আহলান সাহলান মাহে রামাদান।
কবির ভায়ায় – “ জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসেনি নিদ।
আধমরা সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ ? “
রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের সুসংবাদ নিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থিত রমজানুল মোবারক। খোশ আমদেদ মাহে রামাদান। মানব জাতীকে পাশবিকতার পঙ্কিলতা থেকে উদ্ধার করে তার দেহ, মন, আত্না, মস্তিষ্ক, অনুভব, অনুভূতি, ভাব ও ভাবনাকে নিষ্কলুষ করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভের জন্যই ইসলামের এই সিয়াম বিধান।
রোজাঃ
রোজা ফারসী শব্দ। আরবী ভাষায় ‘সাওম’বহুবচনে ‘সিয়াম’বলা হয়।
আভিধানিক অর্থ হলোঃ কোন কিছু থেকে বিরত রাখা, ফিরিয়ে রাখা, সংযম, নিয়ন্ত্রণ, দূরে থাকা, সংযত হওয়া, পরিত্যাগ করা, অবিরাম চেষ্টা সাধনা ইত্যাদি।
পারিভাষিক অর্থঃ ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ‘সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোজা।
ইসলামিক দৃষ্টিতে রোজাঃ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অত্যন্ত প্রাঞ্জল ও হৃদয়গ্রাহী ভাষায় এবং অত্যন্ত প্রজ্ঞাপূর্ন আবেদনময়ী শৈলীতে কুরআন পাকে ঘোষনা করেছেন- “ হে ঈমানদারগন! তোমাদের উপর সিয়াম (রাজা) ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তদের উপর। যাতে তোমরা খোদাভীরু (মুত্তাকী) হতে পারো।” (সুরা আল-বাকারা)।
’আস্সাওমু লী অ আনা আজজী বিহী’ আল্লাহ বলেন, রোজা আমার জন্য আর এর প্রতিদান আমিই দিব।
রাসুল (সা:) বলেছেন, ‘আস সাওমু জুন্নাতুন’অর্থাৎ রোজা মুমীনের জন্য ঢালস্বরূপ। যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর আক্রমন থেকে ঢাল যেভাবে মানুষকে রক্ষা করে, সাওমও তেমনি কুপ্রবৃত্তি, সমস্ত অন্যায় কাজ, নফসের তাড়না, ষড়ঋপু ও শয়তানের ধোকা থেকে সাওম পালনকারীকে বাচায়।
হযরত সহল (রা:) থেকে বর্নিত, নবী করীম (সা:) বলেছেন, জান্নাতে ‘রাইয়ান’নামক একটি দরজা আছে। ঐ দরজা দিয়ে শুধুমাত্র রোজাদারগনই প্রবেশ করতে পারবে। তাদের প্রবেশের পর দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হবে। (বোখারী)
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেছেন, রমজান মাস শুরু হলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবন্ধ করা হয়। (বোখারী)
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সাওয়াবের আশায় ঈমানের সাথে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ (বোখারী)
চিকিৎসাবিজ্ঞানে রোজাঃ সুস্থ দেহে সুস্থ মনের বাস।
রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন,’ছুমু তাছিহহু’ অর্থাৎ রোজা রাখো সুস্থ থাকবে। এই বানী চিকিৎসা বিজ্ঞানের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছে। সাম্প্রতিককালের গবেষনায় দেখা গেছে, রোজা রাখার ফলে অনেক রোগজীবানু মারা পড়ে এবং মানুষ রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পায়।
ডা: ডিউই যথার্থই বলেছেন, জীর্ণক্লিষ্ট ও রুগ্ন মানুষটি উপোস থাকছে না, সত্যিকারভাবে উপোস থাকছে রোগটি।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে Father of Medical Science হিসেবে খ্যাত হিপোক্রিটস বলেছেন, The more you nourish a diseased body, the more the worse you make it. অর্থাৎ অসুস্থ দেহ যতই খাবার পায় ততই রোগ বাড়তে থাকবে। মেডিকেল গবেষক গ্রাহাম বার্থলো এ বিষয়টি সত্য বলে প্রমাণ করেছেন।
চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডা: জুয়েলস এম ডি বলেছেন, যখন এক বেলা খাওয়া বন্ধ থাকে তখনই মানবদেহ সেই মুহূর্তে রোগমুক্তির সাধনায় নিয়োজিত করে।
ডা: স্যামুয়েল আলেকজান্ডার বলেন, রোজা হচ্ছে রকমারী মানসিক রোগগুলোর উত্তম ঔষধ, চমৎকার ও ফলপ্রসু প্রতিষেধক যেমন আত্নাকে নির্মল করে দেয়, ঠিক তেমনি পবিত্রও করে।
সোভিয়েত রাশিয়ার চিকিৎসবিজ্ঞানী নাতিকান বলেছেন, যে তিনটি কাজ করলে শরীরে সারা বছর যে জৈববিষ জমা হয় তা দূরীভুত হয় তম্মধ্যে রোজা অন্যতম।
আমেরিকান চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডা: ম্যাক ভাডন বলেন, রোজার কারনে বাত ও শরীরের বিভিন্ন জোড়ার সংক্রামক রোগের ও আরোগ্য হয়।
পরিশেষে বলা যায় রোজা আমাদের জন্য পরম করুনাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য রহমত স্বরূপ। রোজার মাধ্যমে আমরা ইহকালীন (বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে মুক্তি) কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি লাভ করতে পারি। রোজার এক মাস আমাদের জন্য ট্রেনিং এর মাস। এই এক মাস রোজার মাধ্যমে আমরা আমাদের চরিত্র গঠন করব এবং বাকী এগার মাস তার আলোকে জীবন পরিচালিত করব। রোজা থেকে আমরা শিক্ষা নিয়ে সকল অশ্লীল, অন্যায় ও পাপাচার থেকে মুক্ত থাকব। আল্লাহ আমাদের জীবনে রোজার ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ দান করুন। আমীন।