Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

সমুদ্রের সন্তানেরা (প্রথম পর্ব)

এসব কি হচ্ছে স্যার?জাহাজটা এতো দুলছে কেন?লোকে বলাবলি করছিল কেউ একজন নাকি পানির নিচ থেকে প্রকান্ড একটা শুঁড় উঠে আসতে দেখেছে?” -“হায় ঈশ্বর, তিনি জেগে উঠেছেন—সত্য প্রমাণিত হয়েছে আমার পূর্বপুরুষের ভবিষ্যৎবাণী।এই জাহাজ থেকে একটা প্রাণও বেঁচে ফিরতে পারবে না…একটা প্রাণও না।“

-“বেঁচে ফিরতে পারবো না? কি আবোল-তাবোল বকছেন স্যার? আমার তো মনে হয় লাইফবোটগুলোকে এই মুহূ্র্তে প্রস্তুত করে ফেলা উচিত আমাদের।সেগুলো যথেষ্ট সংখ্যকই রয়েছে আমাদের কাছে,খাবার দাবারেরও অভাব নেই।“ -“মূর্খ হয়ে গেছ তুমি…মূর্খ!ভেবেছ…ভেবেছ বেঁচে ফিরতে পারবে এখান থেকে?এতদিন পর রক্ত মাংসের গন্ধ পেয়েছেন তিনি, কিছুতেই হাতছাড়া করবেন না নিজের শিকার…কিছুতেই না।“ -“কার কথা বলছেন আপনি?কে জেগে উঠেছে স্যার?”

-“কার কথা বলছি বুঝতে পারছ না?নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করছ? তা বেশ বেশ করো… আরো বেশী করে করো।অভিনয়-টভিনয় যা করার আছে শেষবারের মতো করে নাও।কিছুক্ষণ পরই তো…!” কথা থামিয়ে গলায় হাত দিয়ে, জিভ বের করে একটা অদ্ভুত ভঙ্গি করলেন ক্যাপ্টেন।

মধ্যবয়স্ক এই লোকটার কথাগুলো যে পাগলের প্রলাপ তাতে কোন সন্দেহ নেই আমার।নিজের উপরই প্রচন্ড রাগ হচ্ছে -কেন যে এই পাগলটার সহকারী হয়ে এলাম এই জাহাজে…।তবে এসব ভাববার মতো সময় এখন নেই আমার হাতে।বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রধান স্বয়ং রয়েছেন এই জাহাজে।যে করেই হোক তিনি এবং তাঁর তিন সঙ্গীকে অক্ষত দেহে পৌঁছে দিতে হবে গন্তব্যে।অবাক করা ব্যাপার হলো সঙ্গে করে কোন নিরাপত্তা রক্ষী আনেন নি বিজ্ঞানীরা।কাজেই গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যেন্ত গোপনীয় কোন মিশনেই যে এদিকটায় এসেছেন তাঁরা সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

আজ সকাল নাগাদ বিজ্ঞান কাউন্সিলের তরফ থেকে একটা মেইল আসে আমাদের জাহাজের  ক্যাপ্টেনের কাছে।সংক্ষিপ্ত সেই মেইলে জানানো হয়, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই নাকি বিজ্ঞান কাউন্সিলের চারজন প্রতিনিধি যোগাযোগ করবেন আমাদের সাথে!তাদেরকে যেন বিনা প্রশ্নে ‘থ্রিল আইল্যান্ডে’ পৈাঁছে দেওয়া হয়।তবে বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রধান যে স্বয়ং আসবেন এমন কোন কথার উল্লেখ ছিল না মেইলটায়!

মেইলটা রিসিভ করার চল্লিশ মিনিটের মধ্যেই চারজন ভারিক্কি চেহারার মানুষ এসে দাঁড়াল আমাদের জাহাজ ‘ডেফোডিল’স’ এর ডেকে।তাদের মধ্যে থেকেই নেতা-গোছের একজন ক্যাপ্টেনের দিকে এগিয়ে এসে নীচু স্বরে বললেন, “আমি ম্যাথুয়েল ম্যাক,বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রধান।আপনিই কি ‘ডেফোডিলস’ জাহাজের ক্যাপ্টেন?আমাদের পাঠানো মেইলটা দেখেছেন?”

“জ্বি স্যার।”

“তো মিস্টার ক্যাপ্টেন, থ্রিল আইল্যান্ডে পৌঁছাতে আমাদের কতটুক সময় লাগবে?”

“এই ধরুন ঘন্টা তিনেক।”

“ওকে,লেটস গো।”

ক্যাপ্টেনের সাথে ম্যাকের কথোপকথন এর বেশী দীর্ঘ হয়নি তখন।

বর্তমানে চারজন বিজ্ঞানী ছাড়াও আমি, ক্যাপ্টেন এবং পনেরোজনের মতো ক্রু রয়েছি এই জাহাজে।বিজ্ঞানীরা অবশ্য খালি হাতে আসেন নি, সঙ্গে করে বাক্সবন্দি কিছু একটা নিয়ে এসেছেন তাঁরা।কে জানে কি আছে বাক্সটায়?

এসব ভাবতে ভাবতে বাইরে ডেকে এসে দাঁড়ালাম।সামনে জিসানকে দেখতে পেলাম।রেলিং ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।একটানা সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখার চেষ্টা করছে সে।এই জাহাজের যান্ত্রিক বিষয়গুলো দেখাশোনা করে জিসান।অত্যেন্ত ভালো ছেলে।তাঁর দিকে এগিয়ে গেলাম আমি।

“রাডারে কি কিছু ধরা পড়েছে,তোমার? কোন যান্ত্রিক ত্রুটি বা এরকম কিছু?” আমার প্রশ্ন শুনে কালো হয়ে গেল জিসানের মুখ।স্পষ্টভাবে কিছু না বললেও হাবভাবে ঠিকই বুঝলাম এ সম্পর্কে কিছু বলতে নারাজ সে।

পরিবেশটা হালকা করতে প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলতে হলো আমাকে।গলার স্বরটা নামিয়ে প্রশ্ন করলাম জিসানকে,”আচ্ছা, লোকে যে শুঁড়ের কথা বলাবলি করছিল তা কি সত্যি?”

“হুম।” জিসানের মুখ থেকে আওয়াজ নয় যেন গোঙানি বেরিয়ে এলো।আমার দিকে তাঁকিয়ে অপ্রকৃতস্থ কন্ঠে বলে উঠল সে,

“আমি নিজের চোখেই দেখেছি সেটাকে। বেশীক্ষণ অবশ্য থাকে নি পানির উপর।এই কয়েক সেকেন্ড যাবৎ ছিল। দেখতে একদম ওই অক্টোপাসের শুঁড়ের মতোন অনেকটা,বুঝলে?শুধু আকারে…।” কথা শেষ করতে পারে না জিসান।ইঞ্জিনরুম থেকে ডাক আসে তাঁর।কি একটা  সমস্যা নাকি হয়েছে ‘ডেফোডিলস’ এর ইঞ্জিনে।

হন্তদন্ত হয়ে সেদিকেই ছুটে যায় ছেলেটা।আমি ভাবতে থাকি।শুঁড়ের বিষয়টাকে মাথা থেকে সরাতে পারছি না কিছুতেই।জিসান আর যাই হোক মিথ্যে বলার ছেলে না। হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ ঝলকের মতো একটা সম্ভাবনা খেলে গেল আমার মাথায়।আচ্ছা,এমন কি হতে পারে—পৃথিবীর সৃষ্টি-লগ্ন থেকে প্রাগৌতিহাসিক কোন জীব বসবাস করছে এই মহাসমুদ্রের অতলে। যার কথা হয়তো এখনো জানতে পারে নি আধুনিক বিজ্ঞান।অথবা,জেনে থাকলেও বিজ্ঞানীরা সেটা গোপন করে রেখেছে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে?তাই যদি হয়,তাহলে এতদিন কেন আত্মপ্রকাশ করে নি সেই মহাজাগতিক জীব?আজ হঠাৎ করে পৃথিবীতে উঠে আসার চেষ্টা কেন করছে সে?ক্যাপ্টেনের কথাগুলোরই বা অর্থ কি?কি ভবিষ্যৎবাণী করেছিল তার জনৈক পূর্বপুরুষ?

ক্রমশ…

Related Posts

10 Comments

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No