এক গ্রামে থাকতো একটা কুকুর। সে গ্রামের সব জিনিসের পাহারা দিত। শিয়ালগুলো মুরগি চুরি করতে আসলে তাদের সে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ত। ফলে ওই গ্রামে কোনো শিয়াল প্রবেশ করার সাহস পেত না। শিয়াল কেন, কোনো চোর এই গ্রামের ত্রি সীমানায় আসার সাহস পেত না।
তাকে তাই গ্রামের সবাই কিছু না কিছু খেতে দিত। ফলে তার খাবারের কোনো অভাব হতো না। যখন যার বাড়ি যেত, সেই তাকে খাবার দিত। তার প্রহরা দেওয়ার জন্য তাকে সবাই অনেক ভালোবাসতো। কারণ, তার জন্য সবাই রাতে আরাম করে ঘুমাতে যে পারতো। তাই সবাই তাকে আদর করে রক্ষি নাম দেয়। উচ্চারণের পার্থক্যের জন্য কারো কারো মুখ থেকে রক্কি নাম শোনা যায়। কারো কারো মুখে আবার রকি নাম শোনা যায়। ফলে সার্বিকভাবে সহজ উচ্চারণের জন্য সবাই তাকে রকি বলেই ডাকে।
রকিরও এই নামটা খুব ভালো লাগে। সে গ্রামের সবাইকে তাই নিরাপদে রাখে।
এদিকে পাশের জঙ্গলের শিয়ালগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। তারা রকির জন্য কোনো মুরগি খেতে পারছে না। আর জঙ্গলের সিংহ তাদের খাবারের জন্য কোনো শিকারকেই দেয় না। শিকার চাইতে গেলে সিংহ গর্জন করে বলে, “লোকালয়ে গিয়ে মুরগি খা গিয়ে তোরা। আমার কাছে কোনো শিকারের ভাগ ছুটাতে আসবি না তোরা। নিজেরা তো কোনো পশু শিকার করতে পারিস না। আমার কাছে আসিস খাবার খেতে! পালা এখান থেকে। নইলে তোদেরকে ধরেই খেয়ে নিব আমি।”
শিয়ালগুলো তাই কি করবে, তা ভেবে পাচ্ছে না। কি করে তারা খাবার খাবে? এই নিয়ে তাদের বৈঠক বসলো। একজন চালাক শিয়াল বলল, “চল সিংহের কাছে গিয়ে বলি, আমরা ওই রকির জন্য মুরগি খেতে পারছি না। সিংহ যেন ওই রকিকে মেরে ফেলে।”
সবাই তাই করলো। সবাই সিংহের কাছে গেলো। সিংহকে সব বলল। এটা শুনে সিংহ রেগে গিয়ে বলে, “আমি রকিকে মারব কি করে? ও তো থাকে লোকালয়ে। ওখানে আমি গেলে মানুষেরা আমাকে তো মেরেই ফেলবে, না হয় আমাকে কোনো চিড়িয়াখানায় বন্দি করে রাখবে। তবে তোমরা যদি ওই রকিকে এই জঙ্গলে নিয়ে আসতে পারো, তবে আমি তাকে মারতে পারি।”
এই কথা শুনে শিয়ালগুলো কিছুটা আশার আলো দেখতে পেলো। তারা তাদের আস্তানায় ফিরে আসলো। কিন্তু তাদের ভিতর একটা ভাবনার উদয় হলো। আর সেটা হচ্ছে কুকুরটাকে কে এই জঙ্গলে নিয়ে আসবে? একজন চালাক শিয়াল এটার দায়িত্ব নিল।
সে পরদিন রকির কাছে গেলো। রকি তো তাকে দেখেই তাকে তাড়া করতে আসে। কিন্তু চালাক শিয়াল পালায় না। তাকে স্থির থাকতে দেখে রকি তাকে জিজ্ঞাসা করে, “কি ব্যাটা শিয়াল! আমাকে দেখে ভয় লাগে না, তোমার?”
চালাক শিয়াল তার বুদ্ধি খাটিয়ে বলে, “আমি তো কোনো অন্যায় করি নি। তাই আমার কোনো ভয় নেই। তোমাকে একটা বিশেষ সংবাদ দিতে এলাম। তুমি জানলে খুশি হবে যে, আমাদের বনের রাজা সিংহ, তোমার গুনে মুগ্ধ হয়ে পুরস্কার দিতে চায়। আর জানো পুরস্কারটা কি? একটা দামী সোনার হার।”
রকি এটা শুনে খুব খুশি হলো। আর সে ওই চালাক শিয়ালের সাথে যাওয়ার জন্য রাজিও হলো। রকি যেই না জঙ্গলে পা দিয়েছে, অমনিই বনের রাজা সিংহ তার উপর হামলা করে বসে। আর রকিকে তারা মেরে ফেলে।
ওই রাতে গ্রামের ১০-১২ টা মুরগি চুরি হয়। তারপর থেকেই গ্রামে শিয়ালের উপদ্রব বেড়ে যায়। গ্রামের সবাই রকির খোঁজ করে, কিন্তু পায় না। সবাই বুঝতে পারে, ওই শিয়ালগুলোই রকির সাথে কিছু একটা করেছে। ফলে তারা সবাই মিলে একজন লোককে রাতের পাহারাদার বানিয়ে দেয় টাকার বিনিময়ে।
তো বন্ধুরা কি বুঝলে? কখনোই তোমার শত্রুর কথা যাচাই না করে বিশ্বাস করবে না!