- আসসালামু আলাইকুম।আশা করি ভাল আছেন সকলে।আজকে আপনাদের সামনে এমন একটা সেতুর কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি যেটা কিছু বছর আগে ও বাংলার মানুষের কাছে স্বপ্ন ছিল।হয়ত খুব কম লোকের ই ধৈর্য হবে লেখাটি সম্পূর্ন পড়তে কিন্ত অনেক কিছু জানা হবে।হ্যা আজকে আপনাদের পদ্মা সেতুর ইন্জিনিয়ারিং কিভাবে করা হয়েছে তার সামান্য একটা বর্ননা শুনাব যাতে আপনারা মোটামুটি এই সেতু বাস্তবায়ন করা কতটা কষ্ট সাধ্য তার একটু হলেও উপলব্ধি করতে পারেন এবং এর স্ট্রাকচার কিভাবে দাড় করানো হয়েছে সেটা বুঝতে পারবেন।
তাহলে চলুন শুরু করিঃ
• বাংলাদেশের খুব কম মানুষ আছে যারা এই সেতু নিজের চোখে সামনাসামনি দেখে নি।আমরা যখন এই নদী দেখি তখন আমরা বাহ্যিক ভাবে এর প্রস্থ দেখি ।হ্যা প্রস্থ ই দেখি কারন, গভীরতা বা স্রোতের বিশালতা আমাদের চোখে ধরা পরবে না।
• যাইহোক,নদীর গভীরতা কত জানেন?পানির প্রায় ৪০ মিটার নিচে।আর ১ মিটার=১ফিট (৩ইঞ্চি)তো সে হিসেবে ৪০ মিটার মানে প্রায় (১৩১ ফিট)। সাধারনত এক তলা ভবনের উচ্চতা ১০ ফিট হয়।এখন যদি এই উচ্চতা কে একটা উচু বিল্ডিং এর সাথে তুলনা করা হয় তাহলে সেটা হবে ১৩ তলা বিল্ডিং এর সমান উচু।
• এখন এর কলামগুলো (সিভিলের ভাষায় পিয়ার) কে ১৩ তলা ভবনের সমান উচু হতে হবে।কিন্ত যদি এই পিলার মাটিতে না গাথা থাকে তাহলে স্রোতের বেগ এই ১৩ তলা লম্বা কলাম গুলো ভাসিয়ে নিয়ে যাবে অবশ্যই।
• তো কলাম মাটিতে গাথা প্রয়োজন।এখন কতটুকুন গাথবেন?কলাম দাড় করানোর জন্য আদর্শ স্তরের নাম বেডরক যার গভীরতা প্রায় নদীর তলদেশের উপরের স্তর থেকে ৮ কিঃমিঃ।যেটা প্রায় এভারেস্ট এর উচ্চতার সমান।তো সেখানে যাওয়া এক প্রকারের স্বপ্ন।এখানেই আমাদের কপাল খারাপ।যেখানে অন্যান্য দেশের বেডরক নদীর তলদেশের প্রায় কাছাকাছি থাকে যার ফলে সেসব দেশের কন্সট্রাকশন নির্মাণ অনেক সহজ সাশ্রয়ী সেখানে আমাদের টা নির্মাণ বেডরক ছাড়া নির্মাণ কত দুরুহ ব্যাপার তা হয়ত আপনারা একটু হলেও এটা থেকে উপলব্ধি করতে পারবেন - তাহলে এবার আসি কতটুকু পাইল করতে হবে?অনেক সময় নদীর তলদেশের মাটি বালুর মত ধুয়ে যায় এটাকে (scour)বলে।এই ধুয়ে যাওয়ার পরিমান কখনো কখনো এত বেশি হয় পদ্মায় যেটা পৃথীবির অন্য কোন নদীতে সচারচর দেখা যায় না। এর পরিমাণ প্রায় (৬১-৬৫)মিটার।পদ্মা নদীর (scour) হওয়ার রেকর্ড সর্বোচ্চ ৬৫ মিটার মানে ২১৩ ফিট যেটা প্রায় ২১ তলা বিল্ডিং এর সমান।এ অবস্থায় পানির নিচে মাটি পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে আগের (১৩+২১=৩৪)তলা বিল্ডিংয়ের সমান পানির নিচে।নদীর তলদেশের সেডিমেন্ট(মাটির কণা) ট্রান্সপোর্টেশনের রেকর্ড পৃথীবির ভিতর এই পদ্মার ই সর্বোচ্চ। তাইতো এত সমস্যা।
- তাহলে ব্রিজের জন্য আপনাকে যে কলাম দিতে হবে তা (৪০+৬৫=১০৫)মিটারের ও বেশি লম্বা হতে হবে।মানে ৩৪ তলা বিল্ডিং এর থেকেও অনেক বড় হতে হবে সে কলাম কে।
- এখন মাটির সরে যাওয়ার হার কোথাও বেশি আবার কোথাও কম হয়।সেটা আপনি জানেন যে না ঠিক কোথায় কম আবার কোথায় বেশি হবে?আর তার কারনে আপনার সাধের ব্রীজের কলাম গুলো ভেসে যাবে নদীর স্রোতে।
- এজন্য একটা অ্যভারেজ হিসেব করে পাইলকে ১২০ মিটার লম্বা করা হয়েছে যেটা প্রায় ৪০ তলা বিল্ডিংএর সমান উচু হবে।এটাতো গেল পাইলের গভীরতা এখন এটা কতটুকুন মোটা বা চিকন হবে আয়তকার নাকি গোলাকার করা হবে তার ও তো চিন্তা করতে হবে।তো পাইলগুলোর সাইজ হবে গোল যার ব্যাস প্রায় ৩ মিটার যেটা প্রায় আপনার একটা রুমের ফ্লোর থেকে ছাদ পর্যন্ত উচু।এগুলো স্টীল শীটের তৈরী যার থিকনেস পুরুত্ব প্রায় ৬০/৭০ মিলিমিটার প্রায় আরো বেশি বা কম ও হতে পারে।এক মিটার লম্বা একটা শীটের সাথে আর এক মিটার লম্বা একটি শীট কে জ্যামিতিক হারে অ্যাটাচ করা হবে।এরপর ২ মিটার এর সাথে আর ২মিটার জোড়া দিয়ে ৪ মিটার এভাবে ২০ তলা বিল্ডিংএর সমান উচু একটার সাথে আর একটা কে জোড়া দিয়ে এক একটা পাইল তৈরী করা হয়েছে।তাহলে এখন প্রশ্ন হল এই পাইল তুলবে কে কোন এলিয়েন না মানুষ।আরে না কে যেন বলল একটা স্পেশাল হ্যামার নাকি জার্মান তৈরী করে দিয়েছে আমাদের এই ব্রীজের জন্য।স্পেশাল হ্যামার আর স্পেশাল ক্রেন দিয়ে ই মাওয়া-জাজিরাতে তৈরী হচ্ছে স্পেশাল সেতু।এলাহি ব্যাপার।কি বলেন?আজ এ পর্যন্ত পরের পর্ব নিয়ে আসছি খুব শীঘ্র। ইনশাআল্লাহ্।ভালো লাগলে অন্যকে শেয়ার করে জানিয়ে দিন।