বার বার রুটিন বানানোর পরেও রুটিন অনুযায়ী চলা হয়ে উঠেনা? রুটিন বানানোর সময় যে মোটিভেশান ভেতরে থাকে রুটিন বানানোর পর তা চলে যায়? ওয়েট! একটু দাড়ান………
আপনি একটি সঠিক রুটিন বানিয়ে লাইফটা নিজের মতো করে চালাতে চান? নিজের স্বপ্ন পূরণ এর জন্য একটা ইফেক্টিভ রুটিন বানিয়ে লাইফ সেটেল করতে চান? অভিনন্দন!! আপনি সঠিক আর্টিকেলটি বেছে নিয়েছেন। আশা করি সবগুলো স্টেপ শেষ অবধি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন……… তার আগে প্লীজ একটা নোট আর কলম নিয়ে বসুন সাথে। অথবা ডেইলি রুটিন/ টু ডু লিস্ট রিলেটেড কোনো এপ্স।
প্রতিদিন সকাল, দুপুর কিংবা রাতে শুধু যদি আলুভর্তা আর ডাল দিয়ে মাসের পর মাস চালিয়ে যেতে থাকেন, তাহলে আপনার ফিলিংস কেমন হবে? তাই কখনোই এক রুটিন দিয়ে জীবন পার করে দেওয়ার চিন্তা কখনোই করবেননা। এক রুটিন দিয়ে ২৪ ঘণ্টার ২৪ ঘণ্টাই কাজে লাগাবেন- এমন চিন্তাও ছেড়ে দিন। ছোট ছোট টার্গেট, ছোট ছোট ভাগে রুটিন আর ছোট ছোট ব্রেইক নিয়ে টাস্ক পূরণ- ফলাফল পজিটিভ না আসলে হাই কোর্টে আমার নামে মামলা করবেন!
১ম স্টেপ- আপনি রুটিন কেন বানাবেন?
হ্যাঁ, এই প্রশ্নটাই করুন। কিন্তু কাকে করবেন? নিজেকেই। সম্ভাব্য কারণগুলো-
১। একটা চূড়ান্ত লাইফ লিড করতে ২। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে ৩। পড়াশোনা আয়ত্যে আনতে ৪। স্বপ্ন পূরণ করতে, ইত্যাদি। এছাড়াও আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। আপনার কারণটি আপনি লিখে ফেলুন। আমি এখানে “পড়াশোনা আয়ত্যে আনতে” এইটা জাস্ট সেম্পল হিসেবে দেখাব। আপনার কারন এইটা না হয়ে অন্যটা হলেও সমস্যা নেই।
২য় স্টেপ- ঝিমুতে গেলেই ঘুমোতে হবে!
হ্যাঁ, আশাকরি এইটা আপনি জানেন। বাঙালি অন্যান্য জাতি থেকে একটু বেশিই অলস। (যদিও বুদ্ধিমান, তবে শতকরা খুব কম সংখ্যকই সৎ বুদ্ধিমান)। এই অলসতার অন্যতম একটি কারন হচ্ছে পিটের সাথে খাট। বুঝতে পারছেন না তো?
এইদিকে শুনোন, বেশিরভাগ বাঙালিকেই দেখবেন খাটের সাথে পিঠ লাগাতে পারলেই যেন তারা বাঁচে।
আচ্ছা, চলুন ওইসব বাদ দিই। ১ম স্টেপে আপনি যে কারণ লিখেছিলেন এখন আপনাকে তারই উল্টোটা লিখতে হবে।
বুঝিয়ে বলব? ধরুন “আপনি পড়াশোনা আয়ত্যে আনতে” রুটিন বানাতে চান। এখন এর উল্টোটা বা বিপরীত কারণটা হচ্ছে আপনি যদি আপনার বানানো রুটিনটা ফলো না করেন তবে আপনি পড়াশোনাটা আয়ত্য আনতে পারবেননা। তারপর আপনি লাইন ছেড়ে বেলাইনে চলে যাবেন। আপনার রেজাল্ট খারাপ হবে, ফ্যামিলি ঝাড়া-ঝাড়ি করবে, প্রতিবেশীরা কানা-ঘুষা করবে, আপনার সখিনা আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
তাই, যখনি ঝিমিয়ে পড়বেন ভুলেও খাটের ধারে কাছে যাবেননা।
আপনার এই ঝিমিয়ে পড়ার জন্য ফিউচারে কি কি ক্ষতি হতে পারে সেইগুলা ভিজুয়ালাইজ করতে হবে, আর ঝিমিয়ে না পড়ে হার্ড ওয়ার্ক করলে ফিউচার যে আপনাকে ইয়া বড় বড় হ্যাপিনেস দিবে সেইগুলাও ভিজুয়ালাইজ করতে হবে। এইগুলা ভাবতে ভাবতে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চেয়ারটাই বসে বরং বানানো রুটিনটাকেই কাছে টেনে নিন।
৩য় স্টেপ- বিষয়গুলোর তালিকা (টপিক বা অধ্যায় সংখ্যা সহ)
আপনার পড়ার ভেতরের সবগুলো বিষয় তালিকা করুন।
বিষয়ের নামের পাশে ওই বিষয়ে কতগুলো অধ্যায় আছে বা টপিক আছে তাও লিখে ফেলুন।
৪র্থ স্টেপ- সহজ দিয়ে শুরু করুন
লিস্ট করা বিষয়গুলোর মধ্যে যেকোনো একটা সিলেক্ট করুন।
তারপর?
ওই বিষয়ের সবচাইতে ছোট আর সহজ অধ্যায়টি বেছে নিন।
৫ম স্টেপ- টার্গেট সেট
খাতা-কলম, নোট, বই ইত্যাদি নিয়ে বসুন। যে অধ্যায়টি বেছে নিয়েছেন টানা ৫০ মিনিট পড়ুন। তারপর ১০ মিনিট বিরতি নিন।
১ ঘণ্টা গেল? তারপর আবার শুরু করুন শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
এভাবে ওই অধ্যায়টির পড়ে আবার অন্য আরেকটা অধ্যায় ধরুন।
৬ষ্ঠ স্টেপ- রিপিট!
বিষয় পরিবর্তন করুন, অধ্যায় পরিবর্তন করুন। আগে সহজ এবং পরে কঠিন। এভাবে অধ্যায় চালিয়ে যান।
পড়ার মাঝে ব্রেইক নিন। তবে ব্রেইক টাইমে হাটাহাটি করুন, পুশ-আপ দিন, কারো সাথে হাসির কথা বলুন, কাউকে হাসান ইত্যাদি। দেখবেন মন ফুড়াফুড়া হবে।
টিপ্স
- কখনোই এইটা পড়বো না ওইটা পড়বো এইগুলা ভেবে ৫ মিনিটের বেশি সময় ব্যয় করবেননা। মন বেশি অস্থির হয়ে থাকলে একটু হাটাহাটি করে চোখে মুখে পানি ছিটা দিয়ে সহজ অধ্যায়টি নিয়ে বসে পড়ুন।
- পড়ার মাঝে বোরিংনেস চলে আসলে ফেসবুকে স্ক্রল করবেন? নাহ!
এইগুলা আপনাকে আরও বোরিং বানিয়ে দেবে। ফিজিক্যালি-মেন্টালি লস করে দেবে। ফোনের ব্লু ফিল্টার আপনার ক্ষতি করবে। তাই যথাসম্ভব পড়াশোনাটা ঠিক রাখতে হলে ফিজিক্যালি-মেন্টালি আপনাকে ঠিক থাকতে হবে।
নয়তোবা আপনাকে পড়াশোনা বা অন্যান্য প্রফেশনাল কাজের ক্ষেত্রে দুর্বিপাকে পড়তে হবে।
- কখনোই অতীতের খারাপ দিকগুলো বর্তমানেঢ় কোনো কিছুতে প্রভাব পড়তে দেবেন না।
আমাদের বেশিরভাগই অতীত নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করতে গিয়ে বর্তমান খারাপ করে ফেলি। সেটা কখনোই করা যাবেনা।
অতীত মানে অতীত, এই ব্যাপারটা আপনাকে বুঝতে হবে। যা চলে গিয়েছে সেইটা নিয়ে যদি আপনি এখন মন খারাপ করেন, আফসোস করেন তাহলে কি কোনো লাভ হবে আপনার?
হ্যাঁ, এই প্রশ্নটাই আপনি আপনাকে করুন। এইটা আপনাকে ফিল করতে হবে তা না হলে আপনি ভালো থাকবেন না। এইটা আপনারই আপনাকে বুঝাতে হবে। মানুষ আপনাকে আপনার কষ্টের কথা শুনে সিম্প্যাথি দেখাবে এছাড়া আর কিছুই করতে পারবেনা। যা করার আপনাকেই করতে হবে। তাই নিজেকে ভালোবাসতে হবে। কারন সবকিছুর আগে আপনি নিজে।
কথা হবে পরবর্তী আর্টিকেলে, সেই অবধি ভালো থাকুন আর স্বপ্ন পূরণের জন্য পরিশ্রম করুন। আল্লাহ হাফেজ।