুত্বপুর্ণ, তারা একই অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার যোগ্য, তারপরও যেহেতু একজন মেয়ে শিশু দুইবার বৈষম্যের শিকার হয় এক মেয়ে এবং দুই শিশু হওয়ায় তাই আমাদের বিশেষ করে তাদের বিভিন্ন নিয়মনীতিতে অগ্রাধিকার না দেওয়া এবং তাদের অসুবিধার প্রতি নজর দিতে হবে।“[৫]
শিক্ষিত মা শিশুর পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিত করে
ইউএনইএসসিও এর তথ্যানুসারে, যদি নারীদের মাধ্যমিক শিক্ষা সবার থাকতো তাহলে প্রায় ১২ মিলিয়ন শিশু অপুষ্টি এবং অসামঞ্জস্য শারীরিক বিকাশ ও বৃদ্ধি থেকে রক্ষা পেত। গবেষণায় আরো উঠে এসেছে এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক শিশুর ৫ বছরের আগেই অকাল মৃত্যু হয় এসব অপুষ্টি জনিত কারণে, এটা অনস্বীকার্য যে যে সব নারীরা মা হবে তাদের শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।[৬] শিক্ষার অভাব বিশেষ করে সুশিক্ষার অভাবে জাতির অগ্রগতি আশানুরূপ হচ্ছে না। নারী শিক্ষা শুধু যে তাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করবে তা নয় বরং নারী ক্ষমতা ও তাদের জীবন সম্বন্ধে সচেতনতা বাড়াবে যা অদূর ভবিষ্যতে আমাদেরই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।
নারী শিক্ষা মাতৃ-মৃত্যু কমায়
পরিসংখ্যান অনুসারে দেখা যায় প্রায় ১৫.৩ কোটি শিশু সাবালক হওয়ার আগে তাদের বাবা-মা উভয় বা কোন একজন অবিভাবক হারায়। এ মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা ১৫.৩ কোটি থেকে মাত্র ৯৮ হাজারে নেমে আসবে যদি প্রত্যেক মা প্রায় কম করে হলেও প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে থাকে। প্রতিটি শিশু তার পিতামাতার ভালোবাসা ও স্নেহে বেড়ে উঠার অধিকার রাখে, নারী শিক্ষায় পিছিয়ে থাকার কারনে আমরা মাতৃহারা শিশুর সংখ্যা বাড়িয়ে তুলছি। নারীরা বিভিন্ন সুবিধাজনক কাজে অংশগ্রহন করে তাদের পরিবারে আয় যোগ করার পাশাপাশি সম অধিকারও বাস্তবায়ন করবে।[৬] সমঅধিকার যেমন প্রয়োজন তেমনি নারীদের ঘরে থাকা এবং পরিবারের যত্ন নেওয়াও প্রশংসনীয় কিন্তু এটা তাদের ব্যক্তিগত পছন্দের উপর থাকাটা উত্তম।
অনেক মহিলা অসুখী এবং নিরাপত্তাহীন থাকে বিবাহের পরও কারন তার হাতে কোন সুযোগ থাকে না, শিক্ষার অভাব, স্কিলের অভাব তাদের কিছু করার বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেয় না। এসব কারনে দেখা যাবে দরিদ্র পরিবারে যদি কারো স্বামী মারা যায় তাহলে খুবই কষ্টকর জীবন কাটাতে হয়। তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন কারনে নারীরা ঘরে বাইরে নির্যাতিত হয়, শিক্ষিত নারীরা তাদের অধিকার নিয়ে সচেতন হবে এবং সুন্দর একটা জীবন তারা গড়তে পারবে। মানবাধিকার শিক্ষা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
Cristina Trailor said, “Girls’ education is about so much more than knowledge. By ensuring that a girl has equal access to education, employment and
adequate health care, the bene_ts will be passed on to her children (both boys and girls), community and her country.” [৫]
আমাদের সমাজে বেশিরভাগ নারী শুধুমাত্র পাশ করার জন্য শিক্ষা গ্রহন করে থাকে। অথচ এটা মোটেও কাম্য নয়। বরং শিক্ষা গ্রহন করা উচিত তাদের নিজেদের জীবনকে সাজাতে, একটা পরিবার গড়তে বা একটা ভবিষ্যৎ।
“Change will not come if we wait for some other person or some other time. We are the ones we’ve been waiting for. We are the change that we seek.”
– Barack Obama [৫]
ইসলামে নারী শিক্ষার গুরুত্ব ও ইতিহাস
ইসলাম নারীদের যেমন সম্মান দিয়েছে তেমনি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। কারণ, নারী পুরুষের মতোই সমানভাবে শরিয়তের দায়িত্বপ্রাপ্ত তেমনি পরকালের বিনিময় লাভের ক্ষেত্রে উভয়ের অধিকার সমান। ইসলামের বিধান হুকুম আহকামের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের মতই সমান। তবে কিছু বিধান, যেমন পর্দা, অবাধ মেলামেশা, তাদের পারিবারিক দায়িত্ব ইত্যাদি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, “তারপর আল্লাহ্ তাদের দোয়া কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীদের পরিশ্রম নষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা নারী।“ (আল ইমরান-১৯৫) মহান আল্লাহ্ আরো বলেন, “যে লোক পুরুষ হোক কিংবা নারী, কোন নেক কাজ করে এবং মোমেন হয়, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের উপর সামান্যও জুলুম করা হবে না।“ (আন নিসা-১২৪)
ইসলামে মেয়ে সন্তানের শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ মর্মে হাদীসে বর্ণনা আছে, রাসূলুল্লাহ(সা.) “যার তিনটি কন্যা সন্তান বা বোন আছে, কিংবা দুটো কন্যা সন্তান বা বোন আছে, সে যদি তাদের শিক্ষা দেয়, তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করে, এবং তাদেরকে বিয়ে দেয়, তার জন্য জান্নাত রয়েছে।“ (তিরমিযী, আবু দাঊদ) রাসূলুল্লাহ (সা) নারীদের জন্য কিছু দিন নির্দিষ্ট করতেন এবং তাদেরকে শিক্ষা দিতেন। বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত, এক মহিলা নবী করিম (সা.) এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, পুরুষেরা আপনার কাছ থেকে হাদীস শুনে থাকে। আপনি আমাদের জন্য একটি দিন ধার্য করুন, আমরা সেদিন আসবো, আপনি আমাদেরকে তাই শিক্ষা দিবেন যা আল্লাহ্ আপনাকে শিখিয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেন, অমুক দিন আসো। আমরা সেদিন আসলাম, আল্লাহ্ যা তাঁকে শিখিয়েছেন তিনি তা থেকে আমাদের শিখালেন।
আল্লামা বালাজুরী তার এক বইতে লিখেছিলেন, জাহেলিয়াত যুগে হাফসা বিনতে ওমার (রা) শিফা আদওয়াহ নাম্মী এক লেখিকার মহিলার কাছে লেখা শিখতেন। নবী করিম (সা) হাফসাকে বিয়ে করার পর শিফার কাছে আহ্বান জানান যেন উম্মুল মোমেনীন হাফসা (রা) কে সুন্দর ও উত্তম লেখা শেখান। কেননা হাফসা মৌলিকভাবে তার কাছেই প্রাথমিক লেখা শিখেছেন।
ইতিহাসে দেখা যায় নারীরা ইসলামের প্রাথমিক যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানের শীর্ষে পৌঁছেছিলেন। যেমন, খলীফা মাহদীর মেয়ে ওলাইয়া, খলীফা মোস্তাকফি বিল্লাহর মেয়ে ওয়াল্লাদাহ এবং আহমদ বিন কাদেমের মেয়ে আয়েশা প্রমুখ অন্যতম কবি ও সাহিত্যিক ছিলেন। মহিলা মোহাদ্দেছের সংখ্যা অনেক ছিল। যেমন, করীমাহ মারওয়াযিয়াহ, নাফিসা বিনতে মোহাম্মদ প্রমুখ। মোহাদ্দেস হাফেজ ইবনু আসাকের বলেছেন, তার মহিলা শিক্ষিকার সংখ্যা ৮০ এর অধিক ছিল। এছাড়াও ঈমাম শাফেঈ, ইমাম বোখারী, ইবনে খাল্লিকান, ইবনু হিববানের মত ফেকাহবিদ, হাদীস বিশারদ, সাহিত্যিকদের বহু মহিলা শিক্ষিকা ছিলেন। জ্ঞান বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায়ও বহু বিদূষী মহিলা ছিলেন ও আছেন। [৭]
ইসলাম নারীদের আল্লাহ্ নির্দেশিত জ্ঞান অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের স্বীকৃতি দেয়। হাদীসের বর্ণনা অনুসারে যেমন আমরা নারীদের পুরুষের মতই সমান ভাবে জ্ঞান অর্জন করতে দেখা যায়, তেমনি ইসলামে নারীদের শুধু অল্প বিস্তর শিক্ষাতেই সীমাবদ্ধ দেখা যায় না বরং পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, ক্বারাউইন বিশ্ববিদ্যালয় যা ফেয (মরক্কো) শহরে অবস্থিত, ফাতিমা আল ফিহরিয়া, একজন তিউনিশিয়ান মুসলিমাহ, খ্রিষ্টীয় নবম শতকে প্রতিষ্ঠা করেন।
মুহাম্মদ আকরাম নাতভি, অক্সফোর্ড সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজ এ, গত ২৫ বছর ধরে এক গবেষণা করেছেন মুসলিম নারী স্কলারদের ভূমিকা নিয়ে। তার গবেষণায় ৮৫০০ জ্ঞানী গুনী নারীদের তালিকা উঠে এসেছে, বিশেষ করে ইসলামের প্রাথমিক দিনগুল থেকে, এমনকি যখন ১২শ শতকে ক্রুসাডের যুদ্ধের দামামা চলছিল তখনও নারীদের দেখা গিয়েছে দামেস্ক, মদিনা, কায়রো এবং জেরুজালেলেমেও শিক্ষার প্রসার করেছেন।[৮]
জ্ঞান বিজ্ঞানে মুসলিম নারীদের অবদান
মুসলিম নারী জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখেন, প্রাথমিক যুগে যেমন ফিকহ, সাহিত্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীদের অবদান লক্ষ্য করা যায় তেমনি অনেক উৎস পাওয়া যায় যেখানে নারীরা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেও অবদান রাখেন। এখানে এমন ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেওয়া মুসলিম নারীদের অবদান আলোচনা করা হবে।
গবেষণায় উঠে এসেছে ইতিহাসে স্থান করে নেওয়া কিছু বিখ্যাত নারী যারা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা, দাতব্য সংস্থা, শিক্ষামূলক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। কিছু উদাহরণ যেমন, যুবাইদা বিনতে জাফর আল-মনসুর যিনি তৎকালীন সময়ে খাল খনন ও বাগদাদ থেকে মক্কা পর্যন্ত রাস্তার পাশে সরাইখানা নির্মানের পথিকৃৎ। সুতায়রা, যিনি একজন গণিতজ্ঞ এবং রাজসভায় বিচারকাজে পারদর্শী ছিলেন। যায়ফা খাতুন, যিনি ব্যবস্থাপনা ও রাষ্ট্র পরিচালনায় খুবই দক্ষ ছিলেন। ফাতিমা আল ফিহরিয়া মরোক্কোর ফেয এ বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন, অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ার আল-ইজলিয়া আলেপ্পোতে জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষণাগার নির্মান করেন। তারা কি ইতিহাস গঠনে অগ্রণী ছিলেন না, অথচ কয়জন জানি সেই ইতিহাস? কয়জন জানি ইতিহাসের এসব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো। বরং ফেমিনিজম, পশ্চাতের মিডিয়ার দেখাদেখি নারী সমতা সম অধিকার বলে চিৎকার করে ঘর থেকে বের হওয়া জানি?
ইতিহাসের পাতায় যেসব নারীঃ হাইপেশিয়া (৩৭০-৪১৫প্রায়) যিনি একাধারে গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, দার্শনিক এবং একজন শিক্ষক ছিলেন। যিনি মিশরের আলেক্সাদ্রিয়া থেকে তার জ্ঞানের বানী ছড়িয়ে দিয়েছেন পৃথিবীব্যাপী। ঠিক একইভাবে মিশরের ক্লিওপাট্রা(৬৯ খ্রিষ্টপূর্ব প্রায়) আরবের বিভিন্ন নথিতে যাকে এতো ক্ষমতাবান বলা হয়েছে যিনি তার রাজ্য পরিচালনা করতেন খুবই রক্ষনশীলভাবে। যিনি একাধারে যেমন সে যুগের সবচেয়ে সুন্দরী ছিলেন তেমনি একজন কূটনীতিক, নৌকমান্ডার, ভাষাবিদ এবং চিকিৎসক। তাদের মত মুসলিম নারীরাও অনেক অগ্রণী ছিল জ্ঞান বিজ্ঞানে, আয়শা বিনতে আবু বকর, রাসূল(সা) এর স্ত্রী, প্রসাশনিক বিশেষ জ্ঞান ছিল। তাছাড়া তিনি একাধারে হাদীসের স্কলার, আঈনশাস্ত্রবিদ, একজন শিক্ষক এবং একজন বাগ্নী ছিলেন। সাবিহা গোকসেন(১৯১৩-২০০১) আধুনিক যুগের মুসলিম নারী যিনি পৃথিবীর প্রথম নারী পাইলট ছিলেন, তিনি তুরস্কের এভিএশন ইনস্টিটিউটের চিফ ট্রেইনার ছিলেন। [৯]
সাম্প্রতিক গবেষনায় প্রাপ্ত তথ্যঃ গত কয়েক বছর যাবত ড. মোহাম্মদ আকরাম নাদভী আল মুহাদ্দীছাত নিয়ে গবেষণা করেছেন যেখানে ৪০টির বেশি ভলিউমে উঠে এসেছে ইসলামি সমাজে জটিল হাদীস, ফতওয়াতেও জ্ঞানী হাজারো নারীদের অবদান। আইশা আবদুর-রহমান বেওলি প্রকাশিত ডিকশনারি অফ উইমেন এ দেখা যায় সে সময়ে অনেক নারী জ্ঞান বিজ্ঞান এর পাশা পাশি ব্যবসায়ও অগ্রণী ছিল, যেমনটি ছিলেন হযরত খাদিজা (রাঃ)। যেখানে নবী(সা) থেকে ১৩-১৯ শতক পর্যন্ত নারীদের বর্ণনা রয়েছে। ডিকশনারি অফ উইমেন এও দেখা যায় অনেকে বর্ণনা করেছেন তাদের সাথে কতজন নারী পড়াশোনা করতো, যেমন ইবনে হাজার এর সাথে ৫৩ জন নারী পড়ত, আস সাখাবির সময় ৬৮ জন বা আস সুয়ুতি সাথে ৩৩ বর্ননায় আছে। মধ্য যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন ছিল সে তুলনায় সংখ্যা গুলো অনেক। [৯]
সাধারণ শিক্ষায়ঃ আন্দালুসের যুবরাজ আহমেদ এর মেয়ে আয়শা যার ছন্দ ও বাগ্নীতা এত সারা জাগানো ছিল তাঁকে কর্ডোবার দার্শনিক বলে আখ্যায়িত করা হত। ওয়াল্লাদা (ভাল্লাদা) আলমোহাদ খালিফাতের রাজকন্যা তিনি এতো মেধাবী ছিলেন কোন প্রতিযোগিতায় তিনি হারেন নি, তার ভাষায় ছিল গভীরতা, পরিচিত ছিলেন তার কবিতা ও আড়ম্বরপূর্ণ ভাষার জন্য। স্পেনের সেভিল্লের আল ঘাসসানিয়া এবং সাফিয়া যাদের কবিতা এবং বাগ্নিতা যেমন জনপ্রিয় ছিল তেমনি তারা খুব সুন্দর ক্যালিগ্রাফী আকতো, যা পুরো আন্দালুসে বিখ্যাত ছিল। উম্ম আল সাদ ইসলামী সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনার জন্য বিখ্যাত ছিলেন।
কর্ডোবার লাবানা সঠিক বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি জ্যামিতি, বীজগণিতে ও সাধারণ সাহিত্যে তার পারদর্শিতা ছিল, সে সময় তিনি খালিফা আল হাকাম-২ এর ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন।
ইবনে আল নাদিম, আল ফিহরিস্ট বইতে নারীদের জ্ঞানকে দুভাগে ভাগ করেন, যারা সাধারণ বিভিন্ন জ্ঞানে দক্ষ ছিল আর যারা আরবী ভাষা সাহিত্যে দক্ষ ছিলেন। যেমন আবু নুবাসের মত অনেক কবি মরুভূমিতে সময় কাটিয়েছেন অবস্থানকারীদের সঠিক আরবি ভাষা শিক্ষা দেওয়ার জন্য। তেমনি আল ইজলিয়া বিনতে আল ইজলি আল-আস্টুরলাবি প্রতিষ্ঠিত এস্ট্রোল্যাব আলেপ্পোতে এপ্ল্যাইড সাইন্সের একটি বিভাগে সম্মানিত ছিল, ক্যালিগ্রাফী উন্নয়ন সেখানেও নারীদের ভূমিকা দেখা যায়।[৯]
চিকিৎসা বিজ্ঞানেঃ ইতিহাসের অন্যান্য স্থানের পাশাপাশি রাসূল(সা) এর সময়ও নারীরা চিকিৎসা বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নে। রুফায়দা বিনতে সাদ আসলামিয়া ইসলামের ইতিহাসে স্থান পাওয়া প্রথম নারী যিনি একাধারে একজন নার্স এবং ঔষধ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। যিনি রাসূল (সা) এর এসময় বদরের যুদ্ধে আহতদের চিকিৎসা করেন। আল শিফা বিনতে আবদুল্লাহ, সে সময়ের শক্তিশালী একজন জ্ঞানী নারী ছিলেন। তার চিকিৎসা পদ্ধতি রাসূল(সা) গ্রহন করেন এবং অন্য নারীদের শিক্ষা দিতে বলেন। নুসায়বা বিনতে হারিস আল আনসারি, যিনি উহুদের যুদ্ধে আহত সৈনিকদের চিকিৎসা সেবা করেন। উম্ম সিনান আল ইসলামি মুসলিম হয়ে মুসলিম আহত যোদ্ধাদের সেবা করেন, তেমনি উম্ম মাতাবি আল আসলামিয়া খয়বারের যুদ্ধে, উম্ম বারাকা বদরের যুদ্ধে তাদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। ঠিক তেমনি আধুনিক যুগে উসমানীয় শাসন আমলেও এমন অনেক নারী পাওয়া যাবে যারা ইতিহাসে অন্যোন্য হয়ে আছেন। সেরেফেদ্দিন সাবুনকুগ্লু(১৩৮৫-১৪৬৮), একজন তুর্কিশ সার্জন, সার্জারি ম্যানুয়াল Cerrahiyyetu’l-Haniyye রচনার জন্য বিখ্যাত, তিনি বইতে লিখেছেন তার সহকারী মহিলা সার্জনের সাথে তিনি কাজ করতেন, তাছাড়া কিছু বর্ননা বিশেষ করে মহিলাদের সমস্যা নিয়ে সেগুলো তার মহিলা সার্জনের লিখা ছিল। তাছাড়া সেসময় আনাতলিয়ায় মহিলাদের আলাদা সমস্যা গুলোর জন্য আলাদা নারী চিকিৎসক ছিল। [৯]
গণিত শাস্ত্রেঃ গণিতের জন্ম যেমন মুসলিমদের হাত ধরে তেমনি প্রথম থেকেই গণিতের বিভিন্ন ফলিত শাখায় আমাত আল ওয়াহিদ, সুতাইতা আল মাহামালি, লাবানা এর মত অনেক নারী গণিতজ্ঞের উদাহরণ পাওয়া যায়। সুতায়তা আল মাহামালি দশম শতকে বাগদাদের এক শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। সুতায়তা যেমন আরবি সাহিত্য, হাদীস, আঈনশাস্ত্রে দক্ষ ছিলেন তেমনি গণিতেও ছিল তার শ্রেষ্ঠত্ব। তিনি পাটিগণিত এবং উত্তরাধিকার সম্পদ হিসেবে গণিত প্রয়োগ করতেন। বলা হয়ে থাকে তিনি সমীকরণ সমাধানের প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছিলেন এবং পরে তা বীজগণিতে প্রবণতা লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে কর্ডোবার লাবানা জটিল জ্যামিতিক ও বীজগণিতিক সমীকরণ সমাধান করতে পারতেন।
তাছাড়া অন্যদিকে ইবনে আল নাদিমের বর্ণনায় ১৬ জন প্রকৌশলী নারী পাওয়া যায় যারা জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরী করেন, তাদের মধ্যে আল ইজলিয়া এবং আল ইজলি আল উস্তুরবি অন্যতম উভয় বেতলাসের ছাত্রী ছিলেন। তারা সে যুগের সব থেকে ভালো প্রকৌশলী ছিলেন। মরিয়ম আল যিনয়ানি (৭৫৮খ্রিষ্টাব্দ) যার রসায়ন শাস্ত্রে অসামান্য পারদর্শিতা ছিল। [৯]
মুসলিম নারীরা বিশেষ করে সম্ভ্রান্ত নারীরা সেসময় বিভিন্ন কাজে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন যা সভ্যতা ও বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখে, কেউ হয়ত সরাসরি মসজিদ, বিদ্যালয় বা হাসপাতাল বানিয়েছেন আবার কেউ সামনে না এসেও ভূমিকা রেখেছেন।
খলিফা হারুন আর রশিদের স্ত্রী যুবায়দা বিনতে আবু জাফর তার সময়ে অন্যতম ধনী এবং ক্ষমতাবান নারী ছিলেন। তিনি বাগদাদ থেকে মক্কা যাওয়ার পথে অনেক সরাই খানা পানি সরবরাহের কুয়া এবং তার সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ খাল খনন করেন পাশাপাশি তিনি অনেক স্থাপন নির্মান করে বিভিন্ন শহরে। মক্কার সীমান্তে সে খালগুলো এখনও তার নাম স্মরণ করিয়ে দেয়।
ফাতিমা আল ফিহরিয়া ৮৫৯ সালে মরোক্কোর ফেয শহরে যে বিশবিদ্যালয় নির্মান করেন বহু দূর দেশ থেকে ছাত্ররা আসতো ইসলাম শিক্ষা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ভাষা ও বিজ্ঞান শিক্ষা নিতে। যায়ফা খাতুন, আল যাহির গাজির স্ত্রী, যিনি আলেপ্পোতে ৬ বছর রাণি ছিলেন, সে সময় তিনি মঙ্গল, ক্রুসেড, সেলজুক এবং খুয়ারজমেইন্দের থেকে রাজ্যকে রক্ষা করেন। সেই সাথে তিনি আল ফিরদাউস ও খানকাহ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বিখ্যাত, তিনি গরীবদের জন্য দাতব্য সংস্থা, বিজ্ঞানীদের ফান্ড দেওা এবং একজন বিশিষ্ট স্থাপত্য পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। [৯]
হুররেম সুলতান, উসমানীয় সুলতান সুলেমান এর সব থেকে প্রিয় উপস্ত্রী ছিলেন। তার জীবকালে তিনি বিভিন্ন দাতব্য কাজ, ইস্তানবুলে মসজিদ, Haseki Külliye কমপ্লেক্স, অনেক প্রতিষ্ঠান যার মধ্যে মসজিদ, মাদ্রাসা, বিদ্যালয়, ইমারেত( হোটেল টাইপ), কিফতে হাম্মাম( মহিলা ও পুরুষদের জন্য আলাদা গোছল খানা), মক্কা ও জেরুজালেমে মসজিদ বিদ্যালয় নির্মানের মাধ্যমে ইতিহাসে উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে আছেন।[৯]
রাজনীতি ও শাসনেঃ ইসলাম কোন নারী খলিফা বা ইমাম হওয়া সমর্থন করে না যাইহোক প্রসঙ্গ সেটা নয় কিছু নারী দেখ যায় যারা দেশ পরিচালনা করেছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে। সিতত আল মুলক মিশরের ফাতেমিয় রাজকন্যা ছিলেন। তার পদবী ছিল নায়েব আস সুলতান। শাজারাত আল যুরর মামলুক সময়ে ১২৫০ খ্রিষ্টাব্দ এর দিকে মিশরের সুলতানা ছিলেন। সুলতানা রাযিয়া ১২৩৬-১২৪০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দিল্লীর সুলতানা ছিলেন এবং তিনি ভারতীয় উপমাহাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। নাইজেরিয়ার যারিয়ার আমিনা ১৫ শতকের দিকে আফ্রিকায় তার সামরিক ভূমিকা রাখেন, এবং যাযুয়ার রাণি হন। [৯]
মুসলিম নারীরা কখনও পিছিয়ে ছিলেন না বরং জ্ঞান বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন। যদিও বলা হয়ে থাকে ইসলাম নারীদের সুযোগ দেয় নি তা একদম ভুল কথা, বরং আগেরদিনে যোগাযোগ ব্যবস্থার অউন্নত থাকার ফলেও এসব নারীরা স্থান করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। অনেক আগে একটা গল্প পড়েছিলাম আব্বাসীয় এক যুবরাজ বিয়ে করার জন্য রাজ্যে পাত্রি দেখা শুরু করেন। তিনি এক অনুষ্ঠান আয়োজন করলেন, সেখানে থাকা পাত্রীদের মধ্যে জানতে চাইলেন কুরআনের হাফেজা কে দেখলেন প্রায় সবাই-ই। তারপর জানতে চাইলেন হাদীসের জ্ঞান দেখলেন সেখানেও অনেক এভাবে বিভিন্ন জ্ঞানের ভিত্তিতে তারপর তিনি সর্বোচ্চ জ্ঞানী পাত্রীকেই বেছে নিলেন। বলা হয়ে থাকতো তখনকার সময় গভীর রাত পর্যন্ত অধিকাংশ ঘরে বাতি জ্বলত, পাশে গেলে গুনগুন পড়াশোনা বা কুরআন তিলওয়াতের শব্দ পাওয়া যেত।
………
এ লিখার সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য হল, এদেশের নারীদের যেন সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। কারণ এতে করে যেমন তারা নিজেদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন হবে তেমনি জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে। সুশিক্ষিত একজন নারী নিজের ধর্ম সম্বন্ধে জ্ঞানী থাকে তাই কুসংস্কার থেকে অনেক দূরে থাকবে আমাদের সমাজ যেহেতু নারীরা বেশি কুসংস্কারাছন্ন। অন্যদিকে নিজেদের সঠিক ইতিহাস জানলে ফেমিনিজম সহ পারিবারিক ফাটল কমবে। সুশিক্ষিত নারী বেহায়াপনা, অশ্লীলতায় জড়াবে না ফলে ধর্ষণ সহ হ্যারাজমেন্ট কমবে। কাজ করতে হবে সেটা বড় কথা নয় বরং সমাজের মধ্যে গতিশীলতা আসবে পাশাপাশি তার প্রাপ্য সঠিকভাবে আদায় করতে পারবে। শুধু যে তারা লাভবান হবে তা কিন্তু নয় বরং পুরো দেশ এতে লাভবান হবে। কনভেনশনাল শিক্ষা শুধু নয়, আমাদের ইতিহাস, দর্শন, ধর্মও জানতে হবে। যে মেয়ে পড়তে চায় তাঁকে পড়তে দেয়া উচিত বলে মনে করি পাশাপাশি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়ও কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন মনে করি। আধুনিক যুগের ইতিহাস আমরা সবাই জানি তাই এখানে কিছু ভিতরের ইতিহাস আলোচনা করা হল। সব কথার শেষ কথা, আমরা একটা সুন্দর সমাজের প্রত্যাশা করি। দেশটা গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবারই।
তথ্যসূত্র:
১. প্রজন্ম বাংলা ব্লগ। ২. দৈনিক সংগ্রাম। ৩. বাংলা উইকিপিডিয়া। ৪.Inspired Adventure Blog ৫. Plan International Australia ৬. UNESCO, UNFPA, and UNICEF Australia. ৭. নারী শিক্ষার গুরুত্ব-এ এন এম সিরাজুল ইসলাম ৮. The Guardian Newspaper ৯. তথ্যগুলো Muslim Heritage থেকে নেওয়া।