এক বৃদ্ধ লোক গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে বেড়াতো। ভিক্ষা করেই চলছিল তার জীবন। সে তেমন একটা অক্ষম ছিল না। সে চাইলেই ছোটখাটো কোনো কাজ করে তার জীবিকা নির্বাহ করতে পারত। কিন্তু সে ছিল অলস। কাজ করে খাওয়া তার মোটেও পছন্দ ছিল না। কারণ কাজ করে খেতে গেলে পরিশ্রম করতে হয়। অপরদিকে ভিক্ষা করে খাওয়ার মধ্যে কোনো পরিশ্রম নেই। মানুষ যা ভিক্ষা দেয় তাই নিয়ে দিন পার করা যায়।
কোন প্রকার শারীরিক অথবা মানসিক পরিশ্রমের কোন প্রয়োজন হয় না। আস্তে আস্তে লোকটি বৃদ্ধ হতে শুরু করল। শরীরে তার চুল দাড়ি ও বেশ ভালো পরিমাণে ছিল। কোন একদিন সে ভিক্ষা করার সময় এক লোক এসে তাকে ভিক্ষা দিয়ে চলে গেল। চলে যাওয়ার আগে লোকটি তাকে বলেছিল , তোমাকে দেখে আমি কোন দরবেশ ভেবেছিলাম। কিন্তু তুমি তো দেখি ভিক্ষা করে খাও। লোকটির মুখে এমন মন্তব্য শুনার পর ভিক্ষুকটির মাথায় একটি দুষ্ট বুদ্ধি আসলো। সে তার ভিক্ষা করে জমানো টাকাগুলো নিয়ে একটি দূর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হল।
সেখানে গিয়ে সে নিজেকে একটি দরবেশ বলে দাবি করল এবং সে বলল সে মানুষের ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারে। সেখানকার লোকজন প্রথমে তার কথা মানতে চাইল না। কিন্তু আস্তে আস্তে দিন যতই যেতে লাগল গ্রামের অনেকেই তাঁর কাছে যাওয়া শুরু করলো। তারা তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে লোকটির কাছ থেকে জানতে চাইত। সে আন্দাজ করে মানুষের অবস্থা দেখে তাদের সম্পর্কে কিছু একটা বলে দিত।
অনেকের বেলায় সত্যি হতো আবার অনেকের বেলায় সত্যি হতো না। যার কারণে অনেকেই আস্তে আস্তে তাকে বিশ্বাস করা শুরু করে। সেও তার এই ব্যবসাকে চালিয়ে যেতে চাইলো। কারণ অল্প কিছু দিনেই সে অনেক টাকাই রোজগার করতে পেরেছিল। ভিক্ষা করে ও সে এত কম সময়ে এত বেশি টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হয়নি। তাই সে রাতের অন্ধকারে ছদ্দবেশ নিয়ে বের হতো মানুষের হালচাল দেখার উদ্দেশ্যে।
সে রাতের বেলা সবার ঘরের কাছে গিয়ে আড়ি পেতে তাদের কথাবার্তা শুনে নি তো। পরদিন সকালে যে সকল লোক তার কাছে তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানার জন্য আসতো সে তাদেরকে তাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী ভবিষ্যৎ বলে দিত। এখন অনেক লোকের ক্ষেত্রেই তার বলা ভবিষ্যৎ বাণী সত্য হওয়া শুরু করল। কিন্তু যদিও সে বেশিরভাগ সময় ভবিষ্যৎবানী করতো তার সাধারণ বুদ্ধি খাটিয়ে। বেশ কয়েকদিনের মধ্যেই সে প্রচুর টাকার মালিক হয়ে গেল। সেই টাকা দিয়ে সে বাড়ি ঘর তৈরি করে নিল। গ্রামের মধ্যে সে এখন বেশ সচ্ছল।
তাদের গ্রামে এক শিক্ষিত যুবক বাস করত। শহর থেকে সে তার পড়াশোনা শেষ করে গ্রামে এসেছিলো গ্রামের লোকদের জন্য কিছু একটা করতে। কিন্তু সে গ্রামের লোকজনের এই কুসংস্কারের প্রতি আসক্তি দেখে বিষন্ন হলো। সে লোকদেরকে আহ্বান করলো যে এই সকল কুসংস্কার ছেড়ে দিতে। কিন্তু তার ডাকে তেমন কেউ সাড়া দিল না। তাই যুবকটি একদিন পরিকল্পনা করলো গণককে শায়েস্তা করার।
একদিন গণক বাজারে তার ভন্ডামি করে যাচ্ছিল। এমন সময় একটি লোক দৌড়ে এসে তাকে খবর দেয় যে তার বাড়ির সকল অর্থ সম্পদ চুরি হয়ে গেছে। এই খবর পেয়ে বৃদ্ধ লোকটি তাড়াতাড়ি তার বাড়ির দিকে ছুটে আসে। এসেছে দেখতে পায় যে তার বাড়ির সকল অর্থ-সম্পদ গায়েব। সে হতাশ হয়ে পড়ে। সে তার কপালকে দোষ দিতে থাকে।এমন সময় সেই যুবক তার সামনে হাজির হয় অনেক লোকজন নিয়ে।
সবাইকে সামনে রেখে সে বলে, এই লোকটি যদি সত্যিকারের গণক হয়ে থাকে তবে সে অবশ্যই তার বাড়ি কে চুরি হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারত।আর তাও যদি সে করতে না পারে সে অবশ্যই বলতে পারবে যে কে তার বাড়িতে এসে চুরি করেছে। সবাই যুবকের কথায় সায় দিল। তারা সবাই গণককে বলল যে আসল চোরকে ধরতে। কিন্তু সে তা করতে ব্যর্থ হলো। পরে তার ভন্ডামি সকলের কাছে প্রকাশ পেয়ে গেল।
সবাই তো আর এই ভন্ডামি সম্পর্কে অবগত ছিল না। কিন্তু শিক্ষিত যুবক ছেলেটি তখন সবাইকে বলল যে এই সব কিছু আমি সাজিয়েছি শুধুমাত্র আপনাদের ভুল ভাঙ্গানোর জন্য। এটি ছিল একটি সাজানো নাটক। তার সম্পদ তার ঘরের ভেতরে মাটিতে পুঁতে রাখা আছে। সেগুলো আসলে তার সম্পদ নয়। সেগুলো হলো আপনাদের সম্পদ যা সে এতদিন ভন্ডামি করে লুটে নিয়েছে। সবার সামনে তখন বৃদ্ধ লোকটি অপদস্থ হল এবং সবার কাছে ক্ষমা চাইলো। লোকজন ও তাদের ভুল বুঝতে পারল এবং তারা বৃদ্ধ লোকটিকে উপার্জন করার জন্য একটি সহজ কাজের ব্যবস্থা করে দিল। যুবকটি ও তাদের এই কাজ দেখে খুশি হলো। এভাবে কোন প্রকার হানাহানিতে না জড়িয়েই তারা তাদের সমস্যা সমাধান করে নিতে পারল।