সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ, বাধ্য হয়ে নেতিবাচক বাক্য দিয়েই শুরু করলাম। আজ বর্তমান সমাজে শিক্ষার্থীদের মানবিক অবক্ষয় চরম পর্যায়ে চলে গিয়েছে। চারিত্রিক সৌন্দর্য ও মানবিক মূল্যবোধের অভাবে দিকে দিকে তাদের অপ্রত্যাশিত পরাজয় আজ জাতির কাছে দিবালোকের মত পরিষ্কার। এই দৃশ্য আমাদের হৃদয় কে ব্যাথিত করে তুলেছে। নেই কোন আদব কায়দা, নেই কোন শিষ্টাচার বা ভদ্রতা, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই, নেই আবার ছোটদের প্রতিও স্নেহ ও মমতাবোধ যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাজনক। (সব শিক্ষার্থী কিন্তু এক নয়, আমরা এই পোস্টে দুই একজন বিগরে যাওয়া শিক্ষার্থীর উদ্দেশ্যে কথা বলবো)।
একজন শিক্ষার্থীর জীবনে সবচেয়ে বড় গুণ হলো বিনয়ী হওয়া। বিনয়ীরাই সবচেয়ে সফলকাম হয় ও দিকে দিকে সর্বদা বিজয়ী ধ্বনি তাদেরই। বিনয়ী হতে হলে নিজেকে আগে ছোট ভাবতে হয় পক্ষান্তরে অপরে সম্মান ও ইজ্জত দিতে হয়। আমাদের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশেরই এই বিনয়ী মনোভাব দৃশ্যমান হয় না, বরং পরিপন্থী মনোভাবের পরিলক্ষিত হয়।
বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা সকল শিক্ষার্থীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এই বৈশিষ্ট্য থেকে আজকে আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বড়দের শ্রদ্ধা নয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় বড়দের অপমান লাঞ্ছনা দিয়েই শিক্ষার্থীরা মজা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি তো উঠেই গেছে, অথচ এমন একদিন ছিল শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের আদর্শকে অনুসরণ করেই জীবন যাপন করত। শিক্ষককে সবসময় হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান দিয়ে যথাপোযুক্ত সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে, ভবিষ্যতে দেখা গেছে ঐ সমস্ত শিক্ষার্থীরাই সফলতার স্বর্ণ শিখরে আহরণ করেছে। কারণ একটাই নিজের ভদ্রতা,নম্রতা, আদব ও আদর্শ দিয়ে শিক্ষককে সম্মান করার কারণে মহান আল্লাহ তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
সাধারণ সকল শিক্ষার্থীদের একটা মহৎ গুন শালীন আচরণ করা। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এর পরিবর্তে শিক্ষার্থীরা অশালীন আচরণ বা দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করে থাকে। যেটা আজ দিকে দিকে প্রকট দিবালোকের মত সত্য। এমন কিছু শিক্ষার্থী আছে যারা বড়দের সামনে বা শিক্ষকদের সামনে অশালীন আচরণ করে ফেলে যেটা তার শিক্ষার্থী সুলভ আচরণ এর সাথে যায় না।
পিতা মাতার প্রতি অশ্রদ্ধা এবং অভক্তি এটাও একজন শিক্ষার্থীকে তার শিক্ষার্থী সুলভ আচরণ থেকে বিচ্যুত করে কলঙ্কিত জগতে নিয়ে যায়। যে পিতা-মাতা জীবনের সর্বস্ব ত্যাগ করে সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য সদা ব্যতিব্যস্ত থাকে সেই পিতামাতাকে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা দেখা যায় আর্থিক,মানসিক এবং শারীরিকভাবে কষ্ট দিয়ে থাকে যেটা কখনোই কাম্য নয়।
সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ এখন আসুন আমরা জেনে নিই শিক্ষার্থীর এমন নেতিবাচক পরিবর্তনের জন্য আসলে দায়ী কে বা কারা?
দায়ী কি আমরা শিক্ষকেরা? না পিতা-মাতা? না সমাজব্যবস্থা? না শিক্ষা ব্যবস্থা?
আমি মনে করি শিক্ষার্থীর নৈতিক অবক্ষয়ের জন্য শুধুমাত্র এককেন্দ্রিক পরিবেশ দায়ী নয় বরং এর জন্য দায়ী যৌথ অসামঞ্জস্যতা। তার মধ্যে পারিবারিক শিক্ষা অনেকাংশে বেশিই দায়ী। একজন শিক্ষার্থীর পরিবার থেকে অর্জিত শিক্ষা সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ হয়।
আবার শিক্ষকের ব্যর্থতাও অগ্রাহ্য করা যায় না। কারণ শিক্ষকও পারে একজন শিক্ষার্থীকে নীতি নৈতিকতায় পরিপূর্ণ একজন আদর্শ মানুষ তৈরি করতে। এই অবহেলিত শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের জন্য কম দায়ী নয়। এই শিক্ষাব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা দরকার।
তাই যার যার অবস্থান থেকে শিক্ষার্থীদের এই নেতিবাচক পরিবর্তন ঠেকাতে আমাদের যা যা করণীয় সেই কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কে আমরা আদর্শিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারবো।