১. বাংলাদেশে সুইডেনের কোনো ইউনিভার্সিটি এর কোনো বৈধ এজেন্সী সত্যি নেই | যারা বলে আমরা এজেন্সী তারা ১০০% ভুয়া। আসুন প্রমান করে দেই।
যদি কোনো এজেন্সী বলে যে ,তারা বৈধ তবে প্রথমেই প্রশ্ন করুন তারা কোন ইউনিভার্সিটি এর এজেন্ট। যদি কোনো ইউনিভার্সিটি এর নাম বলে , তবে সেই ইউনিভার্সিটি এর নাম দিয়ে গুগল করে দেখুন,ওই ইউনিভার্সিটি এর একটি ফোন নাম্বার বা ইমেইল পাবেন সেখানে ফোন বা ইমেইল করে খোঁজ নিন। তবে খেয়াল রাখবেন এজেন্সী থেকে নেয়া ফোন বা ইমেইল এ যোগাযোগ করবেন না। সরাসরি ওই ইউনিভার্সিটি এর ওয়েব সাইট থেকে নেয়া ফোন বা ইমেইল এ যোগাযোগ করবেন। তাহলেই বুঝতে পারবেন ওরা মিথ্যা বলছে ।
২. সুইডেনে সব ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি একটি ওয়েবসাইট দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই ওয়েব সাইট হলো ইউনিভার্সিটি এডমিশন ডট এস ই। এর বাহিরে কেনো এজেন্সী আপনাকে ভর্তি করতে পারবে না। সুইডেনে ২ টি সেমিস্টারে শুধু ভর্তি করা হয় তার আবার নির্দিষ্ট তারিখ আছে। সুতরাং যখন খুশি তখন ভর্তি কোনো মতেই সম্ভব না।
৩. সুইডেনে সব ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে আই ই এল টি এস বাধ্যতামূলক। কমপক্ষে ৬.৫ লাগবে। আই ই এল টি এস ছাড়া ভর্তির চেষ্টা করবেন না |নিজের ও অন্যের সময় নষ্ট করবেন না। আই ই এল টি এস ছাড়া ভর্তির চেষ্টা করে বাংলাদেশের দুর্নাম বাড়াবেন না। কিছু কুছাত্রের কারণে ভালো ছাত্রদের ভর্তি ও ভিসা পেতে সমস্যা হয়।
৪. স্কলারশিপ নির্ভর করে আপনার পড়ালেখা , রেজাল্ট, গবেষণা, মোটিভেশন, চাকরি এবং অন্যান্য সব কিছু মিলে আপনার সার্বিক যোগ্যতার উপর। কোনো এজেন্সী আপনাকে কোনোভাবেই স্কলারশিপ পাইয়ে দিতে পারবে না। তবে আপনাকে অনেক ভুয়া কাগজ দিয়ে তৈরী করতে পারে। ভুয়া হলে.. সুইডেনের ভিসা না পেলে ভবিশ্যতে ইউরোপের অন্য কোনো দেশেও ভিসা পাবেন না।
৫. মনে করুন আপনি বিশ্বাস করে এজেন্সী কে আপনার সব কাগজপত্র দিলেন। এরপর ওই এজেন্সী আপনার কাগজপত্র ব্যবহার করে অন্য কাউকে অন্য কোনো দেশে পাঠালো অথবা পাঠাতে গিয়ে ধরা খেলো। মাঝখান থেকে আপনি জন্মের মত ইউরোপে নিষিদ্ধ হয়ে গেলেন।সুতরাং না বুঝে কাউকে আপনার কাগজ পত্র বা পাসপোর্টের কপি দিবেন না।আর ইতিমধ্যে দিয়ে থাকলে, যাদেরকে দিয়েছেন তাদের নামে থানাতে জিডি করে রাখুন বা উকিলের পরামর্শ নিন।
৬. মিথ্যাচার : ছাত্র ভিসায় আনলিমিটেড চাকরির সুযোগ এবং ওয়ার্ক পার্মিট।
সত্যি কথা হলো ,ছাত্র পড়ালেখার পাশাপাশি ফুল টাইম চাকরি করতে পারে। মানে সপ্তাহে গড়ে ৪০ ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারে। যদিও বাস্তবে এটি সম্ভব না। কারণ পড়ালেখা করতে চাইলে আপনাকে ক্লাস পরীক্ষা এবং পড়তে হবে। তাই ফুল টাইম কাজ করে পড়ালেখা করা মুশকিল। তাছাড়া বাস্তবে সত্যিকার চাকরি পাওয়া যায় না ভাষা না জানলে।
ছাত্র ভিসাতে আপনি শুধু চাকরি করতে পারবেন। ফলে মাস শেষে বেতন পাবেন (ট্যাক্স বাদ দিয়ে) এই টুকুই। পি আর বা স্থায়ীভাবে সুইডেনে থাকতে হলে আপনি মোট কতদিন সুইডেনে আছেন.কি করেছেন এগুলি দেখা হয়। ছাত্র ভিসাতে ৫০ বছর থাকলেও সেটি এই হিসাবেই অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। কারণ এটি ওয়ার্কপারমিট না। ফলে ছাত্র ভিসাতে আপনি ৫০ বছর কাজ বা চাকরি করলেও সেটি হিসাব করা হবে না| ফলে পি আর বা স্থায়ীভাবে সুইডেনে থাকার অনুমতি পাবেন না। মূল কথা ছাত্র ভিসাতে কোনো ওয়ার্ক পার্মিট নেই।
৭. মিথ্যাচার : ছাত্রদের কো এপ্লিকেন্ট বা স্পাউস কি চাকরি করতে পারে মানে ওয়ার্ক পার্মিট আছে ?
সত্যি কথা হলো , ছাত্রদের কো এপ্লিকেন্ট বা স্পাউস এমনকি ছেলে মেয়ে (১৬+ বয়সী) সবাই বৈধ ভাবে চাকরি করতে পারে। এরজন্য কোনো আলাদা কাগজ বা কোনো কিছুর দরকার নেই। তবে মূল সমস্যা হলো চাকরি পাওয়া। সুইডিশ ভাষা না জানলে চাকরি পাওয়া খুব কঠিন।
মূল কথা স্পাউস ভিসাতে ওয়ার্ক পার্মিট নেই। এমনকি স্পাউস ভিসাতে চাকরি পেলেও ওয়ার্ক পার্মিট নেবার অনুমতি নেই। আপনাকে বাংলাদেশে ফেরত গিয়ে নতুন করে ওয়ার্কপারমিটের আবেদন করতে হবে।
8. মিথ্যাচার : ছাত্রদের চাকরি করে টিউশন ফি ও থাকা খাওয়া তোলা সম্ভব .
সত্যি কথা হলো অসম্ভব , সুইডেনে চাকরি করে টিউশন ফি ও থাকা খাওয়া তোলা কোনো মতেই কিছুইতেই সম্ভব না।
৯. পুরাতন বড় টোপ : ব্যাংক স্টেটমেন্ট এ হেল্প করা। মনে রাখবেন আপনার ভুয়া স্টেটমেন্ট ধরা খেলে ভিসা তো পাবেন না , এমনকি কালো তালিকাভুক্ত হতে পারেন , ফলে ভবিষ্যতেও ভিসা পাবেন না। আগে অনেকে ভুয়া ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট দিয়ে সুইডেনে এসেছে। এখন কম। তবে সুইডেনে আসার পরেও ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট ভুয়া বুঝতে পারলে ভিসা বাতিল করে দিয়েছে অথবা ভিসা আর রিনিউ করতে দেয় নাই। সুতরাং ভুয়া ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টে যেকোনো সময় বড় বিপদ হতে পারে। আগেই সাবধান হন।
১০. আপনার বা আপনার বাপের অনেক টাকা থাকতে পারে , তবে সেই টাকা দিয়ে সুইডেনের ছাত্র ভিসা কিনতে পারবেন না , কারণ এটি বিক্রয়যোগ্য জিনিস না। তারপরেও এজেন্সী রা নানা ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে আগে কিছু ভিসা বের করেছিল। কিন্তু সত্য হলো সেই সব ভুয়া ছাত্রদের কেউ সুইডেনে থাকতে পারেনি ,অন্য দেশে পালিয়ে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সিদ্ধান্ত আপনার, এজেন্সী কি এক গাদা টাকা দিয়ে ধরা খেয়ে জীবন নষ্ট করবেন নাকি নিজে নিজে চেষ্টা করবেন। শেষ কথা ,যোগ্য হলে সুইডেনে আবেদন করুন আর নিজেকে যোগ্য না মনে করলে ,অযথা চেষ্টা না করে বাস্তবতাকে মেনে নিন অথবা নিজেকে পরিবর্তন করে সুইডেনের যোগ্য করে গড়ে তুলুন।
মনে রাখবেন আপনার একটি ভুল সিদ্ধান্ত ,, আপনার জীবনকে যেমন নষ্ট করে দিতে পারে তেমনি ভবিষ্যতে সত্যিকার ভালো ছাত্রদের সুইডেনের আসার পথ সংকীর্ণ করে দিবে।