আসসালামুয়ালাইকুম বন্ধুরা। সবাইকে পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা। কিছু পরিস্থিতি আমাদের কিছু বিষয়ে ভাবতে প্রায়শই বাধ্য করে।বেশ কিছুদিন ধরে আমার মাথায় একটা বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছে।সে বিষয়টা নিয়েই আজ কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
ছোটবেলায় যখন রাস্তা পার হতাম বাবা মা শক্ত করে হাতটা ধরে রাখতো।যাতে নিরাপদ ভাবে রাস্তা পার হতে পারি।কিন্তু যখন ধিরে ধিরে বড় হতে লাগলাম খেয়াল করলাম বাবা আর হাত ধরে রাস্তা পার করছেন না। বিষয় টা নিয়ে বেশ ভাবলাম মন খারাপও করলাম। কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। যখন বয়স আরো বাড়তে থাকলো খেয়াল করলাম বাবা বিদ্যুৎ বিল দিতে আমাকে পাঠাচ্ছেন, ব্যাংক থেকে টাকা উঠাতে বা জমা দিতে আমাকে পাঠাচ্ছেন এমনকি যাতায়াত ও একা একা করতে বলছেন।
আমার একজন বান্ধুবি আছে।যে কিনা একা একা কখনোই কোথাও যেতে পারেনা। সবসময় তো মা বাবা অথবা অন্যান্য অভিভাবকদের সময় ও হয়ে ওঠেনা। তাই কোথাও যেতে চাইলে যদি যেয়ে দিয়ে আসার কেউ না থাকে সে কোথাও যেতে পারেনা। বাসে চড়ার অভ্যাস নেই, রাস্তাঘাট চেনা নেই। হঠাৎই উপলব্ধি করলাম একজন মেয়ে হয়েও আমি তো এগুলোর সবই পারি এবং বেশ ভালোভাবেই পারি। খুব আনন্দ বোধ হলো মনে মনে। আমি কারো উপর নির্ভরশীল নই। বাবা কেন তখন কঠোর হয়েছিলেন সেটাও বুঝতে পারলাম।
ধরুন আপনি স্বনির্ভরশীল নন! হয়তো আপনার মা বাবা ,বন্ধু-বান্ধব অথবা আপনার ভালোবাসার মানুষটার উপরই আপনার যত নির্ভরশীলতা।কিন্তু মা বাবা কি পারবেন আজীবন আপনার পাশে থাকতে? চাইলেও কি পারবেন? না!আপনার মা বাবা একসময় বৃদ্ধ হবেন। তখন তাদের দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে।যেভাবে তারা আপনাকে ভালো রেখেছেন তাদেরও ভালো রাখতে হবে।তার জন্য অবশ্যই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।যদি বলি বন্ধুদের কথা তারাও একসময় ক্যারিয়ার নিয়ে নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে যাবে। আর আপনার ভালোবাসার মানুষটা যদি জীবিকার তাগিদে ভিন্ন দেশে অবস্থান করেন তাহলেও কিন্তু আপনি একা। অথচ আপনি অন্যের উপর নির্ভরশীল তাহলে কি করবেন? কি করে পথ চলবেন? এগুলো কিন্তু বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতেই বলা।
জীবন চলার পথে একজন সংগী কে না পেতে চায়? কিন্তু সবসময়ই কেউ না কেউ আপনার পাশে থাকবে না। আপনাকে আগলে রাখবেনা। পথ চিনতে সাহায্য করবেনা।পথ চলতে চলতে হঠাৎ হচট খেয়ে পড়ে গেলে আপনাকে টেনে তুলবেনা। আপনার জীবনের লক্ষ্য গুলো আপনাকেই পূরণ করতে হবে। নিজেকে আগলে রাখতে সব থেকে বেশি পারদর্শী নিজেকেই হতে হবে। পড়ে গেলে নিজেই উঠে দাঁড়াতে হবে। ব্যার্থতার অশ্রু বিষর্জন শেষে চোখ মুছে নতুন করে স্বপ্ন বুনতে হবে। অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে কেউ কতোদিনই বা বাঁচে! নিজের উপর নির্ভরশীল হোন গর্বের সাথে বাঁচুন।