আপনি শেষ কবে রাগ করেছেন? আগামীকাল বা আজ কিংবা ধরুন আপনি রাগই করেন না, কি! এমনটাও কি হতে পারে! এমন বিষয় আসলেই বিরল। এমন অনেকেই আছেন যারা নিজেদের রাগ নিয়েই রাগান্বিত। বিষয়টা অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে, কিন্তু এটাই সত্যি। অনেকে চাইলে সহজে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। আজ তাদের জন্যই নিয়ে আসলাম কিছু টিপস। যেগুলোর এক বা একাধিক পদ্ধতি মেনে চলার মাধ্যমে আপনি আপনার রাগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন।
রাগ হলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবেন কিভাবে? এ বিষয়ে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা নানা ধরনের পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন। রাগ সবার হয়, এটা আসবে যাবে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এটিকে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে জানতে হবে। অনুতপ্ত হওয়ার কোন দরকার নেই, সঠিকভাবে রাগের প্রকাশ করতে হলে আগে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর নিয়ন্ত্রণ করতে হলেও রাগের প্রকাশ থাকতে হবে। প্রকাশ না করলে ওই রাগটা জমে থাকবে এবং সেটা একসময় না একসময় বেরিয়ে আসবে। গ্লাসের পানি ধারণের জন্য একটি ক্ষমতা থাকে ঠিক তেমনি একজন মানুষের রাগ ধারণেরও নির্দিষ্ট ক্ষমতা থাকে।
কেউ যখন রেগে যায় তখন তার ভেতর কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়, যেমন তার শরীরের পেশী গুলো শক্ত হয়ে যায়, তার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় এমনটা হলে যা করতে হবে সেটি হচ্ছে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে হবে। সেটা কিভাবে করবেন? ১ থেকে ৫ গুনতে গুনতে শ্বাস ধরে রাখতে হবে, আর তারপর ১ থেকে ৫ গুনতে গুনতে শ্বাসটা মুখ দিয়ে ছাড়তে হবে। এভাবে পরপর তিনবার করুন। যদি আপনার মনে হয় রেগে যাচ্ছেন তাহলে আপনি সঙ্গে সঙ্গে এক থেকে দশ পর্যন্ত গুনতে শুরু করুন, এতে মন অন্যদিকে স্থানান্তরিত হবে এবং রাগটাও ধীরে ধীরে কমে আসবে। এছাড়া যে স্থানে দাঁড়িয়ে বা বসে আছেন সেখান থেকে সরে যান, বারান্দায় চলে যান বা দরকার হলে অন্য কোনো রুমে চলে যান। যদি রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান তাহলে আরেকটি কার্যকরী উপায় হতে পারে বরফ চেপে ধরা। রাগের সময় হাতের নিকটে যদি বরফ পেয়ে যান তাহলে সাথে সাথে হাত দিয়ে বরফ চেপে ধরুন।
বরফ মেজাজ শীতল করতেও বেশ কার্যকরী। যদি সম্ভব হয় তাহলে যে কাপড় পড়ে আছেন সেই কাপড় পড়ে গোসল করে ফেলুন, এতে রাগের মাত্রা অনেকটাই কমে যাবে। অনেকের ক্ষেত্রেই রাগ হলে কান্না পায় সেটিকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন? সেক্ষেত্রে কান্নাকে নিয়ন্ত্রণ না করে কেঁদে ফেলুন। কারণ এটা আপনার রাগ কমাতে অনেকটা সাহায্য করবে। অনেক সময় দেখা যায় এমন সব ব্যক্তির উপর রাগ হয় যাদের কিছু বলা সম্ভব হয় না, যেমন পরিবারের বয়োজোষ্ঠ ব্যক্তি কিংবা অফিসের বস। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে যা বলতে চান তা কাগজে লিখে ফেলুন এবং পরে তা ছিঁড়ে ফেলুন কিংবা ঐ ব্যক্তির একটি ছবি আঁকুন বা তার নামটি কাগজে লিখুন, দরকার হলে খুব জোর দিয়ে লিখুন যাতে কাগজটি ছিড়ে যায় তাতে কোনো সমস্যা নেই। এই পদ্ধতিগুলো রাগ কমাতে অনেকটা সাহায্য করে।
বল থেরাপি নামে একটি বিষয় রয়েছে যেটিও রাগ কমাতে সাহায্য করে। মানুষ রেগে গেলে তার মধ্যে এক ধরনের শক্তি তৈরি হয়, এক্ষেত্রে কিছু নরম বল আছে যেগুলোকে হাতে নিয়ে চাপ দিলে ওই শক্তি স্থানান্তরিত হয়, যার কারনে রাগ কমে যায়।
রাগ কমানোর জন্য যোগ ব্যায়াম করা যেতে পারে এটি শরীর এবং মনকে সতেজ রাখে যা ভবিষ্যতে রাগ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া অনেকের ক্ষেত্রে ধর্মচর্চাও রাগ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া মনকে অন্যদিকে ব্যস্ত করতে ভালো লাগে এমন নানা ধরনের কাজ করার চেষ্টা করতে পারেন। কারো সাথে রাগের কারণ শেয়ার করতে পারেন কিংবা শরীরচর্চা করতে পারেন। রাগ যখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে তখন রাগের কারণটা ভেবে দেখতে হবে যে আসলেই রাগ করাটা ঠিক হয়েছে কিনা অথবা রাগ করার পেছনে আসলেই কোনো কারণ আছে কি না।
বেশিরভাগ সময় দেখা যায় যে রাগের কারণ ভেবে দেখতে গেলে তেমন কোনো কারণে পাওয়া যায় না সেক্ষেত্রে সমাধানটা হয়েই যায়। কিন্তু যদি আসলেই কোনো কারণ পাওয়া যায় তাহলে যার ওপর আপনার রাগ হয়েছিল তাকে ভাল করে বুঝিয়ে বলতে হবে। তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন, পরিস্থিতি যাতে আপনার নিয়ন্ত্রনে থাকে এবং যে ব্যক্তিকে আপনি বুঝিয়ে বলছেন সে যাতে উল্টে আপনার উপর রেগে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।