এখনকার প্রজন্মের শিশুদের ভবিষ্যত কোথায় যাচ্ছে অথবা কোথায় যাবে তা নিয়ে কম বেশি আতঙ্ক সবার মাঝেই | বিশেষ করে এখনকার প্রজন্মের বাবা মায়েরা শিশুদের নিয়ে আতংকিত থাকলেও তারা তাদের ছেলে মেয়ের দিকে তেমন খেয়াল দিচ্ছেন না | বলতে গেলে প্রায় প্রত্যেক বাবা মা শিশুকে অবসর সময় কাটানোর জন্য গল্পের বই , ছবি আঁকার বই ,রং পেন্সিল,রং তুলি এবং খেলনার জায়গায় হাতে তুলে দিচ্ছেন বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস | যার কারণে এখনকার শিশুরা তাদের রঙিন শৈশব হারাতে বসেছে বললেই চলে |
একসময় আমাদের ছেলেবেলা ছিল যখন আমরা পড়াশুনার মাঝে একটু অবসর পেলেই হাতে তুলে নিতাম ছবি আঁকা বিভিন্ন গল্পের বই,রং তুলির ছোঁয়ায় ছবি আঁকার বইটি রঙিন করে তুলার মাধ্যমে পার হতো অবসর সময়গুলো , বিকাল হলেই মায়ের কাছে অনুমতি নিয়ে ছুটে যেতাম সবুজ মাঠে অথবা খোলা ছাদে যেখানে দল বেঁধে খেলা হতো কানামাছি ,লুকোচুরি ,ছোঁয়াছুঁয়ি,মাংস চোর কখনো বা ফুল টোক্কা,|
বর্তমান যুগের বাচ্চারা হয়তো এসব খেলার নামই জানে না | তাদের এসব জানার প্রতি নেই কোনো আগ্রহ | তাদের ইচ্ছে হয়না রংতুলির ছোঁয়ায় ছবির বইগুলোকে রঙিন করে তুলতে,ইচ্ছে করে না ছবি আঁকা গল্পের বইগুলো একবার ছুঁয়ে দেখতে | তারা সারাক্ষন ব্যস্ত হয়ে থাকে মোবাইল , ট্যাব, বিভিন্ন রকম ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস নিয়ে | এখনকার বর্তমান বাবা মা দেখা যায় তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে তাদের সন্তান মোবাইল এ কার্টুন এর পরিবর্তে কি দেখছে অথবা স্কুল এর নাম করে শিশুটি কোথায় যাচ্ছে , আদব কায়দা ঠিকভাবে শিখছে কিনা এসব নিয়ে মাথাব্যথা দেখান না |
এখনকার বেশিরভাগ বাবা মা শিশু যেন কর্মব্যস্ত সময়ে তাদের বিরক্ত না করে তাই তারা বেশির ভাগ সময়ে শিশুদের হাতে ছোটকাল থেকেই তুলে দেয় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক গ্যাজেট | এখনকার শিশুরা ইন্টারনেট কানেক্ট করার মাধ্যমেই সব হাতের মুঠোয় পেয়ে যায় | তাই তাদের ইচ্ছা হয়না সবুজ ঘাসের উপর দৌড়াতে | তারা কখনো জানে না দলবেঁধে খেলার আনন্দ কতটা , তারা জানেই না বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আসার পর মনের স্মৃতিপট, কল্পনার জগতে ডুব দিয়ে রং তুলির ছোঁয়ায় কত সুন্দর ছবি আঁকা যায় | তাদের ভালো লাগেনা গলা ছেড়ে গান গাইতে , ইচ্ছা করে না গল্প কবিতা লিখতে অথবা প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াতে | তাদের জগৎটাই যেন শুধু হাতে থাকা ওই গ্যাজেট এর মাঝে আবদ্ধ |
প্রতিটা বাবা মায়ের প্রতি অনুরোধ দয়া করে আপনার সন্তানের প্রাপ্ত বয়স হওয়ার আগে তার হাতে কোনো প্রকার ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেট তুলে দিবেন না | তার রঙিন শৈশবটাকে রঙিনই থাকতে দিন,তাকে অন্ধকারে ঠেলে দিবেন না |তার ইলেকট্রনিক গ্যাজেট দিয়ে সময়ের আগে তাকে বড় করে তুলবেন না | আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ যেন সময়ের আগেই অন্ধকারে নিমজ্জিত না হয়ে যায়| আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎটাকে রঙিন রাখার দায়িত্ব কিন্তু আপনারই |