হাদীস শরীফে আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) ফরমাইয়াছেনঃ যেই ব্যাক্তি শাওয়াল মাসে নিজেকে গুনাহের কার্য্য হইতে বিরত রাখিতে সক্ষম হইবে, আল্লাহ তা’আলা তাঁহাকে বেহেশতের মধ্যে মনোরম বালাখানা দান করিবেন ।
অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) এরশাদ করিয়াছেন ঃ যেই ব্যাক্তি শাওয়াল মাসের প্রথম রাত্রিতে বা দিনে দুই রাকয়াতের নিয়তে চার রাকয়াত নামায আদায় করিবে এবং উহার প্রতি রাকয়াতে সূরা ফতিহার পর ২১ বার করিয়া সূরা এখলাস পাঠ করিবে; করুণাময় আল্লাহ্ তা’আলা তাঁহার জন্য জাহান্নামের ৭টি দরজা বন্ধ করিয়া দিবেন এবং জান্নাতের ৮টি দরজা উন্মুক্ত করিয়া দিবেন । আর মৃত্যুর পূর্বে সে তাঁহার বেহেশতের নির্দিষ্ঠ স্থান দর্শন করিয়া লইবে ।
ছয় রোজা
হযরত আনাস মালেক (রাঃ) বর্ণনা করেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) ফরমাইয়াছেনঃ যেই ব্যাক্তি শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখিবে, আল্লাহ তায়ালা তাঁহাকে শাস্তির শৃংখল এবং কঠোর জিঞ্জিরের আবিষ্ঠনী হইতে নাজাত দেবেন ।
অন্য এক হাদীসে বর্নিত হইয়াছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) এরশাদ ফরমাইয়াছেনঃ যেই ব্যাক্তি শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখিবে, তাঁহার আমলনামায় প্রত্যেক রোজার পরিবর্তে সহস্র রোজার সওয়াব লিখা হইবে ।
অন্য আর এক হাদীসে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) ফরমাইয়াছেনঃ যে ব্যাক্ত শাওয়াল মাসে মৃত্যুবরণ করিবে সেই ব্যাক্তি শহীদানের মর্যাদায় ভূষিত হইবে ।
ঈদুল ফিতরের নামাযের বিবরণ
এক মাস ব্যাপী পবিত্র রোজা পালন করিবার পর পহেলা শাওয়াল বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের অন্তরে নামিয়া আসে এক অনাবিল আনন্দের মহাসমারোহ “ঈদুল ফিতর”। মুসলিম জাহানের সর্ববৃহৎ আনন্দোৎসবের মহামিলনের দিন এই ‘ঈদুল ফিতর’। পবত্র রমজান মাসের কঠোর সাধনা ও আত্নোৎসর্গের পরে এই দিবসে ধনী-গরীব, আমীর ও ফকীর নির্বিশেষে সকলের গৃহে দেখা যায় আনন্দের মেলা । এই দিনে সকালবেলা ঈদের নামাজের পূর্বে ধনী ব্যক্তিরা গরীবের মাঝে ‘সদ্কাতুল ফিতর’ বন্টন করিয়া থাকেন বিধায় এই দিবসের নাম ‘ঈদুল ফিতর’ হিসাবে আখ্যায়িত হইয়াছে ।
পহেলা শাওয়াল দুপুরের পূর্বে মুসল্মানগণ মসজিদে বা ময়দানে হাযির হইয়া জামায়াতেরর সহিত ছয় তাকবীরের সাথে দুই রাকআত নামায আদায় করিয়া থাকেন । এই নামাজ ওয়াজিব । নামাযের পরে ইমাম সাহেব দুইটি খুতবা পাঠ করিয়া মুসল্লীদেরকে নিয়া আল্লাহ্র দরবারে হাত তুলিয়া কায়মনোবাক্যে আল্লাহ্ পাকের শোকর গুজারী করতঃ মুসলিম জাহানের নাজাত ও উন্নতিকল্পে এবং গুনাহ্ বাশি মার্জনার উদ্দেশ্যে দোয়া ও মুনাজাত করিয়া থাকেন । এই দিবসে রোজা রাখা হারাম । বরং এই দিবসের খানা পিনা ও দান খয়রাতের মধ্যে অশেষ রহমত বরকত রহিয়াছে ।
ঈদুল ফিতরের দিন সকালবেলা অজু গোসল করতঃ পাক পবিত্র হইয়া নতুন বা পরিষ্কার পরিছন্ন পোশাক পরিধান করতঃ নিজেরা মিষ্টান্ন খাইয়া এবং অপরকে খাওয়াইয়া অবসর হইয়া নিম্নের তাকবীরে তাশরীক পাঠ করিতে করিতে ঈদগাহে যাইবেন । অতঃপর নামায শেষে খুশীর মিলন ভাইয়ে ভাইয়ে বুকে বুক মিলাইয়া মোয়া’নাকা করতঃ একে অপরকে ক্ষমা করতঃ ‘তাকবীর’ পাঠ করিতে করিতে অন্য পথ দিয়া গৃহে গমন করিবে ।
নামাজে যাইতে যাইতে যেই দোওয়াটি পরিতে হইবে তাঁর নিম্ন রূপঃ
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা-ঈলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ ।
ঈদুল ফিতরের নামাযের নিয়ত
উচ্চারনঃ লাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তাআ’লা রাকআ’তাই ছালাতিল্ ঈ’দিল্ ফিত্রে, মাআ’ছিত্তাতি তাক্বীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তাআ’লা, ইক্বতাদাইতু বিহাযাল্ ইমামি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ্ শরীফাতি, আল্লাহু আকবার ।
বাংলা নিয়তঃ আমি কেব্লামুখী হইয়া আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে ঈদুল ফিতরের দুই রাকআত ওয়াজিব নামায ছয় তাকবীরের সহিত এই ইমামের পিছনে আদায় করিতেছি, আল্লাহু আকবার ।