আমাদের সমাজে বেকার সমস্যা দিন দিন বেরেই জাচ্ছে । সমাজে অনেক যুবক ভাইরা কাজের জন্য হা হুতাস হয়ে এদিক সেদিক দৌরে বেড়াচ্ছেন। বিশেষ করে গ্রাম্য অঞ্চলের কথা না বললেই নয়। আর এর কারণ ও অনেক স্পস্ট। জনবহুল দেশ হওয়ার কারনে আমাদেরকে সবকিছুতেই প্রতিযোগিতা করতে হয়। আর এই সমস্যা থেকে পরিত্রানের জন্য আমাদের বিশ্বের উন্নত দেশ গুলোর দিকে তাকাতে হবে। লক্ষ করলে দেখা যায় যে এসব দেশের অধিকাংশ মানুষ উদ্দেক্তা এবং কোনো না কোনো সফল ব্যবসায়ী। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কি করতে পারেন ?? হ্যা..কোয়েল পালন আপনার ভাগ্যের দুয়ার খুলে দিতে পারে । চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
কোয়েল পরিচিতি:-
কোয়েল অত্যন্ত শান্ত সভাবের একটি পাখি । দক্ষিণ এসিয়ার দেশ গুলোতে এদের বেশি দেখা যায়।এদের রয়েছে কয়েকটি প্রযাতী এর মধ্যে জাপানিজ বড় জাতের কোয়েল মূলত বাণিজ্যিকভাবে লালন পালন করা হয়। এরা ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ অর্থাৎ সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে ডিম পাড়া এবং খাওয়ার উপযোগী হয়। বাণিজ্যিকভাবে যে কোয়েল লালন পালন করা হয় এরা সাধারণত ডিমে তা দেয় না তবে ইনকিউবেটর মেশিনের সাহায্যে এদের অনেক ডিম একসাথে ফোটানো যায়
আয় করুন মাসে লক্ষ টাকা পর্যন্ত:
বর্তমানে কোয়েলের বানিজ্যিক খামার করে অনেকে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছে !! হে ..বন্ধুরা অবাক হওয়ার কিছুই নাই এটি সম্ভব। আর এর জন্য প্রয়োজন পরিশ্রম এবং প্রবল ইচ্ছা শক্তি। কথায় আছে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। শুরুতেই আপনি লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন না।তবে আপনি যদি ন্যূনতম ৫০০ কোয়েল পাখি দিয়ে শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে এর পরিসর বাড়াতে থাকেন তবে আপনি তা পারবেন । কোয়েল এবং তার ডিম বিক্রির পাশাপাশি ইনকিউবেটর মেশিনের সাহায্যে বাচ্চা ফুটিয়ে সেগুলো পাইকারি দামে বিক্রি করতে পারবেন। কিভিবে শুরু করবেন এবং কিভাবে কত টাকা খরচ করতে হবে তার সমস্ত বর্ননা আমি দিব। তার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক কোয়েল পালনের সুবিধা গুলি।
কোয়েল পালনের সুবিধা:
- ছোট আকৃতির পাখি হওয়ায় খুব অল্প জায়গায় এদের বেশি পরিমানে পলান করা যায়। উদাহরণ স্বরূপ একটি দেশি মুরগির বদলে আপনি ৫-৬ টি কোয়েল পাখি পালন করতে পারবেন।
- কোয়েলের রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা অনেক বেশি হওয়ার কারণে এরা সহজে রোগব্যধির দ্বারা আক্রান্ত হয় না এবং এদের মৃত্যুর হারও অনেক কম।
- বাজারে অনেক চাহিদা থাকার কারনে এদের ডিম বিপননে কোনো অসুবিধা হয় না এবং পাশাপাশি নিজের পারিবারিক আমিষের চাহিদাও খুব সহজে মিটানো জায়।
- এরা একবার ডিম পাড়া শুরু করলে একটানা প্রচুর ডিম পাড়ে এবং এদের মাংস ও ডিম অনেক পুষ্টিকর ও সুস্বাদু।
- কোয়েল ডিমে তা দেয় না তবে ইনকিউবেটর এর সাহায্যে অনেক ডিম একসাথে ফোটানো সম্ভব হয় ।
কিভাবে শুরু করবেন ?
# আপনাদের চিন্তা করতে হবে কোয়েলের থাকার ঘর নিয়ে আপনি চাইলে খাঁচার মধ্যে অথবা, কোয়েলের জন্য আলাদা ঘড় বানিয়ে পালন করতে পারেন। যদিও দুটোর ক্ষেত্রে খরচ ভিন্ন ভিন্ন তবে আপনার যেটা সুবিধা মনে হয় সেটাই করুন। যদি শহরে থাকেন এবং আপনার বাসায় যদি সুন্দর একটি ছাদ থাকে তাহলে আপনি খাঁচায় পালন করতে পারেন।
# এরপর আপনাকে কোয়েল যোগার করতে হবে । কোন বয়সের কোয়েল দিয়ে শুরু করবেন সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার উপর। তবে যারা নতুন শুরু করতে চান বা করবেন তাদের ক্ষেত্রে 30 থেকে 35 দিন বয়সের বাচ্চা কেনাই শ্রেয়। এর সাথে সাথে আপনাদের কোয়েল পালনের যাবতীয় সরঞ্জাম যেমন খাবারের ট্রে লাইট প্রয়োজনীয় ঔষধ ডিমের ট্রে কিনে নিতে হব।
কোথা থেকে কিনবে?
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খামারি ভাইয়েরা 1 থেকে 40 দিন বয়সের বাচ্চা কোয়েল বিক্রি করে থাকেন। এনারা বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট এর মধ্যমে সারাদেশে বাচ্চা কোয়েল সাপলই দিয়ে থাকে। অবশ্যই কিনার আগে ভালো মন্দ জাচাই করে নেবেন এটা স সম্পূর্ণ আপনার দায়িত্ব যার সাথে কথা বলে সুবিধা মনে হবে আপনারা তার কাছ থেকে নিবেন।
# #কোয়েল কিনার সময় অবশ্যই আপনাকে কিছু সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে যদি পূর্বঅভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে অভিজ্ঞ কাউকে সাথে নিয়ে নিজের খামারের জন্য কোয়েল কিনবেন অন্যথায় প্রতারিত হতে পারেন । সবসময় মনে রাখবেন যে ছেলে কোয়েলের থেকে মেয়ে কোয়েলের দাম তুলনামূলক বেশি হয় যার কারণে বাজারে এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ী আছে যারা কিনা অনভিজ্ঞদের মেয়ে বলে ছেলে কোয়েল পাখি ধরিয়ে দেয়। তাই কেনার আগে এই বিষয়গুলো বিশেষ আমলে রাখবেন।
নিচে 500 কোয়েল পালনের যাবতীয় খরচ এবং লাভ লসের হিসাব দেখানো হলো:-
- 👉 কাঠ, টিন এবং নেট দিয়ে ৫০০ কেপাসিটির একটি কোয়েল ঘর বানাতে আপনার সর্বোচ্চ ৫০০০ টাকা খরচ হবে।
- 👉 32 টাকা দরে ৩০ দিন বয়সী ৫০০ কোয়েল পাখির দাম মোট পরবে ১৬০০০ টাকা ।
- 👉 এক মাসে খাবার লাগবে আনুমানিক ২৫০ কেজি যার প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে মোট ২৫০×৪০ = ১০০০০ টাকা।
- 👉 প্রথম মাসে খাবার ট্রে , লাইট , ডিম ট্রে যাবতীয় ঔষধ কিনতে লাগবে আনুমানিক ১০০০ টাকা।
- সুতরাং:- শুরুতে ৫০০ কোয়েল পালন করতে আপনার মোট গুনতে হবে আনুমানিক, ৫০০০+১৬০০০+১০০০০+১০০০= ৩২০০০ টাকা
- উপরের যে হিসাব দেওয়া হয়েছে এটা আনুমানিক। এর দাম দর প্রতিনিয়ত উঠানামা করেতে পারে।
এবার আসি লভের কথায়
১ মাস বয়সী পাখি দিয়ে শুরু করলে প্রতিটি পাখি ডিমে আসতে সর্বোচ্চ আরও এক মাস সময় লাগবে । অর্থাৎ প্রথম মাসে আপনার কোন লাভ আসবে না ,কিন্তু কিছু পাখি ইতিমধ্যেই ডিমে চলে আসবে। পরের মাস থেকে আপনি পারতিদিন নূন্যতম ৪৫০ টি ডিম পাবেন (আরও বেশিও পেতে পারেন )
👉 প্রতিদিন ৪৫০ টি ডিম পারলে মাসে ১৩৫০০ ডিম পাবেন ২টাকা দরে যার পাইকারি বাজার মূল্য ২৭ হাজার টাকা😲😲
প্রথম মাসে কোন ডিম পাচ্হছেন না কিন্তু পারের দুই মাস পাবেন । সুতরাং , বলতে পারেন যে প্রথম ৩মাসে ডিম বাবদ পাবেন ২৭×২=৫৪ হাজার টাকা
👉প্রথম মাসে খরচ ৩২ হাজার টাকা এবং পরবর্তী ২ মাসে খাবার বাবদ খরচ ১০×১০= ২০ হাজার টাকা।
মোট ৩ মাসে খরচ ৫২ হাজার টাকা।
তাহলে আপনি তৃতীয় মাসে আয় করবেন:- ৫৪-৫২=২ হাজার টাকা।
👉তাহলে বন্ধুরা বুঝতেই পারছেন যে প্রথম ৩ মাসেই আপনারা আপনাদের খরচ উঠিয়ে নিতে পারছেন।আর এর পর থেকেই আপনারা খাবার খরচ লাভের অংশ থেকে কেটে নিয়ে মাসে আয় করতে পারবেন 😲😲১৮-২০ হাজার টাকা।
চেষ্টা থাকলে সব সম্ভব।সুধু আপনার একটু ধৈর্য ধারনকরতে হবে আর আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। বন্ধুরা আশা করি লেখাটি আপনাদের কাজে দিবে।আমার লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমার সথে থাকবেন এবং কোনো জানার থাকলে কমেন্ট করবেন।
বিদ্র:-আর্টিকেল টি সম্পূর্ণ নিজ অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান থেকে লেখা । তাই কোরো সাথে দ্বিমত থাকতেই পারে । ভুল হলে সরল ভাবে নিবেন। মো: আল- আমিন