গ্রামের নাম বাগঝার। সেই গ্রামে হিতেন অব লালঢিকি উচ্চ বিদ্যালয় ছিল। সেখানে পড়ালেখা হতো অনেক সুন্দর। কিন্তু সেই স্কুলের নামে একটা ভয়ানক কাহিনী জরিত ছিল। সেই কাহিনীটা হচ্ছে, সেই স্কুলে নাকি রাতে কান্নার আওয়াজ পাওয়া যেতো।
এমনকি গ্রামের সকলে আতঙ্কের মধ্যে থাকতো। তারা মনে করে এই অজানা কান্না নাকি তাদের রাতে মেরে ফেলতে পারে। তাই গ্রামের সকলে, রাতে সেই স্কুলের আসা জাওয়া বন্ধ করে দেয়।
কিন্তু সকাল হলেই আবার কোনো শব্দ পাওয়া যেতো না। তাই স্কুলের সকল ছাত্ররা নিরভয়ে ক্লাসে প্রবেশ করে পড়ালেখা শুরু করতো। এভাবেই দিন কাটতে লাগলো। একদিন রাতে একজন মাতাল ভাবল স্কুলের পাশে কেউই যায় না। তাই সে সেখানে নির ভয়ে মত পান করতে পারবে।
তাই সেই মাতাল মত খাওয়ার জন্য সেই স্কুলের গেটের পাশে বসা মাত্রই কিছু দেখতে পায়। তাই সে উঠে দাঁড়ায় এবং সে আরেকটু কাছে গিয়ে দেখে গলা কাটা মানুষ কান্না করতেছে। সেই মাতাল ভাবল, “তার মনের ভুল আর সে কোনো কিছুই দেখে নি” আবার সে মত খাওয়া শুরু করলো। হঠাৎ মাতাল লোকটি দেখে, “গলা কাটা মানুষটি তার দিকে আসতেছে”।
এইটা দেখে মাতাল লোকটি একটু ভয় পেলো। আর এদিকে তাকে কে যেন পেটে ছুড়ি ঢুকিয়ে দিলো। সাথে সাথে মাতাল লোকটি মারা গেলো। এরপর সকাল হলো। গ্রামের লোকজনেরা স্কুলে ভির জমাতেই লাগলো। কারণ, সেই মাতাল লোকটির শরীর গলা কাটা অবস্থায় স্কুলের গেটে পড়ে রয়েছে। এই ঘটনা দেখে গ্রামের সকলে আরও বেশী ভয় পেতে লাগলো।
কেউ-কেউ আবার সেই গ্রাম ছেড়ে দিয়ে অন্য গ্রামে চলে যেতে লাগলো। সেই গ্রামের প্রধান ছিলেন সুমন বাবু। তিনি গ্রামের অবীচল পরিস্থিতি দেখে চিন্তা করতে লাগলেন যে, “এই পরিস্থিতি কীভাবে ঠিক করবে। সুমন বাবুর মাথায় একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছিল। সেই কথাটা হচ্ছে, ভুত বলতে কিছুই নেই, তাহলে স্কুলে কি এমন জিনিস আসে মানুষজন অনেক ভয় পাচ্ছে”?
সুমন বাবু রাতে স্কুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। তাই তিনি রাত হতেই স্কুলের গেটে আসলো আর ভিতরে ঢুকে আরালে লুকিয়ে থাকলো। সুমন বাবু হঠাৎ দেখতে পেলেন একজন গলা কাটা মানুষ। তিনি একটু ভয় পেয়ে গেলেন। কিন্তু কিছুক্ষন পর আর ভয় লাগলো না। কারণ, গলা কাটা মানুষটি আসলে গলা কাটা নয়। সেই মানুষটি আসলে তাদের গ্রামের জেল খাটা আসামি। সে তার বউকে খুন করেছিলো, তাই তাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল।
এরপর সুমন বাবু বাড়িতে চলে আসলো। তারপর সকাল হলো। আর গ্রামের সকলকে সেই রাতের ঘটনাটা জানিয়ে দিলো।
এরপর গ্রামবাশিরা সিদ্ধান্ত নিল সেই খুনি লোকটিকে অর্থাৎ স্কুলের ভয় দেখানো গলা কাটা লোকটিকে উচিৎ শিক্ষা দেবে। তাই রাত হলেই আবার যখন স্কুল থেকে কান্নার আওয়াজ আসতে লাগলো। গ্রামের লোকজনেরা সকলে মিলে স্কুলের ভিতরে আসলো। আর সেই গলাকাটা লোকটিকে ধরে ফেললো।
এরপর তাকে মারতেই থাকলো। অবশেষে লোকটি মারা গেলো।
গ্রামের প্রধান সুমন বাবু সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “ সকলে একসাথে থাকলে কেউ কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর তোমরা যদি এইভাবেই গ্রাম ছেড়ে যেতে তাহলে সেই খুনি লোকটি আরও লোকজনদের মেরে ফেলতো। আজ যেমন আমরা সকলে একসাথে রাতে স্কুলের ভিতর এসে সব ঘটনাটুকু দেখলাম এবং আসলে এই কান্নার আওয়াজ একটি সাজানো নাটক বুঝতে পেলাম আর ঘটনাটির অবনতি করলাম। নিজেদের ভুলও বুঝতে পেলাম যে ভুত বলতে কিছুই নেই। তাই তোমাদের বলছি তোমরা সকলে একসাথে মিলেমিশে কাজ করবে আর গুজবে কান দিবে না”।
সকল গ্রামের লোকজনেরা তাদের ভুল বুঝতে পেলো। আর তারা সিদ্ধান্ত নিল আর কোন ভুতে বিশ্বাস করবে না।