আজ আমি আপনাদের এমন একটি জিনিসের কথা বলবো যা বর্তমানে আমাদের সবার জীবনে সফলতার সবথেকে বড় শত্রু। আপনি যদি সত্যিই জীবনে বড় হতে চান তাহলে এই একটি অভ্যাস আপনাকে ছাড়তেই হবে। এটি এমন একটি অভ্যাস যা কেউ কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেনি যে পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ লোকের এটি অভ্যাস পরিণত হবে। এমন একটি অভ্যাস যা ১২ বছর থেকে ৬০ বছরের মানুষ পর্যন্ত প্রতিটি মানুষকে সমান ভাবে গ্রাস করে চলেছে। এটি এমন একটি অভ্যাস যা পুরুষ ও মহিলা সবাইকে সমানভাবে প্রভাবিত করেছে। আর সেই অভ্যাসটি হলো সবথেকে খারাপ অভ্যাস সোশ্যাল মিডিয়া।
আপনি জানলে অবাক হবেন এই মোবাইল, এই সমস্ত অ্যাপস, ইন্টারনেট যা আমাদের কাজকে সহজ করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, আমাদের গোলামী করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল সেই মোবাইল ও ইন্টারনেট আজ আমাদের মালিক হয়ে গেছে। কিছুদিন আগেও আমরা ফোনে রিং বাজলে তবেই ফোন দেখতাম, আর এখন কিছুক্ষণ ফোন না আসলে আমরা ফোনটিকে দেখি বন্ধ হয়ে যায়নিতো। কিছুদিন আগে কোনো এসএমএস আসলে তখন আমরা মোবাইল দেখতাম, আর এখন কিছুক্ষণ এসএমএস না আসলে আমরা আমাদের ইন্টারনেট কানেকশন চেক করি, দেখি ইন্টারনেট কানেকশন অফ করা নেইতো। আপনি আপনার নিজের অজান্তেই আপনার ফোনটিকে দিনে কতবার দেখেন আপনি ভাবতেও পারবেন না।
বর্তমানে কারো কাছে ফ্রি থাকার কোনো সময় নেই। আপনি যেখানেই বসবেন আপনার হাত অটোমেটিক মোবাইলে চলে যাবে। হাজার হাজার লোক সকালে ঘুম থেকে উঠেই সবার প্রথমে নিজের মোবাইলকে খোঁজে। হাজার হাজার লোক রাত্রে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়ে সে নিজেও জানে না। আমরা আমাদের পরিবারের সাথে বসে থাকি, কিন্তু আমাদের মন থাকে মোবাইলের দিকে। আমরা বন্ধুদের সঙ্গে বসে থাকি কিন্তু একে অপরের দিকে না তাকিয়ে আমাদের মন পড়ে থাকে মোবাইলের দিকে। এখনতো অফিসেও মোবাইল, বেডরুমে মোবাইল, ড্রইংরুমে মোবাইল, এমনকি বাথরুমেও মোবাইল।
এখন রাস্তায় কোনো দুর্ঘটনা হলে সেখানে চোখের সামনে লোকজনকে মরতে দেখে, কেউ সাহায্য না করে মোবাইলে ভিডিও রেকর্ডিং করতে ব্যস্ত থাকে। কেউ জলে ডুবে যাচ্ছে সেখানেও কেউ মোবাইলে ভিডিও করছে। তাহলে এই মোবাইলই কি আমাদের জীবন? হাজার হাজার এমন লোক আছে যারা ফেসবুকে একটি পোস্ট করার সাথে সাথে লাইক গুনতে থাকে। আর কিছু লোকতো প্রতিটি লাইক ও কমেন্টের জন্য রিপ্লাই দিতে থাকে। কিছু লোককে হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস করলে দ্রুত রিপ্লাই চলে আসে। তারা কি সবসময় মোবাইল হাতে নিয়ে বসে থাকে, ভাবতে অবাক লাগে এই লোকগুলো কবে নিজের কাজ করবে। যখন আমাদের মন সবসময় ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামে থাকে তাহলে আমরা কিভাবে জীবনে বড় কিছু করতে পারবো? সত্যি বলতে আমরা এখন মোবাইলের চাকর হয়ে গেছি।
আপনার মোবাইলের মালিক আপনার মালিক আপনি নন, আপনার মালিক মোবাইল। আজকের দিনে আপনার সাফল্যের পথে সব থেকে বড় বাঁধাই হলো এই মোবাইল। কারণ এই সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়াগুলি আপনার জীবনের অ্যাক্টিভিটি কমিয়ে দিয়েছে। এখন কোনো মানুষের কাছে তার নিজের জন্য কোনো সময় নেই, এখন আপনি কারো সামনে গিয়ে কথা বলবেন দেখবেন সে হাতে মোবাইল নিয়ে কোনো না কোনো সোশ্যাল মিডিয়াতে কারো না কারো পোস্ট পড়ছে বা চ্যাট করছে। যতদিন পর্যন্ত আপনি নিজের জন্য সময় বের না করবেন, নিজের লক্ষ্যের জন্য নিজের স্বপ্নের জন্য সময় বের না করবেন ততদিন পর্যন্ত আপনি সফল হতে পারবেন না। যতক্ষন পর্যন্ত এই মোবাইল, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া আপনার গোলাম থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যদি মোবাইল আপনার মালিক হয়ে যায় তাহলে আপনি শেষ হয়ে যাবেন। ভাবতেও অবাক লাগে কিছু লোক ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইল নিয়ে কাটিয়ে দেয়। ভালো করে শুনে রাখুন যদি জীবনে বড় হতে চান তাহলে দিনে দুই থেকে তিনবার অল্প কিছু সময় নির্ধারিত করে দিন এই মোবাইলের জন্য। যেমন সকালে ১৫ মিনিট, সন্ধ্যায় ১৫ মিনিট, রাতে ১৫ মিনিট। শুধুমাত্র এই সময়টুকুই আপনি সোশ্যাল মিডিয়া দেখবেন, বাকি সারাটা দিন আপনি আপনার ডাটা কানেকশন অফ করে রাখুন।
সময় অনেক দামী তাই আজ থেকেই সেটিকে কাজে লাগান। দিনের কিছুটা সময়তো আমাদের অলরেডি বুক হয়ে থাকে, খাবার জন্য, বাথরুমের জন্য, ঘুমানোর জন্য বাকি। বাকি যে সময়টুকু থাকে সেটাকে সোশ্যাল মিডিয়াতে নষ্ট না করে নিজের কাজে লাগান। যদি আপনার বিজনেস বা আপনার কাজের ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার সরাসরি কোনো ভূমিকা থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে বিষয়টা আলাদা। আর যদি সোশ্যাল মিডিয়ার সরাসরি কোনো ভূমিকা না থাকে তাহলে আপনার মোবাইলের টাইমকে লিমিট করুন, আর নিজের জীবনের সময়কে বাড়ান। যত বেশি সময় আপনি নিজেকে দেবেন ততো বেশি সফলতা আপনি পাবেন। তাই বন্ধুরা আজই সোশ্যাল মিডিয়াকে ত্যাগ করুন। জীবন আপনার তাই সিদ্ধান্তটিও আপনাকেই নিতে হবে।