কলেজ জীবন শেষ করে এসেছি আজ প্রায় দেড় বছর।কিন্তু তবুও স্মৃতিরা তাড়িয়ে বেড়ায়।সেইসব দিনের কথা মনে পড়ে যায়।কত দুষ্টামি,কত বন্ধুদের সাথে মান অভিমান,কত কাজ,পড়াশোনায় ফাঁকি সবকিছু।কত সুন্দর ছিলো দিনগুলো।না ছিল ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা, না ছিল অনেককিছুর মোহ।আনন্দে আনন্দে কাটিয়ে দিয়েছিলাম আমার ক্যাডেট কলেজের ছয়টি বছর।হ্যা,আমার কলেজ জয়পুরহাট গালর্স ক্যাডেট কলেজ।
অনেকেই হয়তো জানেন না,এটি একটি আবাসিক প্রতিষ্ঠান।একজন ছাত্র ক্লাস সেভেনে তুমুল প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এখানে ভর্তি হয়।এবং ক্লাস সেভেন থেকে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার তথা টুয়েলভ্ পর্যন্ত এখানে পড়ালেখা করে।যেহেতু ছয় বছর এখানে থাকা হয়,সহপাঠীদের সাথে গড়ে ওঠে এক অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক।যে সম্পর্ক কলেজ থেকে বের হওয়ার পরও ছিন্ন হয় না।আর এই কলেজের সাথে স্মৃতি বন্ধুদের সাথে স্মৃতি ই মানুষকে তাড়িয়ে বেড়ায় আজীবন।
যেহেতু ক্যাডেট কলেজে অনেকে একসাথে থাকে তাই এখানে রয়েছে কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলা।তবুও এই ঘেরা জায়গার মধ্যেই আমাদের শত আবদার আর ফিরে যাওয়ার তাগিদ।
এই প্রসাশনিক ভবনের সাথে প্রতিটি ক্যাডেটের অনেক স্মৃতি।এখানে সব কিছুর পরিকল্পনা হয়।
এখানে রয়েছে হাজারো স্মৃতি।প্রতিটি ক্লাস এখানেই হয়।ক্লাস সেভেনে নিচতলায় ক্লাস করতে করতে ক্লাস টুয়েলভ্ এ যখন তিনতলায় যাওয়া হয়,তখন মনে বাজতে থাকে বিদায়ের ঘন্টা।এখানকার কথা মনে হলে,মনে পড়ে বন্ধুরা মিলে স্যার না থাকা অবস্থায় গান করা,অনেকে আবার অনেক কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে এখানেই দিত ঘুম।ওয়াসরুম ছিল সকল দুই নম্বরি কাজের সদরদপ্তর।দুইতলার বারান্দা থেকে বৃষ্টি দেখা,ঝড়ের সময় আমগাছের তলা থেকে টিচারদের ফাঁকি দিয়ে আম কুড়োনো,সেসব আবার মাখিয়ে খাওয়া,এ এক অনন্য অসাধারণ স্মৃতির ভান্ডার।বন্ধুদের সাথে যত মান অভিমান সব ছিল এখানে।বন্ধুদের বার্থডে তে উইশ করা এমনভাবে যেন সবাই শুনতে পারে,সত্যিই সুন্দর ছিল জীবনটা।
এই মাঠেই হত সকালের শরীরচর্চা।দুই কিলোমিটার দৌঁড়।শীতকালে অ্যাথলেটিক্স এ এই মাঠ পরিণত হত ট্রাক এ।সবাই ব্যস্ত হয়ে যেত অ্যাথলেটিক্স এর সময়।ডিসেম্বর এর এসময় থাকতো না কোন ক্লাস,থাকতো না কোন পড়ালেখা,সারাদিন এই মাঠই ছিল ঘর।সারাদিন গান বাজত এই মাঠে অ্যাথলেটিক্স এর সময়।তিন হাউজের মধ্যে সকল খেলার লড়াই এ মাঠেই হতো।সারাবছর ই সকালের পিটি আর বিকালের গেমস্ এই মাঠেই হতো।তাই এই মাঠের সাথেই জড়িয়ে আছে সবকিছু।
হ্যা এমন করেই পিটি আর প্যারেড এ ব্যস্ত সময় পার করতে হত সবাইকে।অথচ সেইসব দিনই এখন মনে হয় স্বপ্নের মতো।কত পানিশমেন্টের সাক্ষী এই গ্রাউন্ড।
অসাধারণ এই জায়গায় বোধহয় সবচেয়ে বেশি স্মৃতি রয়েছে আমার।ডাইনিং এ তিনশো জন একসাথে খাওয়া এবং সবার জন্য ঠিক করে রাখা জায়গায় বসা,খাওয়ার সময় ও অসংখ্য নিয়ম মেনে চলা,এসব ই স্মৃতির জায়গা।খাওয়ার সময় চমৎকার সব গল্প করা হতো টেবিলের সবার সাথে,কাঁটাচামচ দিয়ে খাওয়া এসবই ত শিখেছি এখান থেকে।
পুরো রাস্তায় করা হয়েছিল আল্পনা।সুন্দর এ রাস্তা দিয়েই একাডেমিক ভবনে ক্লাস করতে যেতাম সবাই সারি বেধে।এত সুন্দর সাজানো রাস্তাকেও অনুভব করতে পারি এখন।সব অনুষ্ঠানে কলেজ সেজে উঠতো অসম্ভব সুন্দর আলোক সজ্জায়।
এই রাস্তা হচ্ছে হাউজে যাওয়ার পথ।এই হাউজে ই বছর শেষে হত পার্টি।এখানেই একই রুমে রুমমেটদের নিয়ে বসবাস ছিল,মজা ছিল,আনন্দ ছিল,অভিমান ছিল।
আর পড়া না বুঝলে অনেক অনেক বন্ধুরা ছিল।আমার রুমমেট রা ঐতিহ্য,আনিকা,শ্রেয়া,পারমিতা,অদিতি,জাকিয়া রাইয়া সবাইকে অসম্ভব মিস করি।রাইয়ার সেই গান,সবাই মিলে রাতে ভূতের গল্প বলা,ঝড়ের রাতে কারেন্ট চলে গেলে ভয় পেয়ে সারারাত জেগে থাকা,সবই মনে থাকবে।মুড়ি পার্টি গুলোও মনে পড়বে অনেক।
স্যাটেলাইটে আমাদের কলেজ।সত্যিই অসম্ভব মিস করি এই জায়গাকে।আর মিস করি হারিয়ে যাওয়া বন্ধু গুলোকে।তাদের সাথে যদি আরও একটা দিন কাটানো যেত,সত্যি ই কত ভালো হত।
স্মৃতির পাতায় সবসময় ই থেকে যাবে এই জায়গাটি।